Alapon

সরকার কি পুনরায় বিরোধী দলের আন্দোলন দমন-পীড়নের পথে হাটবে...?



বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুদিন ফিরিয়ে আনতে বিরোধী দলগুলোকে আবারও যুগপৎ আন্দোলনের পথে হাটতে হচ্ছে। স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের বিকল্প নেই। স্বৈরাচার এরশাদের সরকার পতনেও যুগপৎ আন্দোলন হয়েছিল। সেসময় দেশের সব দল একত্রিত হয়ে লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের পতন ঘটানো হয়েছিল।

যুগপৎ আন্দোলন সফল হবে কী?

আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় জোটের আন্দোলন শুরু হয় মূলত ২০১২ সালের নভেম্বর মাস থেকে। আর আন্দোলন শুরু হওয়া মাত্রই আওয়ামী লীগ সরকার দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলন দমন করেছে। আন্দোলন দমনের প্রয়োজনে তারা মিছিলে গুলি চালিয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে, গুম করেছে, হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে, কারও কারও বাড়িঘর ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ বাহিনী দিয়ে সারাদেশে গণগ্রেফতার চালিয়ে আন্দোলন দমন করা হয়েছে। এমন ভয়ংকর দমন নিপীড়ন চালানো কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তেমন একটা আন্দোলন করা সম্ভব হয়নি। তাই ২০১৫ সালের পর তেমন একটা সরকার বিরোধী আন্দোলন লক্ষ্য করা যায়নি।

২০২৩ সাল আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচন যেন ভোটারবিহীণ নির্বাচন হতে না পারে, রাতের আঁধারে ভোট হতে না পারে, সে জন্য বিরোধী দল বিএনপি এখন থেকেই আন্দোলন শুরু করেছে। সারাদেশের বিভাগগুলোতে সমাবেশের মাধ্যমে এই আন্দোলন শুরু হয়ে গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে গণমিছিলের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছে। এই গণমিছিলে সামিল হবে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। ধারণা করা হচ্ছে জাতীয় পার্টি এবং গুটি কয়েক বাম দল ছাড়া বাকি সব দল এই আন্দোলনে সামিল হবে। এই যুগপৎ আন্দোলন সফল হবে কি হবে না, তা নির্ভর করছে কর্মসূচির উপর। কর্মসূচি যদি গতানুগতিক হয়, তাহলে হয়তো সরকার আবারও পুরনো কায়দায় পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে দমন করার চেষ্টা করবে। যদি কর্মসূচিতে ভিন্নতা আসে এবং নেতারা মাঠে ময়দানে একটিভ থাকে, তবে এই আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকার কি আন্দোলন দমনের পথে হাটবে?


গদি বাঁচাতে সরকার অবশ্যই আন্দোলন দমন করতে চাইবে। কিন্তু ২০২২-২৩ সালে সরকার ঠিক পূর্বের মতো দমন চালাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, আমেরিকা RAB এর ৭ কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে তাদের আগ্রাসি কর্মকান্ড কমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয় গত বছরের ডিসেম্বরে। তারপর থেকে বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। শোনা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র নাকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কতক কর্মকর্তার নামে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে। আর ২৪ তারিখের গণমিছিলে যদি গুলি চালানো হয়, মানুষকে খুন করা হয়, তাহলে হয়তো এই নিষেধাজ্ঞা আরও ত্বরান্বিত হবে। ফলে সরকার আরও কোনঠাসা হয়ে পড়বে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের দমন নীতির সঙ্গি হিসেবে নাও থাকতে পারে।

আর এ কারণে আমার মনে হচ্ছে, সরকার আর পূর্বের ন্যায় দমন চালাতে পারবে না। অন্যদিকে সরকার তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের থেকেও খুব একটা সহায়তা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। এখন সরকারের বন্ধু হিসেবে রয়েছে একমাত্র চীন। চীনের সহায়তায় এখনও রাষ্ট্র ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৮ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে যে আমেরিকা ও ভারত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসলো, সেই আমেরিকা ও ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগ কতদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়!

পঠিত : ৩০৭ বার

মন্তব্য: ০