Alapon

"জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার শাহাদাতের ধারাবাহিকতা ও আজকের বাংলাদেশ"




মাদার অফ হিউম্যানিটি, এই যুগের রাবেয়া বসরী হজরত শেখ হাসিনা হাফেজাহাল্লাহ ও তার সৎ ও দুর্নীতিহীন রাজনৈতিক দল কর্তৃক জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ জামায়াত নেতা শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পূর্বে একটা উক্তি করেছেন তার দল ও পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে। আর সেটা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী যে কয়েকটি উক্তি কেয়ামত অবধি জীবন্ত হয়ে থাকবে, তারমধ্যে  অন্যতম। যেখানে তিনি বলেছেন,
"নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও শাহাদাতের দরজা বন্ধ হয়নি, খোলা রয়েছে।"

তিনি আরো বলেছেন যে,
জিহাদের ময়দানে না গিয়েও যদি শাহাদাত লাভ করা যায়, এরচেয়ে বড়ো সৌভাগ্য আর কী হতে পারে!


কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহ'র করা এই উক্তিটা প্রতিদিন পূবাকাশে সূর্য উদয় হওয়ার মতোই মহাসত্য। কিন্তু এই সত্যকে নতুন করে তুলে এনেছেন বা জীবন্ত করে বলেছেন হাসিনার সুশাসন আর মহানুভবতায় খুন হওয়া শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহই। আমার জানার গ্যাপ থাকতে পারে, তবে  তিনিই আমার জানামতে বাংলাদেশে প্রথম ব্যক্তি, যিনি বলেছেন, নবুওয়তের দরজা বন্ধ হলেও শাহাদাতের দরজা খোলা আছে। শুধু বাংলাদেশেই না, সম্ভবত হাল আমলের ইসলামি আন্দোলন ও ইসলামি ব্যক্তিত্বদের মধ্যেও প্রথম ব্যক্তি।

জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের কার্যক্রম কিংবা কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন বা ভিন্নমত থাকতেই পারে যে কারো, তবে এটা তো দিবালোকের মতো সত্য যে, একজন মুমিন নিজের জীবনটাকে জিহাদের উদ্দীপনায় পরিচালনা করার জন্য, বাতিলের মোকাবিলায় দৃঢ়তা প্রদর্শন করে ময়দানে অনড় অবিচল হয়ে টিকে থাকার জন্য এই অনুভূতির চেয়ে বড়ো অনুপ্রেরণা আর কিছুই হতে পারে না।

আসলে কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহর ফাঁসির পরপরই বাংলাদেশে এক নতুন মেরুকরণ ঘটে। এর একপক্ষে ছিলো বাংলাদেশের আপামর তাওহিদি জনতা, আর অপরপ্রান্তে ছিলো খোদাদ্রোহী বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতি বিরোধী নাস্তিক্যবাদী সেক্যুলার গোষ্ঠী।

যে জুলুম সরকার কাদের মোল্লা বা জামায়াতে ইসলামীকে দিয়ে শুরু করেছে, সেটার ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের ইসলাম ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী সকল দল-মত-আন্দোলনের ওপর গিয়ে পড়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির মাধ্যমে দল হিসেবে বিএনপির মধ্যেও অস্বাভাবিক বিবর্তন ঘটে। যে বিএনপি ছিলো ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটা দল, সেই বিএনপির মধ্যে হাজারো শাহাবাগীপনা চিন্তাওয়ালা নেতার উদ্ভব হয়। যুক্ত হয় তাদের কর্মকাণ্ডে শাহবাগীপনাও। এর প্রমাণ হচ্ছে শাপলা চত্বর আর শাহবাগের ঘটনা। বিএনপি কিন্তু শুরুতেই শাহাবাগীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেনি। এমনকী দৃঢ়চেতা বেগম জিয়াও পারেনি। কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদও এই শাহবাগীদের চাপে বা ভয়ে পড়ে করতে পারেনি তারা। অবশ্য যদিও পরবর্তীতে তারা শাহবাগীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হেফাজতের পক্ষেই দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এর পেছনে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা বা প্রভাব রেখেছেন বিএনপির বুদ্ধিজীবী, মজলুম সাংবাদিক, আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহেবই।

শাপলা ও শাহবাগের পরে ধীরে ধীরে মাহমুদুর রহমানের মতো ব্যক্তিদের প্রাধান্য বিএনপিতে কমতে থাকে। এমনকী কিছুদিন আগে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম চৌধুরী চট্টগ্রাম সমাবেশের মঞ্চে তার বাবার মতোই নারায়ে তাকবীর শ্লোগান দেয়। এ শ্লোগান দেওয়ার পরে বিএনপি বলা শুরু করে যে, এটা হুম্মামের ব্যক্তিগত শ্লোগান, দলীয় শ্লোগান নয়। এমনকী এও বলছে যে, বিএনপি শরীয়া আইনে বিশ্বাস করে না।

বলেছিলাম সরকার কাদের মোল্লা দিয়ে তার মিশন শুরু করলেও সেই মিশন থেকে বেগম জিয়াও বাদ যায়নি। তাকে এখনো বন্দী হয়েই কাটাতে হয় দিন।

ইসলামপন্থী ও আলিম-ওলামাদের কোনো পক্ষই সরকারের রোষানল থেকে বাদ যায়নি। মামুনুল হক সাহেব থেকে শুরু করে হেফাজতে ইসলাম বা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ওপর নিপীড়ন, মিথ্যা আর ভুয়া অভিযোগে অগণিত আলিম-ওলামাদের বন্দী ও নির্যাতন করা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রশাসন কর্তৃক পাখির মতো মাদ্রাসা ছাত্রদের খুন করা, বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিরীহ মুসল্লিদের গুলি করে শহীদ করা; সবকিছুই করছে তাহাজ্জুদের আউলিয়া হাসিনা। আর এগুলো সব একই সূত্রে গাঁথা। মানে কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহ'র ফাঁসির ধারাবাহিকতায়ই আরকি।

আজকে যে বাংলাদেশে একদলীয় স্বৈরাচারী আর বাকশালী শাসন চলে, এটাও সেটারই ধারাবাহিকতা। আজকের বাংলাদেশে যে হাসিনা ও তার সোনার ছেলে ছাত্রলীগের জুলুম-নিপীড়ন চলে; এগুলোর প্রধানত দায় হচ্ছে ওই নিকৃষ্ট বামপন্থী আর শাহবাগীদেরই। যদিও তারাও বাদ যায়নি হাসিনার নিপীড়ন থেকে থেকে। অথচ তারাই শাহবাগ সৃষ্টি করে হাসিনাকে আজকের অবস্থানে আনতে সাহায্য করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত একদিন লিখবো ইন শা আল্লাহ।

আল্লাহ শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাসহ সকল মজলুম শহীদদের জীবনের ভুলগুলো ক্ষমা করুন। বিশেষত শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা (রহ.)-কে ক্ষমা করে তাকে  জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে গ্রহণ করুন। আ-মী-ন!

~রেদওয়ান রাওয়াহা
https://t.me/RedwanRawaha

পঠিত : ৪২৬ বার

মন্তব্য: ০