Alapon

পাহাড়ের খ্রিস্টান সন্ত্রাসীদের শেল্টার দিচ্ছে ভারত



২য় বার এরেস্ট হওয়ার পর থানায় আমাকে ভালোভাবেই টাইট দেওয়া হয়। দুইদিন পর কোর্টে উঠায়। কোর্টে আসার পর উপলব্ধি করতে পারলাম আমি ভীষণভাবে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছি। তারপরও সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের বুঝ দেওয়ার জন্য নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।

ততদিনে জেলখানা আমার পরিচিত। টার্গেট ছিল কোনরকম কারাগারে গিয়ে হালদা ১৭ বা ১৮ তে গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিব। হালদা ১৭, হালদা ১৮, পদ্মা ৫, কর্ণফুলি ১৬ এই ওয়ার্ডগুলোতে জামায়াত-শিবিরের ভাইরা থাকতো। তারা ছাড়া সেসময় ঐ ওয়ার্ডগুলোতে আর কেউ ছিল না। তাই কারাগার আমাদের কাছে একটা মেসে পরিণত হয়েছিল। ভাই-ব্রাদার আছে সেখানে। তারা একটু সেবা যত্ন করলেই সুস্থ হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। এই পরিকল্পনা করে নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। কোর্টে এক ভাইকে বলে দুটো নাপা খেয়ে নিয়েছি।

আসরের পরে কোর্ট থেকে কারাগারে গিয়েছি। কারাগারে গিয়ে শরীরের দ্রুত অবনতি হতে লাগলো। কারাগারে ঢুকার সময় যদি রক্ষীরা বুঝতে পারে আমি অসুস্থ তারা বাধ্যগতভাবে আমাকে কারা হসপিটালে পাঠাবে। সেটা আরেক আজাব। সেখানে সকল বেড দখল করে রেখেছে পয়সাওয়ালা বন্দিরা। হসপিটালে গেলে আমার স্থান হবে বেডের নিচে অথবা চলাচলের রাস্তায় অথবা টয়লেটের সামনে। তাই এখানেও নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছি, যাতে হসপিটালে যেতে না হয়।

সন্ধ্যার গুনতির আগে আমার প্রসেসিং শেষ হলে আমি ওয়ার্ডে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু সেটা হয়নি। গণনা শেষ হয়ে গেল। আমার প্রসেসিং শেষ হতে হতে মাগরিবের সময় হয়ে গেল। ঠাঁই হলো আমদানি ওয়ার্ডে। পুরো শরীরে ধুলোবালি, ময়লা। গত দু'দিন মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে মার খেয়েছি। ওয়ার্ডে যেতে না পারায় গোসলও দেওয়া হলো না। অযু করে গামছা বিছিয়ে মাগরিবের নামাজে দাঁড়ালাম। ১ম রাকায়াত শেষ যেই দাঁড়াতে গিয়েছি আর পারি নি। ঢলে পড়ে গেলাম। আর কত নিজেকে ধরে রাখা যায়!

অল্প সময়েই জ্ঞান ফিরলো। দেখলাম দুজন লোক আমাকে কিছু একটা খাওয়াতে ট্রাই করছে। ওটা ছিল মাল্টার জুস। খেলাম। এরপর পানি খেলাম। ঐ দুইজন ভাই ভেবেছে আমি ক্ষিদের জন্য ঢলে পড়েছি। আমি তাদের আশ্বস্ত করলাম, প্রচুর খাওয়া হয়েছে আমার। দুপুরে বিরিয়ানী ও নানান ফলমূল খেয়েছি। বিকেলে আধালিটার আইস্ক্রিমের বড় অংশ খেয়েছি। পানি খেয়ে আবার নামাজ শুরু করলাম। এবার বসে পড়েছি।

নামাজের পর ঐ দুই ভাইয়ের সাথে আলাপ করলাম। তারা আমাকে জানালেন, আমাকে নাকি দেখেই তারা বুঝেছে যে আমি শিবির। জ্ঞান হারানোর পর তারা আমার শরীর ম্যাসেজ করে দিয়েছে। পানি খাইয়েছে। আমার ব্যাগ থেকে মাল্টা বের জুস বানিয়ে খাইয়েছে। আমিও বুঝলাম তারা জেএমবি সদস্য। তারা এই কারাগারে দীর্ঘদিন আছে। আজ তাদের কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। এর বিচার কাল সকালে হবে। তাই তাদের আমদানিতে এনে রাখা হয়েছে।

যাই হোক রাতে আমার জ্বর এসেছে। জেএমবি সদস্যরা আমার সেবা করেছে। তাদের কাছে থাকা খেজুর খাইয়েছে। পরদিন সকালে কারাগারের কিছু ফর্মালিটিজ শেষ করে ১০ টার দিকে হালদা ১৮-তে চলে গেলাম। সেই থেকে ঐ দুই ভাইয়ের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। তারা ওয়ার্ড থেকে বের হতে পারতেন না। তাই আমার পরিচিত রক্ষীদের মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতাম। খাবার পাঠাতাম। কোনোদিন ফেবারে থাকা রক্ষীকে সাথে নিয়ে তাদের সাথে দেখা করতে যেতাম। জাতীয় দিবসগুলোতে দেখা করার সুযোগ পেতাম। দেখা করতাম। এভাবে তাদের সাথে ভালো সখ্যতা তৈরি হলো।

তাদের থেকে আমি যেটা জানলাম, তাদের সংগঠিত হওয়া, অস্ত্রের প্রশিক্ষণ পাওয়া ও অস্ত্র পাওয়া সবটাই হয়েছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে। ভারত আসা যাওয়া নিয়ে আমি প্রশ্ন করলে তাদের থেকে যেটা জানতে পারি তা হলো, ঐ দেশের মুজাহিদরা অর্থাৎ ভারতের মুজাহিদরা বিএসএফকে ম্যানেজ করতে পেরেছে। বিএসএফ তাদের জন্য কোনো সমস্যা ছিল না। সমস্যা ছিল বিডিআর। বিডিআরকে ফাঁকি দিতে পারলেই যাতায়াত ও অস্ত্র আনতে আর কোনো সমস্যা ছিল না।

আমি তাদেরকে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত শুনে তাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি কীভাবে একটি চরম মুসলিম বিদ্বেষী রাষ্ট্র ইসলামী যোদ্ধাদের সহায়তা করতে পারে! এটা একটা ট্র্যাপ। আপনারা সাধারণ ঈমানদার মানুষ। আপনাদের ত্যাগ ও নিয়ত নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনাদের যারা পরিচালনা করছে তাদের আমরা সন্দেহ করি। অনেক তর্ক বিতর্ক হতো! অনেক কথা হতো! সর্বোপরি ভালোবাসাও ছিল।

পুরাতন এই কথাগুলো টেনে আনলাম গতকাল একটা নিউজ দেখে। ভারতের মিজোরাম সরকার অফিসিয়ালি বাংলাদেশের পাহাড়ের খ্রিস্টান বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গীদের আশ্রয় দিচ্ছে। গত ২২ নভেম্বর তাদের মন্ত্রীপরিষদে এই সিদ্ধান্ত পাশ হয়েছে। মিজোরাম একটি খ্রিস্টান রাজ্য। এর ৮৮% মানুষ খ্রিস্টান। কুকি চীন ন্যশনাল ফ্রন্ট নামের বাংলাদেশী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টানদের স্বাধীন দেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে ভারত তাদের সহায়তা করছে। বিএসএফ পলাতক কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সদস্যদের উদ্ধার ও আশ্রয় দেওয়ার জন্য রেসকিউ টিম তৈরি করেছে।

জেএমবি ইস্যুতে আমার দেওয়া তথ্যকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উল্লেখ করে উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মিকে (কেএনএ) সহায়তা দেওয়াকে উড়িয়ে দিতে পারবেন না। কারণ ভারতের গণমাধ্যমগুলো সহায়তার নিউজ ছাপিয়েছে ২৪ নভেম্বর।

কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি আবার বাংলাদেশের রানিং জঙ্গী গোষ্ঠী হিন্দাল শ্বারকিয়ার সাথে জড়িত। কী ভয়ানক কথা! আল কাদেয়া পন্থী হিন্দাল শ্বারিকিয়ার কিছু সদস্য ট্রেনিং পারপাসে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সেই লেজ টানতে টানতে দেখা যায় আল কায়েদা আর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি একসাথে ট্রেনিং নেয়। একদল খ্রিস্টান রাজ্য বানাতে চায় অন্যদল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ তারা একসাথে খায়!

উদ্বেগজনক বিষয় হলো উগ্র পাহাড়ী খৃস্টান সন্ত্রাসী আর আল কায়েদাপন্থী খারেজি সন্ত্রাসীদের মধ্যেকার সমন্বয়। সাধারণ দৃষ্টিতে তাদেরকে পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন মনে হলেও তারা আসলে বন্ধুভাবাপন্ন। তাদের গডফাদার কারা? কারা তাদেরকে একত্র করে দেয়? কারা তাদেরকে পুতুল বানিয়ে জেএমবিদের মতো সন্ত্রাসী বানাচ্ছে?

বিশ্বব্যাপী খৃস্টান মিশনারিরা পূর্ব তিমুরের মতো বাংলাদেশকে দ্বিখন্ডিত করার পরিকল্পনা করছে। তারা একইসাথে জঙ্গী দমনের নামে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ ও খৃস্টানদের অধিকারের নামে তাদের হয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে চায়। খারেজি সন্ত্রাসী ও খৃস্টান পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের উস্কে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

যদিও শুরু থেকেই জোর সন্দেহ ছিল এই বিদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে সহায়তা করতে ভারত। কিন্তু এর অফিসিয়াল কোনো তথ্য ছিল না। গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ২২ নভেম্বর পার্শ্ববর্তী ভারতীয় প্রদেশ মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার সভাপতিত্বে মিজোরাম মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকে চিন-কুকি-মিজো সম্প্রদায়ের অন্তর্গত উদ্বাস্তুদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে এবং "অস্থায়ী আশ্রয়, খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ সুবিধা অনুযায়ী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবরটি ২৪ নভেম্বর 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'সহ ভারতের সকল মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

যদিও এখানে উদ্বাস্তুদের কথা বলা হয়েছে, তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে শুধুমাত্র কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির জঙ্গী সদস্যরাই ভারতের আশ্রয়ে গেছে। কোনো সাধারণ নাগরিক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যায়নি। তারা দেশেই আছে। কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির দাবিও তাই। তারা বলেছে তারা সাধারণ কুকি চীন উপজাতি বাসিন্দাদের বিপদে ফেলতে চায় না বিধায় তারা যুদ্ধ না করে পিছু হটেছে।

মিজোরাম সরকার ইতোমধ্যে সকল পলাতক জঙ্গীকে তাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিএসএফ রেসকিউ টিম তৈরি করে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির সদস্যদের মিজোরামে থাকার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে বিএসএফ ও ভারতীয় আর্মির প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তায় দ্রুতই তারা বাংলাদেশে অস্থিরতা ও গোলযোগ তৈরি করবে।

বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গী তৈরি ও আশ্রয় দেওয়া ভারতের জন্য নতুন নয়। ১৯৬৩ সাল থেকেই জঘন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

আমার এই পোস্ট সতর্ক থাকার জন্য। আমাদের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে যাতে কেউ ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে না পারে!

পঠিত : ২৬১ বার

মন্তব্য: ০