Alapon

বৃষ্টির দিনে



১.
এমন এক বৃষ্টির দিনে কোনো এক সমুদ্রের সামনে দাড়িয়ে আনমনে নিজে গান গাওয়ার মধ্যে আধ্যাত্মিক সুখ লুকিয়ে আছে। তবে সমুদ্রের পাশ ঘেঁসে পাহাড় থাকা আবশ্যক। যাকে বলে সমুদ্রের বুকে মাথা উঠিয়ে দাঁড়ানো। কিছু সময় থাকে যা সব সময় সবার সাথে ভাগ করে নেওয়া যায় না৷ কিছু সময় নিজের জন্য ও বরাদ্দ রাখা উচিত।

"কোনো এক বাদলা দিনে আমি তোর ছাতা হবো
রাজি তুই থাকলে পরে প্রনয়ের কথা কবো ।।
রিমঝিম বৃষ্টি ফুটায় বৃষ্টি রাখবো ধরে
কাজলে লেপটে যাবো দুচোখের মিষ্টি ঘোরে ।।
তুই যদি হোসরে আমার....."

আবু ওবায়দার গান গুলো সব সময় ই আমার কাছে পছন্দের তালিকায়। গান গুলোর মাঝে আলাদা একটা সুর টান কাজ করে। যার জন্য সব সময়ই মৃদু স্বরে শুনতে ইচ্ছে করে। তারপরও মাঝেসাঝে বিষণ্ণ ভায়োলিনের সুর বেজে চলে একটানা; এই বিষণ্ণতার উপশম হবে কেমন করে?

২.
ইদানিং একটা জিনিস দেখা দিয়েছে ধনী গরীব সবার মাঝেই বিরয়ানী রাজকীয় খাবার। পপুলারিজমের আওতায় এলেই সৌন্দর্যের দশা রসা হয়ে যায়। সেটা যতই ভালো খারাপ হক না কেন! আর বাঙালি মুল্লুকে বৃষ্টির দিন হলে কথায় নেই খিচুড়ি আর মাংস। এটাও যেন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে আমার বেলায় ভিন্ন। গ্রামীণ ঐতিহ্যে এখন ও বৃষ্টি হলে মোটা করে রুটি (অনেকে সেটা কালাই এর রুটি বা দাপড়া বলে) বানাতে থাকে। আর সাথে আস্ত কাঁচা ঝাল বাটা। অবশ্য আমার কাছে রাজকীয় খাবার বলতে মটরশুঁটি দিয়ে খিচুড়ি ,আলু ভর্তা আর একটা লেবু কুচি। এর থেকে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। আর এটা না হলে চাল ভাজার সাথে কাচা মরিচ আর সরিষার তেল। গল্পে গল্পে আসর জমে উঠে জম্পেশ। মাঝে সাঝে বড় রকমের পরিকল্পনা করি কিভাবে বৃষ্টির দিন আরও বেশি উপভোগ করা যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্য খুব একটা কাঠকর পুড়াতে হয় না। কয়েক জন মিলে নদীর ধারে মাছ মারলে পৈশাচিক আনন্দ পাওয়া যাবে। পৈশাচিক আনন্দ! কিন্তু দুঃখের কথা আমি মাছ ধরতে পারি না। সম্ভবত মাছ আমাকে খুব একটা পছন্দ করে না মানুষের মতো। মানুষ হিসেবে হয়তো খুব একটা ভালো না!

এবং পাশেই থাকবে পরিত্যক্ত কোনো বাড়ি। হ্যাঁ পরিত্যক্ত বাড়ি। পরিত্যক্ত বাড়ি হলেও জানালা গুলো থাকবে খোলামেলা। তবে কাচের জানালা হলে কোনো কথায় নেই। যখন বৃষ্টি পড়বে রেডিয়ান কোণে তখন ঘোলাটে কাচের জানালা তৈরি করবে এক অপার্থিব সুখ। হয়তো অর্গাজমের সুখের থেকে বেশি কিছু। সে-সব তো আমার নিছক ধারণা মাত্র। আর রুম গুলো থাকবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। মনে হতে পারে একটা মানুষের সুখ হয়েছে কত! সত্যি কথা বলতে আমার নিজের এলাকায় পদ্মা নদীর খাল সংলগ্ন এমন একটা বাড়ি আছে। ছবির মতো সুন্দর। যদিও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। করে নিলে সমস্যা কোথায়! সে যায় হোক সেখানে কিছু বইয়ের ব্যবস্থা থাকলে মন্দ হয় না। ছোটখাটো বন্দোবস্ত থাকা দূষণীয় নয়। আমোদ প্রমোদ এর ব্যবস্থা থাকলে ব্যাপার টা রাজকীয় পর্যায়ে দাড়ায়। সেক্ষেত্রে খুব একটা বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। এই যেমন ধরে নেন একটা মূদু সুরে কিছু একটা চলতে থাকবে। সেটা বাসিরা মিডিয়া হোক বা আবু উবায়দার গান। মূদু সুরে বাজতে থাকবে! মনে হবে দূর থেকে অজানা তরঙ্গ ভেসে আসছে। আর বৃষ্টির টিপটপ আওয়াজ। আর হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস। শরীর মন হিম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যাতে নিজের করোটিক স্নায়ু গুলো বর্তমানে ডুবে থাকে। সাথে গান টা অবিরাম দূরর থেকে ভেসে আসবেঃ–

"মুখোমুখি হতে যদি না পারিস
চোখে চোখে হয়ে যাবে সুপারিশ
একদম ভাববি না ভেবে ভেবে কাঁপবি না
রাতভর জাগবি না জেগে জেগে রাগবি না
দরকার হলে তুই আমাকে দুষিস।

কানেমুখে করে নিস আলাপন
বুকে চেপে রাখিস না জ্বালাতন
তোর চোখে কালি হলে বিছানায় বালি হলে
ঘর হবে নোংরাটে ঘামে ভেজা টি শার্টে
নির্গত হওয়া জল টিসুতে মুছিস।"

এমনি একটা দিন আরও দারুণ ভাবে ভাবা যেতে পারে। সেটা আপনার কল্পনাতে ভাসতে থাকছে হয়তো। না হলে গুনাহের কিছু নেই। বৃষ্টি নিয়ে এই মাদকতা কি আর কোথাও আছে?

৩.

এই তো কিছু দিন আগের কথা তখন এমন ও বৃষ্টির দিনে মানুষ ইনডোর গেমে মগ্ন থাকতো। লুডু, তাস,১৬ পার্ট, বাঘ বন্দী আর সাথে মচমচে মুড়ি ঝাল পেঁয়াজ আর সরিষার তেল। ভাবতেই মুখে পানি চলে আসছে। কিন্তু তার কিছুকাল পরেই তা কপচা করে নিল ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল। এখন সব কিছু হয়েছে নেট কেন্দ্রিক। গ্রামীণ ঐতিহ্যের পতনের শুরু তখন থেকেই। আধুনিকতার পথে আর এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া আর নিজেদের মধ্যে তৈরি হতে লাগলো আলাদা সংস্কৃতি। কি শিশু কি বুড়ো! আমি মনে করি আমাদের ছোট বেলা আরও বেশি উপভোগ করা যেত যদি সুন্দর সুন্দর বই পড়ার কেউ উপদেশ দিত! গল্পের বই। টেনিদা, ঘনাদা, ফেলুদা, তিন গোয়েন্দা! এখন ও কি সম্ভব তা? বৃষ্টি বেশি হলে আশে পাশের পুকুর গুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে যেত আর আমি কে কি করছে দেখার জন্য ছাতা মাথায় দিয়ে দিয়েছি দৌড়। আর বৃষ্টি বেশি হলে খাল বিলে নদীতে মাছ মারার প্রবনতা বেড়ে যেত। মাঝে মধ্যে আম্মু কড়া আদেশ অমান্য করে লুকিয়ে চলে যাওয়া ছিল একটা আর্ট। আর আম্মুর সামনে পরলে পিঠে মারের কেন ধরা বাধা সীমানা থাকত না। তারপরও ফাঁকি দিয়ে যাওয়া তো দোষের কিছু না। পৈশাচিক আনন্দ বলে কথা। মাঝে মধ্যে কাউকে মাছ ধরতে সাহায্য করেছি অনেক। এই তো।

এই তো সেদিনের কথা এক ভাইয়ের সাথে দেখা। মাস্টার্স শেষ এখনো ফেবু চালাই না। যত কাজ সব জিমেইল দিয়ে শেষ করে। এখন ও এমন কিছু এলিয়েনদের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে মাঝে সাঝে। অনেক জন কে চিনি আমি যারা এই ডার্কনেসের বাইরে। ছোট খাট বিষয়ে এদের আনন্দের সীমানা বাধ হারা। সম্ভবত এরা নং টার্ম ডোপামিনের নিঃসরণের খোঁজে। কি জানি! তাই হোক তাদের পৈশাচিক আনন্দ। তবে এই বৃষ্টির দিনে তারা রোমান্টিজম কি ভাবে উপভোগ করে তা জানার ইচ্ছা তীব্র। হয়তো আমিও একদিন ফেবু টেবু অফ করে মনের কায়েস মিটাবো।

৪.
আর শীতকাল হলে কাঁথা মুড়িয়ে টুশ হয়ে পড়ে থাকা। কিন্তু ঘুম থেকে উঠার পর আনন্দ নেই। একটা বিশ্রি ব্যাপার স্যাপার। অন্য ভাবে এখন থেকে চিন্তা করতে হবে। এখন থেকেই!

পঠিত : ৪৩৩ বার

মন্তব্য: ২

২০২২-১২-০৪ ১৮:০৯

User
রেদওয়ান রাওয়াহা

মা শা আল্লাহ ভাই। খুব দারুণ লিখেছেন। তবে পিকচারটা শুরুতেই আপলোড করলে ভালো হয়। এখন নিচে পড়ে গেছে।

submit

২০২২-১২-০৪ ১৮:৩৪

User
রাসেল আহমেদ :

ধন্যবাদ ভাইয়া। ঠিক করে দিয়েছি।

submit