Alapon

"মালয়েশিয়ার ইসলামি আন্দোলন প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পাস) ও আমাদের শিক্ষা"




★ মালয়েশিয়ার বর্তমান ইসলামি আন্দোলনের রাজনৈতিক সফলতা নিয়ে অনেকেই খুশি, আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামি আদর্শের ঝাণ্ডাবাহীরা আদর্শের সফলতা বা উত্থান দেখে খুশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে ভাইয়েরা কেবল রাজনৈতিক সফলতাকেই সফলতা হিসেবে মূল্যায়ন করেন তাদের জন্য আলাদা একটা ম্যাসেজ রয়েছে।

পাস-কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৫১ সালে। প্রতিষ্ঠিত হবার ত্রিশ বছর পর তথা ৮০ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে ! এরপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে ঠিক, কিন্তু সবচেয়ে বেশি কাজ কিন্তু তারা তালিম-তারবিয়াতেই করেছেন। আদর্শের অবস্থানকে মজবুত করার জন্য সময় দিয়েছে। অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন, অনেক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, যেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানসে ইসলাম ও ইসলামি চেতনা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়! আজকের এই অবস্থানে কিন্তু তারা একদিনে আসেননি। তারা সবর ও ইস্তেকামাতের সাথে দীর্ঘদিন লেগে থেকে কাজ করেছেন। এখনও করে যাচ্ছেন।

★ মালয়েশিয়ায় আলাদা করে মুসলিমদের জন্য শরিয়াহভিত্তিক আদালত রয়েছে। পাস এই আদালতকে, বা শরিয়াকে কেন্দ্রীয় আদালতের মর্যাদা দেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে যাচ্ছে । গত নির্বাচনে তারা ১৮-টি আসন পায়। এর আগের নির্বাচনে আবার ২১ টি আসনে জয়লাভ করেছে, এবং পাস-প্রধান শায়েখ আব্দুল হাদী আওয়াং সেই নির্বাচনের আগেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমরা যদি উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে পারি, তাহলে আমরা সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করতে উৎসাহ দেব।

দেখুন, তারা পশ্চিমা বিশ্বকে খুশি করতে বলেনি যে ইসলামি রাষ্ট্রেরচিন্তা বাদ দিন, কল্যাণ রাষ্ট্রের চিন্তা করুন। তারা শরীয়তকে মূল আইন, রাষ্ট্রকে ইসলামি রাষ্ট্র করার কথা প্রকাশ্যে আর স্পষ্টভাবেই ঘোষণা দিয়েছে। এতে পশ্চিমাবিশ্ব কীভাবে নেবে, তাদেরকে স্বীকৃতি দেবে কি-না এসব নিয়ে মোটেই ভাবেনি শায়েখ আব্দুল হাদী আওয়াং এবং তার দল । যেমনটি আমাদের শহীদ নেতা মাওলানা নিজামী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন। মাওলানা নিজামীকে যখন প্রশ্ন করা হতো আপনারা ক্ষমতায় গেলে শরীয়া কায়েম করবেন কি-না, তিনি বলতেন; "আমরা রাজনীতি করিই আল্লাহর আইন কায়েমের জন্য। এক্ষেত্রে কোনো কম্প্রোমাইজের সুযোগ নেই। কেউ যদি ভুল বুঝে, আমরা প্রয়োজনে তাদের সাথে আলোচনা করে ভুল বুঝাবুঝি দূর করবো কিন্তু আদর্শকে জলাজঞ্জলি দিতে প্রস্তুত নই আমরা।"

পাস-প্রধান শায়েখ আব্দুল হাদী আওয়াং এও বলেছেন যে, "আমরা চেষ্টা করবো ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপরেখা মানুষের সামনে তুলে ধরতে।"

মজার বিষয় হচ্ছে মালয়েশিয়ায় ৩০/৪০ ভাগ মানুষ অমুসলিম হওয়া পরেও পাস ইসলামকে কথিত আধুনিক, যুগোপযোগী করার দিকে না গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইসলামের মৌলিক বিধানের ওপর অটল থেকেছে, বিশেষ করে হুদুদের ক্ষেত্রে তারা কোনো ধরনের হীনমন্যতার প্রকাশ ঘটাননি।

★ আবার আরেকটা বিষয় খেয়াল করুন, তারা জ্ঞানের জাগরণের নাম করে আন্দোলন থেকে নিষ্ক্রিয় হওয়া, সাথী-সদস্য-কর্মী হয়ে কী ফায়দা, এসব অবান্তর প্রশ্নও তোলেননি। তাদের সাংগঠনিক স্ট্রাকচারের ভেতরই তারা সব করেছে। স্বয়ং পাস-এর প্রধান শায়েখ আব্দুল হাদী আওয়াং একজন উঁচুমানের আলেম। আবার তিনি একই সাথে রাজনৈতিক দলেরও প্রধান। তিনি কিন্তু ইচ্ছা করলে ইসলামের পুণর্জাগরণ, জ্ঞানের জাগরণ ইত্যাদি চমকপ্রদ নাম দিয়ে, দায়িত্বশীলদের সম্পর্কে নেগেটিভ বার্তা দিয়ে সংগঠন থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারতেন, হাকিকত অন্বেষণকারী একদল আলেম তৈরির কথা বলে একদল মেধাবী জনশক্তিকেও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি আদর্শ আর আন্দোলনের অগ্রযাত্রার জন্যই জ্ঞান অর্জন করেছেন। আবার সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ময়দানে নেতৃত্বও দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন।

★ এখন যারা জ্ঞানের জাগরণ চান, মুখে মুখে আর ফেসবুকে ইসলামি আন্দোলনের বড় বড় শুভাকাঙ্ক্ষী সাজেন,অথচ বাস্তব জীবনে ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের ব্যক্তিগতভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন, আন্দোলন ও আন্দোলনের ভাইদের বিরুদ্ধে নিজেদের অভ্যন্তরে প্রোপাগাণ্ডা চালান, নিজেদের ইন্সটিটিউটের কাউকে অন্য কেউ মারলে প্রিন্সিপালের কাছে শিবিরের ভাইদের দোষ দেন, ছাত্র সংসদের নামে অযথা বিচার দেন কোনো প্রমাণ ছাড়া, তাদের জন্যও এটা একটা বড় শিক্ষা যে, আন্দোলনে সক্রিয় থেকেও বড় আলেম হওয়া যায়। রাজনৈতিক কার্যক্রম ছাড়া, ময়দানের তৎপরতা ছাড়া শুধু জ্ঞানের জাগরণ দিয়েই সমাজ বা রাষ্ট্র পরিবর্তন হয় না। জ্ঞানের প্রয়োজন তো সঠিক পথে চলার জন্য। আদর্শের বিজয়ের জন্য ।

★ পাস শরীয়তকে যেভাবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, আবার সেই ইসলামি শরীয়তকে কীভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মের মানসে গেঁথে দেওয়া যায়, সেইদিকেও মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মুসলিম মননকে কার্যকরভাবে ইসলাম অনুযায়ী গড়ে তুলতে, মন-মগজকে মুসলিম করতে তারা অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন, দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন।

পাস কতটা ঠান্ডা মাথা আর দূরদর্শিতা নিয়ে কাজ করে, তা ২০১৮ এর নির্বাচনের পরে তাদের প্রেসিডেন্টের এই কথাটি থেকেই বুঝা যায়, যেখানে তিনি বলেছেন- "প্রধানমন্ত্রীত্ব তো কোনো জুতো নয় যে ইচ্ছে করলেই বদলে ফেলা যাবে।"

★ পাস-এর নেতৃত্বে ১৯৮০ পরবর্তী থেকে আলেমরা দিয়ে আসছেন। সাধারণত এর আগে নেতৃত্বে ছিলো ইসলামকে ভালোবাসেন, মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত এমন ধরনের মুসলিমরা। দেওবন্দি অনেক আলেমও আছেন পাস-এর নেতৃত্বে।

★ ২০০০ সালে পাসের ৪৬ তম সম্মেলনে হিসেবে শহীদ আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। তখন মাওলানা নিজামীর সফরসঙ্গী ছিলেন শহীদ মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রহ.।

[ছবিতে দারস দেওয়া অবস্থায় শায়েখ আব্দুল হাদী আওয়াং ]

- রোহান আব্দুল্লাহ

পঠিত : ৬০৭ বার

মন্তব্য: ০