Alapon

শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই এবং কিছু কথা...



আমি আপনাদের সামনে খুব সুন্দর একটি লেখা পড়তে চাই। শাকিক (র) এর মন্তব্য। আলোচ্য আয়াত সম্পর্কে তিনি এই মন্তব্যটি করেন। আমি আপনাদের সামনে তা পড়তে চাই।

প্রতিদিন সকালে শয়তান চতুর্দিক থেকে আমাকে আক্রমণ করে। সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। সামনের দিক থেকে এসে সে আমাকে বলে, "ভয় পেয়ো না। যা করতে চাও করে ফেলো। যে তাড়নাই অনুভব করো, যে প্ররোচনাই মনে মধ্যে আসে করে ফেলো। কেন তুমি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে যাচ্ছ? জানো না আল্লাহ্‌ হলেন পরম করুণাময়? যা উপভোগ করতে চাও, করো। কোনো সমস্যা নেই।"

আমি তখন সূরা ত্বহার একটি অংশ তিলাওয়াত করে তাকে জবাব দিই। যেখানে আল্লাহ্‌ বলেছেন: وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ - "আমি অবশ্যই বার বার ক্ষমা করি। যে তাওবা করে বা অনুতাপ করে। যে সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে...।" (২০:৮২) অর্থাৎ, মন যা চায় তাই করো না এবং তারপর বল যে, আল্লাহ্‌ ক্ষমা করেন।

আল্লাহ্‌ বলছেন আমি ক্ষমা করি তাকে যে সঠিক কাজ করে। তাকে নয়, যে মন যা চায় তাই করে তারপর বলে, আল্লাহ্‌ ক্ষমা করেন। কারণ, শয়তান তাকে কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়েছিল। তাই না? শয়তান তাকে বলতো, আল্লাহ তো বলেছেন তিনি ক্ষমা করেন। তিনি তাকে বললেন, না। তুমি আল্লাহর কথা উদ্ধৃতি দিচ্ছ কিন্তু তোমার নিয়ত ভালো নয়। তো তিনি বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ কী বোঝাতে চেয়েছেন। আর তাই, তিনি শয়তানকে সঠিক আয়াত দিয়ে জবাব দিলেন।

অতঃপর তিনি বলেন, এরপর সে পেছন দিক থেকে আমাকে আক্রমণ করে। সে আমাকে ভয় দেখায়— "আমার মৃত্যুর পর আমার সন্তানেরা আর্থিক দুর্দশায় পতিত হবে। আমার সন্তানদের জন্য তো আমার কাছে যথেষ্ট টাকা নেই। আমার মৃত্যুর পর তাদের কী হবে। কিভাবে তাদের স্কুলের খরচ চলবে, কিভাবে তাদের জীবন চলবে, ইত্যাদি।” তখন আমি তিলাওয়াত করি- وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا - "যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর।" (১১:৬) তাই, আল্লাহ্‌ যদি পিঁপড়ার কথা, পাখির কথা, পোকামাকড়ের কথা, মাছের কথা না ভুলেন— কিভাবে তিনি আমার সন্তানদের কথা ভুলে যাবেন। সুতরাং, এভাবে আমি তাকে আল্লাহর কথা দিয়ে জবাব প্রদান করি।

আর ডান পাশ থেকে সে এভাবে আসে— সে আমার কাছে এসে আমার প্রশংসা করার চেষ্টা করে। "আজকে তুমি কতগুলো ভালো কাজ করে ফেলেছ! কি চমৎকার এক নামাজ আদায় করেছো! বাহ! কুরআন তিলাওয়াতও দারুণ হয়েছে! এটা করেছো, ঐটা করেছো। ওহ! তুমি দানও করেছো! দেখো, তুমি মানুষকে কতভাবে সাহায্য করো। দেখেছ, তুমি কত ভালো!!" ইত্যাদি ইত্যাদ। সে চায়, আপনি যেন আপনার ভালো ভালো কাজগুলো নিয়ে বেশ গর্ব অনুভব করেন। তার ডান দিকের আক্রমণের আলোচনায় আমরা এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তখন আমি তিলাওয়াত করি—تِلۡكَ الدَّارُ الۡاٰخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِيۡنَ لَا يُرِيۡدُوۡنَ عُلُوًّا فِى الۡاَرۡضِ وَلَا فَسَادًا​ ؕ وَالۡعَاقِبَةُ لِلۡمُتَّقِيۡنَ‏ - "সেই আখিরাতের ঘর আমি তাদের জন্য করেছি যারা পৃথিবীর বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম শুধু তাদের জন্য যারা নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয়।" (২৮:৮৩) অর্থাৎ, যারা নিজেদেরকে নিজেদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এটা থেকে রক্ষা করুন।

আর যখন সে বামদিক থেকে আসে, সে আমাকে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার দিকে প্ররোচিত করে। তখন আমি তিলাওয়াত করি- وَحِيلَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ مَا يَشْتَهُونَ - “তাদের এবং তাদের কামনা-বাসনার মাঝে রেখে দেয়া হবে এক প্রাচীর।” (34:54)
অতএব, এভাবে তিনি আল্লাহর বাণীর সাহায্যে নিজেকে শয়তানের চতুর্মুখী আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেন।

উপসংহারে এসে, আমি আপনাদের সাথে এ কথাটিই শেয়ার করতে চাই। শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদের একমাত্র রক্ষাকর্তা হলো আল্লাহ্‌। আর আল্লাহর সাথে আমাদের সংযোগটা একটা দড়ি দিয়ে। আর সেই দড়িটি হলো কুরআন। আল্লাহ্‌ বলেন- وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا - "এই বইটি ছাড়া তোমরা আরও কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবে না।" (১৮:২৭) তোমরা আর কোনো নিরাপত্তা পাবে না, আর কোনো প্রটেকশন পাবে না।

তাই আমি চাই, শয়তানের বিরুদ্ধে আপনার এই লড়াইয়ের ব্যাপারে একটি বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন। এই আক্রমণ সামনে থেকে হোক, পেছন থেকে হোক, ডান বা বাম পাশ থেকে হোক, এটা কোনো ব্যাপার না, সে যে দিক থেকেই আক্রমণ করুক না কেন, সে সফল হবে যদি আপনি আকাশ থেকে আশা দড়িটি শক্তভাবে আঁকড়ে না ধরেন। শয়তান সফল হবে যদি কুরআন দৃঢ়ভাবে ধারণ না করেন, যদি আল্লাহর কালাম অধ্যয়ন না করেন, আল্লাহ্‌ আমাকে আপনাকে কী বলছেন তা নিয়ে যদি চিন্তা না করেন।

আমাকে আপনাকে বুঝতে হবে যে, এই বই এসেছে আমাদেরকে আমাদের চরম শত্রু থেকে রক্ষা করার জন্য। আল্লাহর বাণী ছাড়া শয়তান থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।

- নোমান আলী খান

পঠিত : ৪৭৮ বার

মন্তব্য: ০