Alapon

ওমর খৈয়াম : মধ্যযুগের মুসলিম দার্শনিক কবি ও গণিতবিদ



১.
গতকাল ৪ ডিসেম্বর ছিলো।  ১১৩১ সালের উক্তদিনে, বিখ্যাত মুসলিম কবি, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ওমর খৈয়াম ইরানে মৃত্যুবরণ করেন। এই বিশ্ব-সম্পদ মানুষটি ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ওমর খৈয়াম ছিলেন সুলতান মালিক শাহের সমসাময়িক। তিনি সুলতান সুলতান মালিক শাহের উপদেষ্টা ছিলেন। যুবক বয়সে তিনি সমরখন্দে চলে যান এবং সেখানেই শিক্ষাদিক্ষা গ্রহণ করেন।

২.
যেই মধ্যযুগকে ইউরোপীয়-পণ্ডিতগণ বর্বর, অন্ধকার যুগ; ইত্যাদি বলে চিত্রায়িত করে, তিনি সেই মধ্যযুগের প্রধান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন। ঠিক এভাবেই মধ্যযুগে খ্রিস্টীয় সভ্যতা যখন অজ্ঞতা আর বর্বরতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলো, তখন আমাদের মধ্যে তথা মুসলিম সভ্যতায় ওমর খৈয়ামদের মতো এমন  কিংবদন্তী বিশ্ববিশ্রুত প্রতিভার আগমন ঘটেছে।

৩.
ওমর খৈয়াম স্বাধীনভাবে গণিতের দ্বিপদী উপপাদ্য আবিষ্কার ও বীজগণিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করেন। সম্ভবত বিশ্ব-ইতিহাসে তিনিই প্রথম ও একমাত্র ব্যক্তি, যিনি গনিতের পাশাপাশি কবি হিসেবেও বেশ সুনাম,-সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।

৪.
ওমর খৈয়ামের কাজগুলোর সবই যে পজিটিভ বিষয়, তা নয়। তিনি নানাবিধ বিষয় আশয় নিয়ে কথা বলেছেন, কলম ধরেছেন যেগুলো ইসলামি চিন্তা ও আদর্শের সাথে যায় না। তাঁর বহু চিন্তার মধ্যে নাস্তিকতা ও অবিশ্বাসের বীজ রয়েছে। যার কারণে দেখবেন পশ্চিমারা ওমর খৈয়ামকে খুব বেশি না হলেও অন্যান্য কবি-দার্শনিকদের চেয়ে কিছুটা হলেও মর্যাদা বেশি দেয়। ইয়োরোপের রাষ্ট্র রোমানিয়ার বুখারেস্টে ওমর খৈয়ামের একটা ভাস্কর্যও আছে। ইংরেজভাষী দেশগুলোতে ওমরের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজও ইংরেজি ভাষী ব্যতিরেকে জালালুদ্দিন রুমির পর ওমরই সর্বাধিক জনপ্রিয়।( দ্যা ডেইলি স্টার-১৮ মে ২০২১)

তার বহু কবিতা ভোগবাদী জীবনের জয়গান গাইতো, কিংবা ভোগবাদিতাকেই উস্কে দিতো। যেমন দেখুন, নিম্নোক্ত এই কবিতাটি :

“নগদ যা পাও হাত পেতে নাও,
বাকির খাতা শুন্য থাক
দূরের বাদ্য লাভ কী শুনে,
মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক"

হ্যাঁ, এতোকাল ধরে এই চরণগুলোকে বাঁকা চোখেই দেখে আসছি আমরা। আর এই কবিতার স্রষ্টা হচ্ছে ওমর খৈয়াম।

যাই হোক, ওমর খৈয়াম একজন দার্শনিকও ছিলেন। তিনি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কী বলেছেন বা কী বুঝাতে চেয়েছেন, সেটা তিনিই বেশি ভালো জানেন। কিন্তু এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, এগুলো ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব একটা যায় না।

ওমর খৈয়ামের কবিতা সমগ্রকে বলা হয় "রূবাইয়াৎ"। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও ওমর খৈয়ামের অনেকগুলো কবিতা অনুবাদ করেছেন।

৫.
আমরা বাংলায় একটা কথা বলি, সেটা হচ্ছে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। সে হিসেবে কবি ওমর খৈয়ামের শেষটা খুব ভালোই ছিলো। জীবনের যবনিকাপাত ঘটার সময়টার দিকে দৃষ্টিপাত করলে বলতেই হবে যে, তিনি  এক মহা-সৌভাগ্যের অধিকারী মানুষ, কারণ তাঁর জীবনের যবনিকাপাত ঘটে সালাতুল এশা আদায়কালে। সিজদাহরত অবস্থায়। আল্লাহ এই মহা-মনীষীর আখেরাতের জীবনকে নান্দনিক করে দিন। তাঁর ভুলভ্রান্তিগুলো আল্লাহ ক্ষমা করে দিন। তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে রাখুন। আ-মী-ন!


~ রেদওয়ান রাওয়াহা
https://t.me/RedwanRawaha

পঠিত : ৩১৮ বার

মন্তব্য: ০