Alapon

দুনিয়াবি দক্ষতার মূল্যায়ন এবং কিছু কথা...



সূরা ইউসুফে দেখি ইউসুফ (আ) দাস হয়ে বিক্রিত হন। বিক্রিত হিসেবে মন্ত্রীর কাছে দাস হয়ে যান।

মন্ত্রী নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ই তাঁর ভেতরে কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন। সেকারণে তাকে ভবিষ্যতের জন্য উপকার হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি; এমনকি তাদের পালক পুত্র করারও চিন্তা করেন। তো, ইউসুফ (আ) এর আদব, ভদ্রতা ও প্রজ্ঞার কারণে দাস হয়েও, এসব গুণের কারণে তিনি ভালো অবস্থানে থাকার জায়গা করে নেন। এসব গুণ ও দক্ষতা একজন মানুষকে উপরের অবস্থানে, উন্নত অবস্থানে নিয়ে যায়। চিন্তা করুন, একজন দাস, যে কিনা মালিকের কাজের জন্য কেনা হয়, তাঁর কি আশ্চর্য গুণের কারণে মালিকই তাকে পালক পুত্র হিসেবে নিবেন ভাবছে! এ থেকে বুঝতে পারি যে মানুষের ভালো গুণ ও উচ্চ দক্ষতা থাকলে সে জীবনে উন্নতি করবেই।

এরপর তিনি মন্ত্রীর বাড়িতে বড় হতে থাকলেন। এই বড় হওয়ার মাঝে তার গুণেরও নিশ্চয় প্রকাশ ঘটতে থাকলো। ফলে, মন্ত্রী অনেক কাজেই ইউসুফ (আ) কে দায়িত্ব দিয়েছেন যেন মন্ত্রীকে ওসব কাজে না যেতে হয়। তিনি যেন মন্ত্রী অবর্তমানে মন্ত্রীর কাজই আঞ্জাম দেন। অর্থাৎ উনার দক্ষতার জ্ঞান মন্ত্রী পর্যায়ে চলে গেছে।

একজন মন্ত্রীর আবার অনেকগুলো দাস থাকে। তো, তাদেরকে কাজের আঞ্জাম দিতে হয়, হুকুম পালন করতে হয়। তাদেরকে ব্যবস্থাপনায় রাখতে হয়। তাদের মাঝে অনেক বিষয় ভাগ করে দেওয়া, কোনো কাজের ক্ষেত্রে পরামর্শ লাগলে মন্ত্রী ইউসুফ (আ) কে দায়িত্ব দিতেন সেই কাজের পরামর্শক হিসেবে। তো, তাঁর দ্বীনি সততা ও দুনিয়াবী দক্ষতার ভিত্তিতে দাসদের মাঝেও অনেক ভালো অবস্থান নিশ্চিত করেন তিনি।

দুনিয়া চলে অর্থনীতির উপর ভর করে। সেই অর্থনীতি চলে মানুষের দক্ষতা-নির্ভর কাজ দিয়ে। এই দক্ষতার ক্ষেত্রে যারা ভালো, তারা দুনিয়াতেও ভালো অবস্থান তৈরি করে নেয়। আর এই দক্ষ লোকেরা কোনো ভালো সুযোগ পেলে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উন্নতি করে।

ইউসুফ (আ) শূন্য হাতে এসেছিলেন। আল্লাহর দ্বীন পালন করতেন, তাওহীদের প্রচার করতেন। আর দুনিয়াবী দক্ষতায়ও সেরা হওয়ার চেষ্টা করতেন। ফলে, ধীরে ধীরে জামাকাপড়হীন দাস হয়ে উঠতে থাকেন সমাজ ও রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে। এসই হয়েছে তাঁর দ্বীনি সততা ও দুনিয়াবী দক্ষতার সমন্বয়ে।

দুনিয়াতে উন্নতি চাইলে দক্ষতা অর্জন করুন। দুনিয়াতে হালাল কামাইয়ের জন্য কাজ শেখা, দক্ষতা অর্জন করা—এগুলোও দ্বীনি বিষয়। যেই ইউসুফ (আ) এর নিজের জামাকাপড় পর্যন্ত ছিলো না, একজন দাস হিসেবে বিক্রিত হোন, তিনিই কিনা দুনিয়াবী অর্থনীতিতে দক্ষতার জন্য, সততা দিয়ে কাজ করে সমস্ত মিশর রাষ্ট্রের সকল মানুষের উপকার করলেন, একটি রাষ্ট্রকে পতনের হাত থেকে বাঁচিয়ে সেসময়কার সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্রের জায়গায় নিয়ে গেলেন!

- নোমান আলী খান

পঠিত : ২৫২ বার

মন্তব্য: ০