Alapon

ইসলামী ব্যাংক কেন সেরা ব্যাংক : স্মৃতিতে মরহুম মুহাম্মদ ইউনুছ


ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার পেছনে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে, ঘাম, শ্রম আর মেধার সবটুকু যারা এ ব্যাংক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পেছনে ব্যয় করেছেন তাদের একজন হচ্ছেন মরহুম মোহাম্মদ ইউনুছ। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তার ভূমিকা অনন্য। যিনি নিজের ভাগ্য গড়ার চেয়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবন মান উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। ছিলেন একজন ওভারসিজ ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রবাসীরা। প্রবাসীদের বড়ো অংশটি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদী আরবে ১৯৭৫ এর ব্যাপক হারে বাংলাদেশী নাগরিকদের যাওয়া শুরু হয়। প্রচুর পরিমাণে ভিসা আনা এবং শুধুমাত্র নামমাত্র খরচে বাংলাদেশী বেকার যুবকদের সৌদী আরবে কর্মসংস্থানের জন্য পাঠাতে মরহুম ইউনুছ এককভাবে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা অন্য ঐ সময়ের আর একশত জনের সমান হবে কি না সন্দেহ। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতাদের যে কয়জনের নাম সবার আগে চলে আসে তার মধ্যে মরহুম মুহাম্মদ ইউনুছ অন্যতম। ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচলাক এবং বেশ কয়েকবার ইসি চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাংকের উদ্যোক্ত পরিচালক হিসেবে জীবনে কখনো ঘূর্ণাক্ষরেও কোনো প্রকার অন্যায় সুবিধা তো দূরের কথা স্বাভাবিক সূযোগগুলো পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে নিজের পরিবার আত্মীয় সজন কাউকে অন্যায়ভাবে ব্যাংকের কেনো সূযোগ সুবিধা পাইয়ে দেননি। তার দু ছেলের একজন একটি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক আর একজন সম্ভবত ইসলামী ব্যাংকে চাকুরী করে। তাকেও ইন্টারভিউ দিয়ে চাকুরী নিতে হয়েছে। আত্মীয় সজন কাউকে ডিরেক্টর করা কিংবা মোটা দাগে অথবা ছোটো পরিমাণে কোনো প্রকার বিনিয়োগ দিয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারবে না। বাংলাদেশের সৎ ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠন করেছিলেন মুসলিম বিজনেসম্যান সোসাইটি। পরবর্তীতে এটির নাম এখন বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। ঢাকা শহরের হত দরিদ্র মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্টিত ইসলামী সমাজ কল্যাণ সমিতি-মিরপুর এর দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন। ইসলামী সমাজ কল্যাণ সমিতি ঢাকা এর আশে পাশে অসংখ্য স্কুল, মাদারাসা, ,মসজিদ, মক্তব, দাতব্য চিকিৎসালায় প্রতিষ্ঠা করেছে। মানবতার কল্যাণেই যিনি তার জীবন ব্যয় করেছেন। ব্যাংকের উদ্যোক্তা হিসেবে তার ছিলো না কোনো আভিজাত্য। অথচ সারাক্ষণ ব্যাংকের উন্নয়ন আর অগ্রগতি নিয়েই চিন্তা করতেন। মানবতার দরদী এই মহান ব্যাক্তিত্ব পৃথিবীর যে দেশেই গিয়েছেন সেখানে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে তার প্রোগ্রাম থাকতো। ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক বৃদ্ধি। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানো, ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার বৃদ্ধি এ কাজে অহর্ণিষ ছুটে বেড়িয়েছেন। এই মহান ব্যক্তিত্ব ২০০২ সালে ইন্তেকাল করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার নামাজে জানাজা অনুষ্টিত হয়। তার ইন্তেকালের পর একটি স্মারক প্রকাশিত হয়। স্মারকে মরহুমের বড়ো ছেলের একটি লেখায় মরহুমের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে লিখেন ‘‘বাবার ধ্যান-জ্ঞান ছিল ইসলামী ব্যাংক নিয়ে। বাসায় একটি বোর্ড ছিলো প্রতিদিন ব্যাংকের মোট টার্ণ ওভার, রেমিটেন্স আহরণ, প্রতিদিনের গ্রোস প্রবৃদ্ধি লিখে রাখতেন। ব্যাংকের হেড অফিস হতে জানাতে ভুলে গেলে নিজে ফোন করে জেনে নিতেন। অনেক সময় ব্যাংকের কাজে এতো ব্যস্ত থাকতেন যে পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে পারতেন না’’ এই নিরলস মানুষগুলো ভোগবাদী দুনিয়ার আলোর ঝলকানিকে জীবনের লক্ষ্য বানানি। পার্থিক স্বার্থ হাসিল কিংবা এর মাধ্যমে বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়া তাদের স্বার্থ ছিলো না। ইসলামী শরীয়াহ প্রতিপালন, সূদমুক্ত অর্থনৈতিক লেনদেন নিশ্চিৎকরণ এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাড় করানোর প্রচেষ্টায় তারা জীবনের সবটুকু ব্যয় করে গেছেন। যার কারণেই ইসলামী ব্যাংক সেরা ব্যাংক হতে পেরেছে। যারা এমন সততা আর নির্লোভ জীবনের বিনিময়ে এমন একটি সুন্দর ব্যাংক জাতিকে উপহার দিয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্মেও হাতেই এ ব্যাংক নিরাপদ থাকতে পারে। কোনো লুটেরা কিংবা ডাকাতের হাতে এ ব্যাংক মানায় না।
(দুঃখিত বহু চেষ্টার পরেও মরহুম মোহাম্মদ ইউনুছের কোনো ছবি সংগ্রহ করতে পারি নি)

পঠিত : ২৫৬ বার

মন্তব্য: ০