Alapon

দুনিয়াবি দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচতে যে একটি কাজ করতে পারেন...



রাসূলুল্লাহ (স) বলেন- مَنْ جَعَلَ الْهُمُومَ هَمًّا وَاحِدًا هَمَّ آخِرَتِهِ كَفَاهُ اللَّهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُومُ فِي أَحْوَالِ الدُّنْيَا لَمْ يُبَالِ اللَّهُ فِي أَىِّ أَوْدِيَتِهَا هَلَكَ - "যে ব্যক্তি তার সমস্ত চিন্তাকে একটি চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, অর্থাৎ আখিরাতের চিন্তায়, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অপর দিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে, সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহ্‌র কিছু যায় আসে না।" (সুনান ইবনে মাজাহ ২৫৭)

কি চমৎকার এক হাদিস! যদি আপনি পরকালের চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন...আল্লাহর কাছে আমি কী বলবো? শেষ বিচারের দিন আমি আল্লাহর কাছে কী উত্তর দিবো? কিভাবে আমি জান্নাত অর্জন করবো?

যদি এই চিন্তাগুলো আপনাকে উদ্বিগ্ন করে রাখে, আপনি যদি এভাবে আখেরাতের চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকেন, আমাদের রাসূল (স) বলেছেন, كَفَاهُ اللَّهُ هَمَّ دُنْيَاهُ - দুনিয়াতে আপনার যত ধরণের উদ্বেগ, চিন্তা, উৎকণ্ঠা আছে আল্লাহ তার জন্য দায়িত্ব নিয়ে নিবেন। এরপর তিনি বলেন- আর যে ব্যক্তির সকল চিন্তা শুধু দুনিয়াবি বিষয় নিয়ে...অন্য কথায়, সে টাকা নিয়ে চিন্তিত, পরিবার নিয়ে চিন্তিত, ব্যবসা নিয়ে চিন্তিত, ভিসা নিয়ে চিন্তিত, মানুষের কথা নিয়ে চিন্তিত মোটকথা তার সকল মানসিক চাপ এই দুনিয়ার বিষয় নিয়ে। পরকাল নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই, চাপ নেই।

রাসূল (স) বলেন- এই লোক যে আখিরাত নিয়ে কোনো পরোয়া করে না, কিভাবে সে মরল আল্লাহ তার কোনো পরোয়া করেন না। কোন উপত্যকায় তার মৃত্যু হলো তাতে আল্লাহর কিছু যায় আসে না। অন্য কথায়, আল্লাহ এই লোকটাকে পরিত্যাগ করেছেন। কারণ, সে আল্লাহকে পরিত্যাগ করেছে।

এটি খুবই গভীর মনস্তাত্ত্বিক একটি হাদিস। যদি ভালোভাবে চিন্তা করেন তাহলে বুঝবেন এমনই তো হওয়ার কথা। এটা হলো অগ্রাধিকার ঠিক করা নিয়ে। যখন আন্তরিকভাবে এ বিষয়টা উপলব্ধি করবেন যে, যা আসলেই ম্যাটার করে তা হলো আখিরাত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। তখন, এই দুনিয়া এবং এই দুনিয়ার সকল সমস্যা মেনেজ করা সহজ হয়ে যায়।
যখন বুঝবেন, এই দুনিয়া আর কত দিনের। দুঃখ-দুর্দশাও আর কতদিনের। শেষ ফলাফল কী হবে? তখন এটাও বুঝবেন আখেরাতের অনন্ত জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। এরপর হঠাৎ করেই পার্থিব এই সমস্যাগুলো একেবারেই তুচ্ছ হয়ে যায়। একটি উদাহরণ দিচ্ছি।

ধরুন, ডাক্তার এক ব্যক্তিকে বলল, তার হার্ট ফেইল করবে। তাকে এখনি হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করতে হবে, কয়েক দিনের মধ্যে। নতুবা সে মারা যাবে। ঠিক সে সময় শেয়ার বাজারে পতন হওয়ায় তার কিছুটা আর্থিক ক্ষতি হলো। আপনার কি মনে হয় সে এখন শেয়ার বাজার নিয়ে কোনো পরোয়া করে? যখন সে তার হার্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন, তার জীবন নিয়ে চিন্তিত।

তাহলে কেউ যদি দুনিয়ার সমস্যার সাথে পরকালের সমস্যার তুলনা করে পরকাল নিয়ে চিন্তিত থাকে, আমাদের রাসূল (স) বলেন, আল্লাহ তার দুনিয়ার সমস্যাগুলোর ভার নিয়ে নিবেন।

তাই, দুনিয়ার জীবনের চাপ মোকাবেলার অন্যতম শক্তিশালী একটি উপায় হলো, নিজেকে পরকালের চাপের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। পার্থিব চাপগুলো মোকাবেলার অন্যতম সেরা একটি উপায় হলো- মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বিপদ-আপদগুলোর কথা নিজেকে বার বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া।

তখন হঠাৎ করেই মনে হবে- এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চিন্তায় নিজের ঘুম হারাম করার কোনো মানেই হয় না। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চিন্তায় অসুস্থ হওয়ার কোনো মানেই হয় না, ডিপ্রেশনে পড়ার কোনো অর্থ হয় না।

আল্লাহ যদি আপনার হয়ে যায়, আপনার সবকিছু আছে। আল্লাহর সাথে যদি আপনার একটি সুন্দর সম্পর্ক থাকে, এটাই যথেষ্ট। আর যদি আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে সমগ্র দুনিয়াও আপনার জন্য যথেষ্ট হবে না।
------------- * -----------
নোমান আলী খান এক আলোচনায় বলেছেন- মনে করুন, কারো ঘরে আগুন লেগেছে। আর সে লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে দেয়ালে কোন রং টা ভালো মানাবে। এ লোককে আপনি কী বলবেন!!

আকরাম নদভি আরেকটি উদাহরণ দিয়েছেন। ধরুন, এক ব্যক্তি তার বাচ্চাদের নিয়ে একটি বন দেখতে গেলো। সেখানে ছোট ছোট প্রাণীরা আছে; যেমন, ইঁদুর, পিঁপড়া ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আপনি বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলছেন। হঠাৎ দেখলেন, বিশাল এক সিংহ কোত্থেকে সামনে এসে উপস্থিত হলো। কি হবে তখন? আপনি কি তখন ছোট ছোট ইঁদুর আর পিঁপড়া নিয়ে চিন্তা করবেন?

আপনি তখন আপনার প্রচেষ্টার শতভাগ ব্যয় করবেন এই সিংহের আক্রমন থেকে বাচ্চাদের এবং নিজেকে রক্ষা করার জন্য। ছোট ছোট সমস্যাগুলো আপনার মাথা থেকে হারিয়ে যাবে। মাটিতে থাকা পিঁপড়াগুলো সম্পর্কে আপনি তখন কোনো চিন্তাই করবেন না।

বর্তমানে আমরা পিঁপড়া, ইঁদুর আর ছোট ছোট পোকামাকড় নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু সত্যিকারের সমস্যা নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমরা ছোট সমস্যাগুলো নিয়েই পড়ে আছি।
এই জগতে আমাদের সবার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হওয়া উচিত- কিভাবে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবো।

— ড. ইয়াসির কাদি

পঠিত : ২৮২ বার

মন্তব্য: ০