Alapon

বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য এবং কিছু কথা...



বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটা লক্ষ্য হলো—মনস্তাত্ত্বিক, আবেগময় ও আধ্যাত্মিক সঙ্গ লাভ করা। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যকার সম্পর্কের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেবল প্রয়োজন পূরণের সম্পর্ক নয়। বৈবাহিক সম্পর্ক একটি আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। এই সম্পর্ক থেকে ছড়ায়— ভালোবাসা, মমতা, ক্ষমা, সহানুভূতি, পারস্পরিক আস্থা, আত্মত্যাগ, সান্ত্বনা ও সহযোগিতা।

মানবপ্রকৃতির সর্বোত্তম প্রকাশ হলো—এই সম্পর্কগুলোর ফুলেল বিকাশ। পরিবারে নর-নারীর আধ্যাত্মিক সম্ভাবনা বাস্তবতায় রূপ নেয়। এই বাগানেই তাদের সদ্গুণ ও নৈতিকতা প্রস্ফুটিত ফুল হয়ে সৌরভ ছড়ায় পরিবারে ও সমাজে। বিয়েতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই খুঁজে পায় অনাবিল পূর্ণতা। পরিবারে সদস্যদের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা, সহানুভূতি, আত্মত্যাগ, সহিষ্ণুতা ও মমতা সন্তানের মধ্যে বাস্তবতায় পর্যবসিত হয় এবং এসব সদ্গুণাবলি তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। মানবীয় ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা ও বিকাশে পরিবার সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এজন্য রাসূল সা. বলেন—এই পৃথিবীর সর্বোত্তম আবাসস্থল হলো পরিবার। পবিত্র কুরআনে অনেকভাবে বিয়ে ও পরিবারের এই কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা এসেছে—
وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡهَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ... ۲۱
“আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে আরেকটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন—যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও মায়া-মমতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন।” সূরা রুম : ২১

কুরআনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে শরীর ও পোশাকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
...هُنَّ لِبَاسٌ لَّکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّهُنَّ... ۱۸۷
“তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ আর তোমরাও তাদের পোশাকের অনুরূপ।” সূরা বাকারা : ১৮৭

ইসলাম জোর দেয় স্বামী-স্ত্রীর সম্মিলনে, দুটি প্রাণের ঐকতানে। স্বামী-স্ত্রীর এই সম্পর্ক ও সমতা আইনি সম্পর্কের চেয়েও মহান কিছু। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে একে অপরের পোশাক বলা হয়েছে। এ কথা বলা হয়নি যে—একজন শরীর অন্যজন পোশাক। পোশাক হলো এমন জিনিস—যা জুড়ে থাকে মানবশরীরের সবচেয়ে কাছাকাছি। মৌলিকভাবে নিজ সত্তার অংশ না হয়েও এ পোশাকই পরিশেষে মানবশরীরের সাথে অপরিহার্য অংশের মতো হয়ে ওঠে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও এমনই ঘনিষ্ঠ। পোশাক হলো এমন বিষয়—যা শরীরকে আবৃত করে এবং সুরক্ষা দেয়। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের সুরক্ষাকারী ও অভিভাবক।

পোশাক তার পরিধানকারীকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। পোশাক ছাড়া মানবশরীর নিজেকে অসম্পূর্ণ অনুভব করে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে পূর্ণ করে, শুদ্ধ করে, সুন্দর করে। এই সম্পর্ক আরও সংরক্ষণ করে নৈতিকতা। বৈবাহিক সম্পর্ক অবৈধ দৈহিক কামনার বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে। এসব বিষয়াবলি একটি সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তিতেই প্রতিভাত হয়ে উঠেছে—“তোমরা একজন অন্যজনের পোশাকস্বরূপ।”
.
মূল : প্রফেসর খুরশিদ আহমদ
অনুবাদ : মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ

পঠিত : ২২৩ বার

মন্তব্য: ০