Alapon

সুশান্তের আত্মহত্যা: আমাদের শিক্ষা...



২০০৮ সালে বালাজি টেলিফ্লিমসের কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিলের সঙ্গে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করা সুশান্ত সিং রাজপুততের প্রত্যেকটি মুভিই ছিলো প্রায় সুপারহিট। একের পর এক ছক্কা হাঁকাতে থাকেন তিনি।

এরপর ২০১৩ সালে কাই পো ছে ছবির সঙ্গে রুপোলি সফর শুরু করেন সুশান্ত। ২৫০ মিলিয়ন রুপির বাজেটের এই ছবিটি বক্স অফিস থেকে আয় করে ৯২০ মিলিয়ন রুপি। ভাবা যায়? এটা কিন্তু রুপোলী জগতে তার প্রথম ছবি।

এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি ছবির মাধ্যমে বিখ্যাত হয়ে উঠেন সুশান্ত। ছবিটি যেমন ছবি প্রেমীরা মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলো ঠিক সেভাবেই সুশান্তের নিখুঁত অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলো দর্শকমহল। বক্স অফিস কাঁপিয়েছিলো ছবিটি। সুশান্ত পেয়ে যান 'এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড' খ্যাতি। মুভির নামেই খ্যাত হলেন মুভির হিরো।

বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ারে শীর্ষে অবস্থান করেছিলো সে। টিভি শো, সিরিয়াল এবং ফিল্মে অভিনয় করার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোটি কোটি টাকার মালিকানা নিজের নামে করতে সক্ষম হয়েছে সে।

সুশান্ত সিং রাজপুতের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে লাইক আছে ১৩ লক্ষ। আই মিন এই পৃথিবীতে কম হলেও তার ফ্যান আছে ১৩ লক্ষ। আর, তাকে তো কম হলেও এই পৃথিবীর কোটি কোটি লোক চিনে। সুখি হিসেবেই জানতো তাকে।
.....
এতক্ষণ বলছিলাম বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের কথা। যে মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেছে। ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে তার লাশ। তার পার্সোনাল সেক্রেটারি তার আত্মহত্যার খবরটি নিশ্চিত করেছে মিডিয়ায়। বিশ্ব মিডিয়া আজ থমথমে অবস্থা। ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকা অবস্থায়ই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো। কয়েকঘন্টার মধ্যে বিষয়টি আজ মোস্ট টকড টপিক। মৃত্যুকাল তার বয়স মাত্র ৩৪ বছর।
কি ছিলোনা তার?

টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, জনপ্রিয়তা, গ্ল্যামার লাইফ, ফ্যান-ফলোয়ার কিসের অভাব ছিলো তার? অভাব হচ্ছে শুধু শান্তির, অভাব হচ্ছে মানষিক প্রশান্তির, অভাব হচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যের, অভাব হচ্ছে ভালোবাসার।

একচুয়ালি, যারাই আখেরাত কে ছেড়ে দিয়ে দুনিয়ার পিছনে ছুটবে তারা কখনই সুখি হতে পারবেনা। আপাতদৃষ্টিতে তাদের সুখি মনে হলেও আসলে তা লোকদেখানো ধার করা সুখ।
সুশান্তের মতো শত শত বিখ্যাতদের উদাহারণ আছে যারা আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করেছিলো। ডিপ্রেশড হয়ে অশান্তিতে কাটিয়েছিলো হাজারো দিন। শেষ মুহুর্তে আত্মহত্যা!!
কখনও কি শুনেছেন, মসজিদের কোন ঈমাম আত্মহত্যা করেছে? নিয়মিত নামায-রোজা আদায় করা কোন ব্যাক্তি হতাশার কোপানলে মত্ত হয়ে নিজেই নিজের জীবন ধ্বংস করে ফেলেছে?

আমি কম্পেয়ার করতে চাইনা। শুধু এটাই বুঝাতে চাই, সুখ হলো আত্মার প্রশান্তিতে। আর এই প্রশান্তি প্রদানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতেই। দুনিয়ার প্রাপ্তিতে কোন সুখ নেই। নিছক তামাশা মাত্র ইহা।

'সেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে তার জীবন অতিবাহিত করতে পারে, যে তার জীবনের মালিক আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ করতে পারে।'

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুনিয়া পূজাই পৃথিবীর মানুষদের অসুখী হওয়ার প্রধান কারণ।
কে কার চেয়ে বেশি ধনী হবে, কার চেয়ে বেশি সম্মানিত হবে কার চেয়ে বেশি রূপবান বা রূপবতী হবে এই নিছক দৌড়ের উপর যারাই থাকে তারা কখনোই সুখী হতে পারে না। হয়তো সে তার কাঙ্ক্ষিত যশ খ্যাতি অথবা ধন-সম্পদ উপার্জন করতে পারে। কিন্তু তা কখনোই তাঁকে আত্মার প্রশান্তি দিতে পারে না। অর্থাৎ সে সুখী হতে পারে না...।
আল্লাহ তা'আলা বলেন, “কখনো সে সকল বস্তুর দিকে থাকা তাকাবে না যা আমি দুনিয়া পূজারীদের জন্য দিয়েছি। এসব দিয়ে আমি তাদের মাত্র পরীক্ষাই করি। বস্তুত! আল্লাহ প্রদত্ত রিযিকই সর্বোত্তম এবং সবচেয়ে স্থায়ী।” [সুরা তা-হা : ১৩১]

আল্লাহ তায়ালা অপর আয়াতে বলেন,“জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু আত্মা প্রশান্ত হয়।” [সুরা রাদ: ২৮]

রবের উপর ভরসা থাকুক। সুখ, শান্তি, প্রফুল্লতা আমাদের জীবনের মুহুর্তে মুহুর্তে থাকবে। শান্তি তো সিজদাহয়..। শান্তি তো দাসত্বে তার। সুশান্তের মতো কত শত লোক আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় 'দেখো, আমাদের অভাব নেই কিছুর। অভাব ছিলো শুধু একচিলতে প্রশান্তির'।

তবুও কি মোরা বুঝবোনা!!??

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট (উইকিপিডিয়া, ফিল্ম ব্রাউজার ইত্যাদি)
শেখ মুযযাম্মিল হুসাইন শুভ

পঠিত : ২২৪ বার

মন্তব্য: ০