Alapon

শহীদ তিতুমীর একটি ইতিহাস ও একটি নাম




শহীদ তিতুমীর একটি ইতিহাস ও একটি নাম যা মানুষকে আজও অনুপ্রেরণা দেয়। পাক-ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের কাছে অতিপ্রিয় নাম শহীদ তিতুমীর। স্বাধীনচেতা পালোয়ান তিতুমীরকে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী অসম্ভব ভয় পেত। ব্রিটিশের পালিত স্থানীয় জমিদাররা তাঁর নাম শুনে হতো আতঙ্কিত। ব্রিটিশ বেনিয়ার অত্যাচার থেকে এ দেশের অসহায় মানুষকে মুক্তির জন্য তিনি আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। সাহসী তিতুমীর ইসলামের ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার সাধন এবং শিরক-বিদয়াত থেকে মুসলমানদের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। তিতুমীরের এ লড়াই পাক-ভারত মুসলিম ইতিহাসের এক অনন্য বীরত্বগাঁথা এবং এক গৌরবময় অধ্যায়। মুসলিম মানসপটে শিহরণসঞ্চারী এক স্বাপ্নিক পুরুষ ছিলেন তিতুমীর। তাঁর অসীম সাহস ও ক্ষিপ্রতা আমাদের হৃদয়াবেগ প্রাণিত করে। নারকেলবাড়িয়ায় তাঁর ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লা ইতিহাসের পাতায় এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। তিতুমীর, যাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী (১৭৮২-১৮৩১)। তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। তিনি জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও তাঁর বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।
তিতুমীর নামেই তাঁকে সবাই চিনলেও এটি ছিল তাঁর ডাক নাম। তিতুমীরের প্রকৃত নাম সাইয়িদ মীর নিসার আলী। পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর (মতান্তরে হায়দারপুর) গ্রামে ২৭ শে জানুয়ারী ১৭৮২ ইংরেজী, ১১৮৮ বঙ্গাব্দের ১৪ মাঘ তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা ছিলেন সাইয়িদ মীর হাসান আলী এবং মাতা আবিদা রোকাইয়া খাতুন। তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদের হযরত আলীর (রাঃ) বংশধর বলে দাবি করতেন। তাঁর এক পূর্বপুরুষ সাইয়িদ শাহাদাত আলী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন। শাহাদাত আলীর পুত্র সাইয়িদ আবদুল্লাহ দিল্লির সুলতান কর্তৃক জাফরপুরের প্রধান কাজী নিযুক্ত হন এবং তাঁকে ‘মীর ইনসাফ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। শাহাদাত আলীর বংশধরগণ ‘মীর’ ও ‘সাইয়িদ’ উভয় পদবীই ব্যবহার করতেন।
শিশুকালে তিতুমীরের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল। রোগ সারানোর জন্য তাকে দেওয়া হয়েছিল ভীষণ তেতো ওষুধ। এমন তেতো ওষুধ শিশু বা বৃদ্ধ কেউই মুখে নেবে না। অথচ শিশু তিতুমীর বেশ খুশিতেই দশ বার দিন এই তেতো ওষুধ খেয়েছিল। তেতো খেতে তার আনন্দ। তাই বাড়ির সবাই অবাক হয়ে তার ডাক নাম রেখেছিল তেতো। তেতো থেকে তিতু। তিতুর সঙ্গে মীর লাগিয়ে তিতুমীর নাম রাখা হয়েছিল। সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী শহীদ (১৭৮৬-১৮৩১) যখন মুহাম্মদিয়া আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে ব্রিটিশ বেনিয়া সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের দোসর শিখদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িত ঠিক তখনই বাংলাদেশে সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীর নামক একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সিপাহসালারের আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশের মাটি থেকে জুলুম শোষণ ও নির্যাতনের মূলোৎপাটনের সংগ্রামে যে ক’জন দেশপ্রেমিক অস্ত্র ধারণ করে এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অমর হয়ে রয়েছেন, তিতুমীর তাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর প্রদর্শিত বীরত্বপূর্ণ কর্মকান্ড-স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে আজও এদেশবাসীকে যুগপৎ অনুপ্রাণিত করে। স্বৈরাচার, আধিপত্যবাদ ও নির্যাতনমূলক শাসন নির্মূল করে এ দেশে আদর্শভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার জীবনের প্রধান স্বপ্ন।

বাংলা অঞ্চলের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে মাটি আর মানুষের খুব কাছাকাছি থেকে যে ক’টি আন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হাজী শরীয়তুল্লাহ্র ফরায়েজী আন্দোলন। ইংরেজ শাসনামলে জমিদার ও নীলকরদের শোষণ-নির্যাতনে সাধারণ প্রজাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে হাজী শরীয়তুল্লাহ কৃষক-প্রজাদেরকে জালেম জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচার শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ফরায়েজী সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে মানুষের সামাজিক জীবন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা এবং সবাইকে আত্মপ্রতিষ্ঠার বাণী শিক্ষা দান, এই সংস্কার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল। হাজী শরিয়তুল্লাহ্র ফরায়েজী আন্দোলনের মতো ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে মীর নেসার আলী তিতুমীরও একটি প্রজা আন্দোলন গঠন করেন। ব্যবধান শুধু এতটুকু যে, হাজী শরিয়তুল্লাহ আরবের সংস্কার আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন আর তিতুমীর ছিলেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভীর আদর্শে অনুপ্রাণিত।
সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীর বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগণা জেলার বারাসাতের অন্তর্গত চাঁদপুর গ্রামে ১৭৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মীর হাসান আলী আর মা আবেদা রোকাইয়া খাতুন। তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। বাল্যকালে তিনি পড়ালেখা করেন সে সময়ের শ্রেষ্ঠ কয়েকজন পন্ডিতের কাছে। আরবী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে তিনি পান্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে কোরআনের হাফেজ হন। পড়ালেখা শেষ করে তিনি মক্কা গমন করেন। সেখানে তাঁর সাথে দেখা হয় উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংস্কারক সাইয়্যেদ আহমদ বেরলভির সাথে। তিনি ১৮২১ সালে সাইয়্যেদ বেরলভির সাথে মক্কা, মদীনা, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, মিশর, আফগানিস্তান সফর করেন এবং সমকালীন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত ও মতবিনিময়ের সুযোগ পান। এই ভ্রমণেই তিনি মুসলিম বিশ্বের সমকালীন সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন।

ইসলামী আন্দোলনের কর্মপ্রেরণায় তিতুমীর চিন্তাচঞ্চল হয়ে ওঠেন। ইসলামের প্রকৃত রূপায়ণের আশা নিয়ে তিতুমীর মক্কা-মদিনা থেকে দেশে ফিরে এলেন। ফিরে এলেন তিতুমীর আঁধারঘেরা লাঞ্ছিত বাংলার বুকে। দীনের যথার্থ শিক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরা, তাদেরকে অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিতুমীর। তিতুমীরের নেতৃত্বে বাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিতুমীর ইসলামী আন্দোলনের কাজে যতই তৎপর হতে লাগলেন ততই বাধা আসা শুরু হলো। স্বভাবতই জমিদার মহাজন ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাকে কথা বলতে হলো। সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা মোকাবিলায় তিনি এসব জমিদার মহাজন ও নীলকর নামধারী শোষক ও প্রতারকদের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনিই ১৮২৫ সালে সর্বপ্রথম হিন্দু জমিদার ও ইংরেজ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৮৩১ সালে তিতুমীর নারিকেল বাড়িয়ায় একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। অসংখ্য বাঁশের সমাহার ছিল বাঁশবেড়িয়া-নারিকেলবাড়িয়ায়। তিতুমীরের নিজের পরিকল্পনায় তৈরি এক আশ্চর্য বাঁশের কেল্লা। সেখানে ছিল বৃহৎ বিস্তীর্ণ এক আম্রকানন। পলাশীর সে আম্রকাননের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। বলা যায় পলাশীর আম্রকাননের যুদ্ধক্ষেত্রের মতোই হৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের আরেক সংগ্রামের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ তিতুমীরের এই দুর্ভেদ্য বাঁশের কেল্লা।

তিতুমীরের আন্দোলন ছিল নিয়মতান্ত্রিক। ব্যাপক নির্যাতিত জনগণের পক্ষ থেকে তিনি স্থানীয় জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিকারের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনের কাছে তথ্য প্রমাণসহ লিখিত আবেদন জানান। এতে হিন্দু জমিদাররা তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষ্ণদেব রায় (পুর্ণিয়া), কালী প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, রামনারায়ণ (তারাগুনিয়া), গৌরী প্রসাদ চৌধুরী (নাগরপুর) প্রমুখ জমিদার সদলবলে তিতুমীরকে আক্রমণ করেন। অপূর্ব বীরত্ব ও দক্ষতার সাথে তিতুমীর এই সম্মিলিত আক্রমণকে নস্যাৎ করে দেন। এভাবে জমিদাররা তাঁর হাতে পরাজিত হলে তিনি চব্বিশপরগণা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলার কিছু অংশব্যাপী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।

পরাজিত হিন্দু জমিদাররা ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের বুঝালেন তিতুমীর দেশদ্রোহী। বাংলা থেকে ইংরেজ ও হিন্দুদেরকে তাড়িয়ে তিতুমীর মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইংরেজ বেনিয়ারা তিতুমীরকে দমন করার উদ্যোগ আয়োজন করতে থাকে। ফলে সংঘাত শুরু হয়। তিতুমীর ইংরেজদের এদেশ থেকে বিতাড়নের জন্য তার সৈন্যদেরকে সংঘবদ্ধ করেন। স্বাধীনতার মন্ত্রে তাদের উজ্জীবিত করেন। তিনি ইংরেজদের বিতাড়িত করে বাংলার হৃত স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য দৃঢ়সঙ্কল্প গ্রহণ করেন। বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ যখন ইংরেজদের অধীন তখন একদিকে চলত ইংরেজদের অত্যাচার আর অন্যদিকে ছিল জমিদারদের জুলুম। এ সময় তিতুমীরের জন্ম হয়েছিল। শান্ত ও ধীর স্বভাবের তিতুমীর ভাবতেন-কীভাবে এসব অত্যাচার হতে মুক্তি পাওয়া যাবে? সে সময় গ্রামে ইংরেজ তাড়ানোর জন্য গায়ে শক্তি সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে ডনকুস্তি ও শরীরচর্চার ব্যায়াম হতো। মুষ্টিযুদ্ধ, তীর ছোঁড়া ও অসি চালনাও শেখানো হতো। এটি তার জন্য ছিল একটি সুযোগ। এই সুযোগে ইংরেজদের তাড়িয়ে দেশ মুক্ত করার জন্য তিনি ডনকুস্তি ও ব্যায়াম শিখেছিলেন। তিনি ডনকুস্তি শিখে কুস্তিগির ও পালোয়ান হিসেবেও নাম করেছিলেন।
১৮২২ সালে তিতুমীর মক্কায় হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্যে যান। তিনি সেখানে স্বাধীনতার অন্যতম পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমেদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। সেখান থেকে এসে (১৮২৭) তিতুমীর তাঁর গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে ‘তাহ্বান্দ’ নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। তিতুমীর হিন্দু জমিদার কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত ‘দাঁড়ির খাজনা’ এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। আগেই তিতুমীর পালোয়ান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন। একসময় তারা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়।ইংরেজ শোষণ শিশু তিতুমীরের মনে ভীষণভাবে কষ্ট দিয়েছিল। তাই ছোটবেলা থেকেই তার মনে প্রতিবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে। বড় হয়ে তিনি দেশে নিরস্ত্র দুর্বল মানুষগুলোকে মানসিক শক্তি দিয়ে প্রতিবাদী করে তোলেন। মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক নিয়ে গোলাবারুদ ছাড়াই নারিকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লায় যুদ্ধ করেছিলেন। ইংরেজদের ছিল সেনাবহর ও গোলন্দাজ বাহিনী। তাই ইংরেজ সেনাদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তারা রুখে দাঁড়াতে পারলেন না। বীর তিতুমীর শহীদ হলেন। তার সঙ্গে আরও অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক শহীদ হয়েছিলেন। ২৫০ জন সৈন্য ইংরেজদের হাতে বন্দি হয়েছিল। এভাবেই শেষ হয়েছিল তিতুমীরের যুদ্ধ।

তিতুমীরের সাথে প্রথম যুদ্ধ করতে আসেন ইংরেজ সেনাপতি আলেকজান্ডার। সঙ্গে পাঠান পাইক, বরকন্দাজ প্রায় ৭৫০ জন। ইংরেজ সাহেবদের হাতে বন্দুক। কিন্তু তিতুমীরের বাহিনীর হাতে সড়কি, বল্লম ও তীরের অব্যর্থ নিশানা। ইংরেজ পক্ষের বহু পাইক বরকন্দাজ প্রাণ হারায়। প্রায় ৫০০ জমিদার সৈন্য ও ইংরেজ পরাজয় বরণ করে। ইংরেজ সেনাপতি আলেকজান্ডার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। দ্বিতীয়বার যুদ্ধে আসেন কর্নেল স্কট। ১৮৩১ সালের ১ নভেম্বর মধ্যরাতে সুশিক্ষিত ইংরেজ সৈন্যরা তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার কাছে পৌঁছে তা ঘিরে ফেলে। বহু গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তিতুমীরের সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।তিতুমীর অসীম বীরত্বের সাথে এই সুসজ্জিত বাহিনীর মোকাবিলা করেন। ইংরেজদের কামানের গোলায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। কেল্লার সামনে বীরবিক্রমে জুলুমের মোকাবিলা করে ১৮৩১ সালের ১১ নভেম্বর তিতুমীর শাহাদাত বরণ করেন। শহীদ হন তার সঙ্গী-সাথী বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তিতুমীরের সুদক্ষ সেনাপতি গোলাম মাসুদ যুদ্ধে বন্দী হন। পরে ইংরেজদের বিচারে তার ফাঁসি হয়। পরবর্তীতে তিতুমীরের ২২৫ জন অনুসারীর বিচারে জেল হয়।

১৮৩১ সালের ২৩শে অক্টোবর বারাসাতের কাছে নারিকেলবাড়িয়ায় তাঁরা বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এ অঞ্চলের মানুষ মারাঠা আর বর্গীদের দ্বারা লুন্ঠিত এবং পশ্চিমবঙ্গের অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের হাতে নিস্পেষিত হয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত ছিল। বাঙ্গালী মুসলমানদের উপর বেশ কয়েকজন হিন্দু জমিদার নানা ধরনের অত্যাচার করত, নিবর্তনমূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে, মুসলমানদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে পূঁজার পাঁঠা জোগাতে হতো, কেউ দাঁড়ি রাখলে সেজন্য চাঁদা দিতে হতো, মসজিদ নির্মাণ করলে কর দিতে হতো, এমনকি কেউ গরু জবাই করলে তার ডান হাত কেটে দেয়ার ঘটনাও কম ছিলনা। এই পটভূমিতে দরিদ্র মুসলিম কৃষকদের পক্ষে প্রতিবাদের আন্দোলন গড়ে তোলেন মীর নেসার আলী তিতুমীর।

ভারতীয় উপমহাদেশে তখন চলছিল ইংরেজ বিরোধী জিহাদ আন্দোলন। বাংলাদেশ থেকেও জিহাদ আন্দোলনে লোকজন শরীক হতেন। তিতুমীরের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন যে, বাংলার মুসলমানদের ইমান ও আকিদার দিক থেকে সবল করে এবং অর্থনৈতিক-সামাজিকভাবে শক্তিশালী করেই তবে তাদের মধ্যে জিহাদের আহবান জানানো যেতে পারে। তিনি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা করতে পারতেন। বাংলার আনাচে কানাচে ঘুরে ঘুরে তিনি জনগণকে সচেতন করতে থাকেন। তাঁর বক্তৃতা ও প্রচারকাজে অভাবিত জাগরণ দেখা দেয়। ধর্মীয় অনুশাসন সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এই দুটি ছিল তাঁর মৌলিক কর্মসূচী। তাঁর আহবান ছিল বিরান হয়ে যাওয়া মসজিদ সংস্কার করে নামাজের ব্যবস্থা করা, পূঁজার চাঁদা দান কিংবা তাতে অংশ নেয়া থেকে মুসলমানদের বিরত রাখা, শিরক-বিদায়াত হতে দূরে থাকা, মুসলমানদের মুসলিম নাম রাখা, মুসলমানদের ধুতি ছেড়ে লুঙ্গি বা পাজামা পরা, পীরপূঁজা ও কবরপূঁজা না করা ইত্যাদি। তিতুমীরের ধর্মীয় দাওয়াতের মূলকথা ছিল, জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসুলের (স.) নির্দেশ পরিপালন সম্পর্কিত। এটি ছিল মূলত ভারতবর্ষের মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবন পুণর্গঠনের এক বৈপ্লবিক কর্মসূচী।

তিতুমীরের আহবান ছিল অত্যাচারী জমিদারী প্রথার বিরুদ্ধেও। তাঁর একটি শ্লোগান ছিল, লাঙ্গল যার, জমি তার। তাঁর বক্তব্য ছিল, যার শ্রমের ফসল তাকেই ভোগ করতে দিতে হবে। এই অভাবনীয় আহবানের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলার কৃষকদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে নির্যাতিত দরিদ্র কৃষকদের সমন্বয়ে একটি দল। কিন্তু তিতুমীরের আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রথম বিরোধীতায় নামেন জমিদারগণ। বিশেষ করে পূঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়, গোবরা গোবিন্দপুরের জমিদার শ্রী দেবনাথ রায়, ধান্যকুড়িয়ার জমিদার শ্রী রায়বল্লভ, তারাগুনিয়ার শ্রী রাম নারায়ণ নাগ, নাগরপুরের জমিদার গৌর প্রসাদ চৌধুরী, সরফরাজপুরের জমিদার শ্রী কে পি মুখার্জী ও কলিকাতার গোমস্তা লালু বাবু প্রমুখ তিতুমীর ও তার সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন। ইংরেজ নীলকররাও ছিলেন জমিদারদের পক্ষে। পূঁড়ার জমিদার তিতুমীরের সঙ্গীসাথীদের ওপর নির্যাতন শুরু করেন। তিতুমীর ঐ জমিদারকে পত্র মারফত জানান যে, তিনি (তিতুমীর) কোন অন্যায় করছেন না, ইসলাম প্রচারের কাজ করছেন। এই কাজে বাধা দান করা ঠিক নয়। এটা পরধর্মে হস্তক্ষেপের সামিল হবে। তিতুমীরের এই পত্র নিয়ে জমিদারের কাছে গিয়েছিল আমিনুল্লাহ নামক একজন দূত। জমিদার তিতুমীরের পত্রকে কোন তোয়াক্কা না করে তাঁর দূতকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। জমিদারের লোকেরা মুসলিম-প্রধান গ্রাম বশিরহাটের মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয় ও গ্রামটি লুট করে। সরফরাজপুরের মসজিদে তিতুমীর ও তার কয়েকজন অনুসারীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত তিতুমীর বেঁচে যান। প্রত্যেকটি ঘটনার পর মুসলমানরা থানায় মামলা করেছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত ও রায় সবই ছিল একপেশে। তিতুমীর ন্যায়বিচার পাননি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকেও।
তিতুমীর থাকতেন সরফরাজপুর গ্রামে। গ্রামবাসীদের ওপর জমিদারের বারবার আক্রমণ ও অত্যাচারের কারণে তিনি নিজেই সে গ্রাম ছেড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন নারিকেলবাড়ীয়া গ্রামে। ১৮৩১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি দলবলসহ নারিকেলবাড়ীয়া গ্রামে যান। সেখানে চারিদিক থেকে অব্যাহত হামলার কারণে তিতুমীর তার আস্তানাটিকে নিরাপদ করার জন্য বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মাণ করেন তাঁর বিখ্যাত বাঁশের কেল্লা। নারিকেলবাড়ীয়ার পরিত্যক্ত একটি মসজিদকে সংস্কার করে সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ চালু করেন। তাঁর নেতৃত্বে নদীয়া ও ২৪ পরগণা জেলার অনেক এলাকার মানুষ একতাবদ্ধ হয়। স্বভাবতই এটা জমিদারদের স্বার্থের পরিপন্থী ছিল। জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ১৮৩১ সালের ২৯ অক্টোবর সহস্রাধিক সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে নারিকেলবাড়ীয়া আক্রমণ করতে আসেন। তিতুমীর তাঁর অনুসারীদের জীবনরক্ষার্থে আত্মরক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। এভাবেই বাঁশের কেল্লা নামক দূর্গটির নাম ছড়িয়ে পড়ে। নারিকেলবাড়ীয়া আক্রমণ করতে এসে গোবরা-গোবিন্দপুরের জমিদার স্বয়ং নিহত হন। শেষে জমিদারদের বাহিনী পিছু হটে যায়।জমিদারদের বাহিনী পরাজিত হওয়ার পর ইংরেজ সরকারের ওপর তিতুমীরের বিরুদ্ধে অভিযানের পক্ষে চাপ বাড়তে থাকে। খ্রিস্টান পাদ্রী, জমিদার ও নীলকররা অব্যাহতভাবে অভিযোগ উত্থাপন করতে থাকে। শেষে ইংরেজ সরকার তিতুমীরের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর মেজর স্কটের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী নারিকেলবাড়ীয়া অবরোধ করে। যুদ্ধ শুরুর আগে ইংরেজ বাহিনী ও তিতুমীরের মধ্যে একটি সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল। সংলাপে অংশ নেয়া তিতুমীরের প্রতিনিধি সম্ভবত ইংরেজী জানতেননা। ফলে সংলাপে তিতুমীরের বক্তব্যকে ইংরেজ মেজরের কাছে উপস্থাপন করছিলেন রাজচন্দ্র নামক জনৈক দোভাষী।
দুঃখজনকভাবে দোভাষী তিতুমীরের পক্ষে বক্তব্যকে এমন বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছিল যে এতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মেজর স্কট গুলীর নির্দেশ দেন। মূলত ইংরেজ বাহিনীর সুসজ্জিত আধুনিক অস্ত্রের সামনে তিতুমীরের লাঠি আর তীর সড়কি ছাড়া কোন অস্ত্রই ছিলনা। তবে গুলীর মুখে এই দেশপ্রেমিক সাহসী মানুষগুলি পিছে হটেনি। ইংরেজ বাহিনীর গুলীর মুখে তিতুমীর ও তার সঙ্গীরা সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান। নির্বিচাওে গুলী চালাতে থাকে ইংরেজ সৈন্যরা।

গুলীতে তিতুমীর, তাঁর পুত্র গরহর আলীসহ ৫০ জন নিহত হয়। ২৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রাম তল্লাসি করে আরও ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এলাকার বাড়ীঘরগুলিতে আগুন দেয়া হয়। তিতুমীরসহ মৃতদেহগুলিকে প্রকাশ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়, যাতে তাঁদের শহীদ হিসেবে কেউ সম্মান দেখাতে না পারে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৯৭ জনের বিচার হয়। তন্মধ্যে তিতুমীরের প্রধান সহকারী গোলাম মাসুমের প্রাণদন্ড, ১১ জনের যাবজ্জীবন, ১২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়। বিচারকালে ৪ জনের মৃত্যু হয়। এই অসম যুদ্ধ সম্পর্কে ইংরেজ সেনাপতি নিজেই বলেছেন, যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি সত্য, কিন্তু জীবন দিয়েছে ধর্মপ্রাণ ও দেশপ্রেমিক এক মহাপুরুষ। তিতুমীর সম্পর্কে ইংরেজ অনেকেই মনে করেন তিতুমীর সাধারণ একজন লাঠিয়াল ছিলেন। আসলে তা নয়, তিতুমীর বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাংলার নিরীহ মুসলমানদের এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে বারবার আক্রমণ করে শেষে জীবন রক্ষার জন্য হাতে লাঠি নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। দরিদ্র মুসলিম ও সাধারণ কৃষকদের পক্ষে কথা বলে তিতুমীর টিকে থাকতে পারেননি সত্য। তাই বলে তাঁর আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। বাংলার সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল। ঘটনার ২৫ বছর পর ১৮৫৭ সালে সিপাহী জনতার বিদ্রোহকেও ইংরেজ সরকার নির্মমভাবে দমন করেছিল। সেই ইংরেজরা শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। অত্যাচারী জমিদাররাও আর নেই। আছে শুধু তিতুমীর ও তার বীরত্বগাঁথা সংগ্রামের ইতিহাস।

তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে।
অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন “ভাই সব , একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হার-জিত আছেই। এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহিদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে। আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।” ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের আক্রমণ করে। তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। ১৪শে নভেম্বর তিতুমীর ও তাঁর চল্লিশ জন সহচর শহিদ হন।

১৯ নভেম্বর, ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ। ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের অন্যতম একটি স্মরণীয় দিন। এদিন ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, বাংলার বীর সাইয়েদ মীর নেসার আলী তিতুমীরের শাহাদাত দিবস। সেদিন ইংরেজ সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় এজেন্ট অত্যাচারী জমিদারদের সম্মিলিত গুলীবর্ষণে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন তিতুমীরসহ ৫০ জন নিরপরাধ বীর যোদ্ধা। গ্রেফতার করা হয়েছিল আরও ৩৫০ জনকে। যাদেরকে পরে বিচারের নামে ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড-সহ বিভিন্ন শাস্তি দেয়া হয়েছিল দেশের গরীব কৃষকদের পক্ষে কথা বলার জন্য। শহীদ তিতুমীরসহ নিহত মুসলমানদের লাশগুলিকেও প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। আমরা জাতীয় বীরদের ভুলতে বসেছি। যে জাতি তার জাতীয় বীরদের কদর করতে জানে না সেখানে বীর জন্মায় না। শহীদ সৈয়দ মির নেসার আলী তিতুমীর আমাদের জাতীয় বীর। তিনি বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন এবং স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে বলেন, “একটু পরেই হয়তো আমরা ইংরেজদের আক্রমণের শিকার হবো। তবে এতে ভয় পেলে চলবে না। এই লড়াই শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে। আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে। আজ থেকে প্রায় পৌনে দুশ’ বছর আগে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিতুমীর প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। বীর তিতুমীর তার বীরত্বের জন্যই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। জীবনের বিনিময়ে তিনি সত্যের পথে লড়াই করলেন। তাঁর এই দৃঢ়তা ও অনবদ্য প্রেরণা আজও বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানকে অনুপ্রাণিত করে, আবেগতাড়িত করে।

পঠিত : ৩০০ বার

মন্তব্য: ০