লেখক ও লেখালেখি নিয়ে কিছু কথা কিছু টিপস।
তারিখঃ ১ ডিসেম্বর, ২০২২, ২৩:৫৭
★ লেখক কাকে বলে?
লেখক কাকে বলে, এ কথার জবাবে বলা যায়, যিনি মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে কলমের কালিতে ফুটিয়ে তোলেন, স্বাভাবিকভাবে তাকেই লেখক বলে। লেখক হচ্ছে সমাজের বিবেক। তিনি তাঁর কলমের শক্তি দিয়ে এই পৃথিবীকে আলোকিত করার চেষ্টা করবেন।
একজন মুসলিম লেখক যা মন চায়, তা-ই লিখতে পারবেন না। একজন মুসলিম লেখক হিসেবে লেখকের কাজ হচ্ছে মানুষের চিন্তা-চেতনার ভিত্তি তাওহিদ-রিসালাত ও আখেরাতের ওপর দাঁড় করানোর কাজ করা। আবার অন্যদিকে সমাজের সদস্য হিসেবে এর সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে সম্ভবনাগুলোকে ফুটিয়ে তুলবেন। জাতিকে জাগানোর কাজ করবেন। সমাজের অসংগতি দূর করে সমাজ সংস্কার ও সংশোধনের লক্ষ্যে লেখালেখি করবেন। আর ইসলামি আন্দোলনের কর্মী হিসেবে একজন লেখকের কাজ হলো আন্দোলনের পক্ষে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্ঞান উৎপাদন করা। এর পক্ষে জনমত তৈরি করা। মানুষের চিন্তা রাজ্যে দ্বীন বিজয়ের প্রেরণা তৈরি করা।
★কেন লেখালেখি করবো?
- নিজের আমল সুন্দর করার জন্য ।
- আল্লাহর দেওয়া খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে ।
- জ্ঞানার্জনের সাথে থাকার জন্য ।
- দ্বীনে হককে বিজয়ী করার জন্য।
- দ্বীনকে বিকৃতি ও বিচ্যুতি থেকে হেফাজত করার জন্য ।
- জাতিকে অসত্য থেকে সচেতন করার জন্য।
- ইলমের আমানত রক্ষা করার জন্য । কারণ ইলম গোপন করা গুনাহের কাজ। (সুরা বাকারা: ১৫৯)।
- মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরার জন্য ।
- দ্বীনহীনকে দ্বীনের পথে আনার জন্য। দ্বীনের পথে থাকা ব্যক্তিদের আরো ভালো প্র্যাক্টিসিং করার জন্যে।
- মানুষকে এক আল্লাহর দাস বানানোর জন্য।
- গাইরুল্লাহর কর্তৃত্ব উৎখাত করার জন্যে।
★ ভালো লেখক হতে হলে -
- চিন্তাগত পরিশুদ্ধি অর্জন করা / নির্ভেজাল ইসলামি চিন্তার অধিকারী হওয়া।
- ভালো পাঠক হওয়া।
- তৃতীয় নয়নে পড়া ।
- গঠনমূলকভাবে পড়া/ গঠনমূলক পাঠাভ্যাস।
- ভালো এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের লেখা পড়া।
- নোট রাখা বা নোট করে পড়া।/ গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো নোট করা ।
-কোনো চিন্তা মাথায় উঁকি দিলে তা টুকে রাখা, যেনো পরবর্তীতে সময় ও সুযোগ হলে উক্ত টপিকে সুন্দর ও সুবিন্যস্তভাবে লেখা যায়।
- অল্প হলেও প্রতিদিন কিছু লেখালেখির অভ্যাস গড়ে তোলা ।
- জটিল এবং কঠিন বিষয় দিয়ে লেখালেখির ময়দানে না নামা। বরং সহজবোধ্য, জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়-আশয় নিয়ে লেখা শুরু করা
- আকর্ষণীয়ভাবে শুরু করা।
- বানান নির্ভুল করার চেষ্টা করা। ( সঠিক এবং শুদ্ধ বানান শেখা )
- নিজের লেখা নিজেই কয়েকবার পড়ে নেওয়া। সম্পদনা করা।
- একটা তাগিদ, আহ্বান বা প্রশ্ন রেখে শেষ করা।
- গল্প-উপন্যাসের ক্ষেত্রে কাহিনির দিকে বেশি নজর দেওয়া ( ব্যাকরণের চেয়েও বেশি )
- টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক করা। ( কাদের উদ্দেশ্যে লিখবেন, কোন বিষয় নিয়ে লিখবেন, সেটা নির্ধারণ করা। )
- শৈল্পিক সৌন্দর্যের দিকে খেয়াল রাখা / সুন্দর সুন্দর শব্দচয়ন । গোছানো বাক্যগঠন।
- উপমা-উদাহরণ দিয়ে লেখা ।
- অন্য কারো স্টাইল নয়, নিজের স্বতন্ত্রতা তৈরি করা ।
- লেখকের সমালোচনা হবে। এক্ষেত্রে সমালোচনা হজম করার মতো মন-মানসিকতা রাখা ।
- ত্যাগ তিতিক্ষার মনোভাব রাখা।
- ডিফেন্সিভ নয়, অফেন্সিভ লিখুন। বাতিল মতাদর্শ আর ভুল চিন্তার ব্যবচ্ছেদ করুন।
- নিরিবিলি পরিবেশে লেখতে বসা।
- মানুষকে নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া ।
- পরকালে নাজাতের আশা নিয়ে লেখা ।
★ শেষ কথা :
লেখকের শক্তি অন্যান্য অনেক শক্তি থেকে বেশি। লেখকের কলমের ওপর ভর করেই আসে বিপ্লব। বিপ্লবের বুনিয়াদ লেখক-গবেষক-চিন্তকরাই তৈরি করেন। যার কারণে যুগে যুগে লেখকদেরকে নানাবিধ হুমকি-ধামকির মুখোমুখি হতে হয়েছে। জেলের কনডেম সেল থেকে শুরু করে ফাঁসির রজ্জুকেও গলায় বরণ করতে হয়েছে। পৃথিবীর সবকিছুই একদিন হারিয়ে যায়। শক্তিমান লেখক কখনো হারান না। তাঁদের তৈরি করা বুনিয়াদের ওপরই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পথ চলার স্বপ্ন দেখে। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবার প্রবর্তনা পায়। তাই আসুন, আমরাও আগামী বিপ্লবের ইশতেহার রচনার জন্যে কলম হাতে তুলে নিই। আল্লাহর কালামকে বিজয়ী করতে, আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে এরপক্ষে ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে কলমের জিহাদে নেমে পড়ি। চেষ্টাটা আমাদের, বিজয়ের মালিক তো কেবল মহান আল্লাহ।
~ রেদওয়ান রাওয়াহা
মন্তব্য: ০