Alapon

আর্জেন্টিনা কি পারবে বিশ্বকাপ জয় করতে...?



২০১০ থেকে ফুটবল বুঝা ও দেখা শুরু। তখন খাসের হাট সানা উল্যাহ ডুবাইওয়ালার বাসায় ভাড়া থাকতাম। অতোটা ক্রেজ না থাকলেও মেসির দলের খেলা দেখতে মুখিয়ে থাকতাম। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে হারার পরেও কেন জানি দলটার মায়ায় আটকে যাই। মেসি, তেভেজ, মাশ্চেরানো, ডি মারিয়া, হিগুয়েইন, ভেরন, মিলিটো, রোমেরোর দলবদ্ধ নান্দনিক খেলায় আকৃষ্ট না হয়ে উপায় ছিলো না। সেই থেকে আর্জেন্টিনার হয়ে পথচলার শুরু।

শুরু হলো রাত জেগে চুরি করে বার্সেলোনার খেলা দেখা। ক্লাস এইটে আম্মা ডিশ কেটে দিছিলো পরীক্ষার আগের মাসে। যেদিন বার্সেলোনার খেলা থাকতো, সেদিন রাত ২ টায় আম গাছ বেয়ে ছাদে উঠতাম। পকেটে একটা এন্টিকাটার। ছাদের উপর দিয়ে ডিশ লাইনের ক্যাবল নেয়া হইছিলো। কালো ক্যাবলের উপরের প্লাস্টিকটা কেটে ফেলতাম যাতে তামার তারটা বের হয়। আমার কাছে একটা ১৫/২০ হাত ডিশের ক্যাবল ছিলো। সেটার একমাথা তারে জুড়ে দিয়ে অন্য মাথা রুমের ভিতর ফেলে দিতাম। এরপর খেলা শেষ করে আবার খুলে ফেলতাম। কাটা জায়গাটা টেপ দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে দিতাম যাতে কেউ না দেখে। এভাবে প্রায় বছরখানেক খেলা দেখি আমি। কতোবার যে ওই একই জায়গায় ডিশের তার জোড়া দিছি, তা আল্লাহ মাবুদই ভালো জানেন। কি সময় ছিলো তখন! মেসির সেরা সময়, আমাদের চোখের শান্তি। মেসি, জাভি আর ইনিয়েস্তা। কি দারুণ প্লে মেকিং, কি দারূণ সৌন্দর্য।

এরপর আসলো ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ। প্রিয় দল আর্জেন্টিনা দেখতে দেখতে ফাইনালে। তারউপর প্রতিপক্ষ দল, চিরশত্রু ব্রাজিল সেমিতে ৭-১ গোলের জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত। খুব নেচেছিলাম সেবার ব্রাজিলের হারে। বেটারা খেলা পারে না, গোল খায় ৭ ডা, আবার আসে ৫ টা কাপের গল্প শুনাইতে, সাথে আবার হেক্সা মিশন! ???? হোয়াটএভার, ফাইনালে উঠেও কপালগুণে কাপের দেখা পেলাম না। হতাশ করলো লিওনেল আন্দ্রেস মেসির সতীর্থরা। এ যেন মেসির হাত ছুঁয়ে বিশ্বকাপ বেরিয়ে যাওয়া। তবু ঝুলিতে ছিলো অনেক কিছু। বিশ্বসেরা ফূটবলার, ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকরের বার্সেলোনায় কাটানো সোনালী দিনগুলির সাক্ষী হওয়া কম কিছু নয়। সেই মেসি ছিলো দুর্বার, ক্ষীপ্র, অপ্রতিরোধ্য, প্রতিপক্ষ দলের ত্রাস। সেই মেসির খেলা না দেখে, মেসির সক্ষমতা না বুঝে যারা এখন মেসিকে নিয়ে ট্রল করে তাদের নিয়ে কি আর বলবো! আপনি যদি ফুটবলকে ভালোবাসেন, যে দলের ই হোন না কেন, মেসিকে ভালোবাসতে বাধ্য আপনি। হোয়াটেভার, ওই সময় থেকেই ব্রাজিলিয়ান কিছু খেলোয়াড় কে অনেক ভালো লাগতো।

নোকিয়া ২৭০০ ক্লাসিক ফোনটাতে ইউটিউবে খুঁজে খুঁজে কাকা, রোনালদিনহো, রবার্তো কার্লোস, রোনাল্ডোর খেলা দেখতাম। নেইমার বার্সায় আসার পর ওর খেলাও নিয়মিত দেখতাম। গুরু মেসির শিষ্য নেইমারের ড্রিবলিং স্কিল ভাল্লাগতো, তবে যারা মেসির খেলা দেখে অভ্যস্ত, তারা জানে মেসি কি জিনিস। আপনি যদি নেইমারের ড্রিবলিং স্কিল, কার্লোসের ফ্রি কিক স্কিল, জিদানের পেনাল্টি টেকিং স্কিল, মুলারের প্লে মেকিং স্কিল, ক্রিস্টিয়ানোর ক্ষীপ্রতা একসাথে মিলান, তাহলেও মেসিকে বুঝতে পারেন হয়তো। মেসির তুলনা হতে পারে কেবল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দ্রুতগামী দানব ক্রিশ্চিয়ানোর সাথে, যদিও তুলনায় যাওয়া ঠিক নয়, দুজনই দুজনের দিক থেকে সেরা।

পরের বছর ২০১৫ তে কোপা জয়। নিজ চোখে দেখা আর্জেন্টিনার প্রথম কোন কাপ। ব্যাক টু ব্যাক ২০১৬ এর কোপা জয়। আর্জেন্টিনা তখন ছন্নছাড়া উড়তেছিলো। সাথে আমরা সাপোর্টাররা। এরপর আবার ভাটা। কত শত ট্রলের শিকার প্রিয় দল। ২০১৮ এর বিশ্বকাপে আবার কোয়ার্টার থেকে বিদায়। ফ্রান্সের সাথে ৪-৩ গোলে হেরে কান্না করেনি এমন দর্শক কম ই ছিলো। চুয়েট ক্যাম্পাসের নর্থ হলের ডাইনিং এ দেখা সেই ডি মারিয়ার গোল এখনো চোখে ভাসে।

এর পরের কোপা অবশ্য ব্রাজিলের। ব্রাজিলের সাথে হেরে আর্জেন্টিনার কোপামঞ্চ হতে বিদায়। দলের এই করূণ অবস্থায় হাল ধরলেন স্কালোনি। ফলাফল, ২০২১ এ ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা ঘরে তোলে মেসিবাহিনী। এরচেয়ে বড় আনন্দ কি হতে পারে! কি যে নাচা নাচছিলাম সেদিন। ব্রাজিলকে এক হাত দেখে নেয়ার আনন্দে। আমি ভাই যতোদিন ধরে খেলা বুঝি, ভালোবাসি, আমার কাছে আর্জেন্টিনাই সেরা টিম, মেসি ই সেরা ফুটবলার। এর আগে কুয়াত্তর সনে কে কয়ডা কাপ জিতছিলো, এসব গুনার টাইম ও নাই ????

এরপর মেসিবাহিনীর লক্ষ্য ২০২২ এর বিশ্বকাপ। ব্রাজিল বরাবরের মতোই ছিটকে গেলো কোয়ার্টার থেকে। আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আর দুইটা পরীক্ষা বাকি। যদি উৎরে যেতে পারি, আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে সবচেয়ে বড় ইতিহাসের সাক্ষী হবো। আর হেরে গেলেও বা ক্ষতি কি! ২০১০ থেকে এই পর্যন্ত যতোদিন খেলা দেখেছি বেশিরভাগ সময় ব্রাজিলের চেয়ে একধাপ এগিয়ে ছিলো মেসির আর্জেন্টিনা। এটাই আমার সমর্থনের স্বার্থকতা, দলকরণের স্বার্থকতা। আমি গর্বিত, আমি একজন মেসি ভক্ত এবং আর্জেন্টাইন ভক্ত। দ্যাটস ইট মাই লর্ড।

-

পঠিত : ২৪৭ বার

মন্তব্য: ০