Alapon

ফাঁসির পরও আবদুল কাদের মোল্লা জীবিত...!



বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১মিনিটে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কসাই কাদের হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ইসলামী নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ইন্না লিল্লাহ..রাজিউন।

তবে নিশ্চিত হওয়া গেছে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর এবং ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে মা-বাবার কবরের পাশে কবর দেয়া হলেও তিনি মারা যাননি। তিনি এখনো জীবিত আছেন।

কারাগার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মিত স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে তাকে ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয়। ফাঁসি দেওয়ার প্রায় ২০ মিনিট পর ১০টা ২১ মিনিটে তাকে নামানো হয়।
ফাঁসির আগে রাত ৯টার দিকে আবদুল কাদের মোল্লা গোসল করেন। এরপর সাদা পাঞ্জাবী ও পায়জামা পরে রাত সাড়ে ৯টায় তিনি নামাজ আদায় করেন। ১৫ মিনিট পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে কারা জামে মসজিদের ইমাম মনির হোসেন তাকে তওবা পড়ান।

সূত্র জানায়, তওবা পড়ার পর আবদুল মোল্লাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার আগে তার দুই হাত পেছনের দিকে নিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এর পর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় কালো রঙের জমটুপি। এই টুপি পরা অবস্থায় তাকে এক কারা রক্ষি ধরে নিয়ে যান ফাসির মঞ্চের দিকে। এ সময় ১০-১২ জন কারারক্ষী অস্ত্রসহ তাকে পাহারা দেন।

তখন ফাঁসির মঞ্চ ঘিরে ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কারা মহাপরিদর্শক মাঈন উদ্দিন খন্দকার, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল ইফতেখার আলম, উপ-কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শেখ ইউসুফ হারুন, জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী, কারাধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, ঢাকার সিভিল সার্জন আবদুল মালেক, কারা চিকিৎসক রথীন্দ্রনাথ শম্ভু ও প্রধান জল্লাদ শাহজাহান ভুঁইয়াসহ চার জল্লাদ।

সূত্র জানায়, রাত ১০টা ১মিনিটে জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী তার হাতে রাখা একটি লাল রুমাল মাটিতে ফেললে প্রধান জল্লাদ শাহজাহান ভুঁইয়া ফাঁসির মঞ্চের লিভার ধরে টান দেন। এতে আবদুল কাদের মোল্লার পায়ের তলা থেকে কাঠ সরে গেলে তিনি গলায় ফাঁসির দড়িতে আটক অবস্থায় প্রায় ২০ মিনিটি শূন্যে ঝুলে থাকেন।

রাত ১০টা ২১মিনিটের দিকে তাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামিয়ে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। এরপর ঢাকার সিভিল সার্জন আবদুল মালেক ও কারাগারের চিকিৎসক রথীন্দ্রনাথ শম্ভু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরপর রাত ১১টা ১৩ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আবদুল কাদের মোল্লার লাশ অ্যাম্বুলেন্সযোগে কড়া নিরাপত্তায় ব্যবস্থায় তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামের উদ্দেশে বের হয়ে যায়। রাত তিনটা ২৫ মিনিটে গ্রামের বাড়িতে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার লাশ গ্রহণ করেন ছোট ভাই ও ভাষানচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাঈনুদ্দিন মোল্লা।

রাত ৩টা ৪৮ মিনিটে বাড়ির আঙিনায় আবদুল কাদের মোল্লার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন ফরিদপুর ট্যাপাখোলা জামে মসজিদের ইমাম মওলানা আবু তালেব। পরে রাত সোয়া ৪টা পর্যন্ত তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এদিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত ও কবর দেয়ার পরেও আবদুল কাদের মোল্লা জীবিত আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পবিত্র কুরআনে বর্নিত মহান আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী তিনি জীবিত আছেন।

কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ ও ১৭০ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত, তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। আল্লাহ তাদেরকে যা দান করেছেন উহাতে তারা পরিতুষ্ট এবং তাদের পক্ষ হতে যারা পশ্চাতে থাকে তাদের সঙ্গে সম্মিলিত হয়নি, তাদের ভয় নেই ও তারা দুঃখিত হবে না।’

বিখ্যাত হাদীস সংকলন সহীহ মুসলিম শরীফে বর্নিত একটি হাদীসে আল্লাহর এ ঘোষণার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)।

তিনি বলেন, এ আয়াতের অর্থ আমরা নবী করীম (স.)-কে জিজ্ঞাসা করলে জবাবে তিনি বলেছিলেন: নিশ্চয় শহীদদের রূহগুলো সবুজ পাখিদের অন্তরে অবস্থান করে, তাদের জন্য আল্লাহর আরশ থেকে কতগুলো দীপাধার দান করা হয়েছে। তারা জান্নাতের ভেতরে যেখানে খুশি ভ্রমণ করে। তারপর দীপাধারগুলোর কাছে অবস্থান নিয়ে বিশ্রাম নেয়। তখন তাদের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামী বলেন,‘তোমরা আর কি চাও?’ তখন তারা জবাব দেয়, ‘আমরা আর কি চাইবো? আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ভ্রমন করে থাকি।’

আল্লাহ তাদেরকে পর পর তিনবার একই প্রশ্ন করবেন। তারা যখন দেখবে তাদেরকে এ প্রশ্ন বারবার করা হচ্ছে তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমরা এই ইচ্ছে পোষন করি যে আপনি আমাদের আত্নাগুলো পুনরায় আমাদের দেহে প্রবেশ করিয়ে দিন, আমরা যাতে পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে আবার আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হতে পারি।’

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন।
মৃত্যুদণ্ডের পর আবদুল কাদের মোল্লা বলেন, 'আমি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য টার্গেটে পরিণত হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

আমার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোন প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী প্রসিকিউশন হাজির করতে পারেনি। সম্পূর্ণ শোনা স্বাক্ষীর উপর ভিত্তি করে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন।

আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষণার পর সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠে। তাদের দাবিতে ১৮ ফেব্রুয়ারী আইন সংশোধন করে আমার শাস্তি বর্ধিত করার জন্য সরকার পক্ষ আপীল দায়ের করে।
নিম্ন আদালত মিথ্যা মামলায় আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে সে দণ্ড বৃদ্ধি করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।

সম্পূর্ণ শোনা স্বাক্ষীর উপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদান দুনিয়ার বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।

এই রায় বিস্ময়কর হলেও আমি এতে হতবাক হইনি। কারণ আমি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের কারণেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।

দুনিয়ায় যারা ইসলামী আন্দোলন করেছেন তাদের সবাইকে দুনিয়া থেকে উৎখাত করার নানামুখি ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এমনকি নবী-রাসূলদের উপরও চালানো হয়েছিল জুলুম এবং নির্যাতন। তাই ইসলামী আন্দোলনের পথ হচ্ছে রক্তপিচ্ছিল কন্টকাকীর্ণ।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবুওয়াতের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন কিন্তু শাহাদতের দরজা খোলা রেখেছেন। যতদিন ইসলামী আন্দোলনের পথে শাহাদতের ঘটনা ঘটবে ততদিন ইসলামী আন্দোলন বেগবান হবে।

আল্লাহ যাদেরকে চান, তাদেরকেই শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আমি যদি মহান আল্লাহর দরবারে শহীদ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হই, সেটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওনা। সুতরাং মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে আমি ভীত নই। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগে দুনিয়ার আদালত আমাকে শাস্তি প্রদান করে পরকালের আদালতে আমার ন্যয়বিচার প্রাপ্তির সার্টিফিকেট দিয়েছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা সকল অন্যায় ও বিভ্রান্তিকর বিচার থেকে মুক্তি দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ‘শেষ বিচারের দিনের’ কথা কোরআনে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আসল ফায়সালা হবে আখেরাতের আদালতে। আজকের বিচার সেদিন আমার মুক্তির কারণ হবে। মহান আল্লাহর কাছে আমি অবশ্যই সেদিন ন্যায়বিচার পাবো।

আমি কোন অপরাধ করিনি। মহান আল্লাহ গোপন, প্রকাশ্য সকল খবর রাখেন। কোন ব্যক্তিই আল্লাহর চোখে ফাঁকি দিতে পারবে না। যারা আমাকে মিথ্যা অভিযোগে হত্যা করতে চায়, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের ময়দানে তাদের বিচার করবেন। আমার জন্য আল্লাহর স্বাক্ষ্যই যথেষ্ঠ। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও এদেশের মানুষ একদিন মুক্তি পাবে। আল্লাহর দ্বীন এখানে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সকল জুলুমের অবসান ঘটবে। আমি মহান আল্লাহর কাছে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় কামনা করি।

আমি দেশবাসীর নিকট আমার সালাম জানাচ্ছি ও তাদের নিকট দোয়া কামনা করছি। দেশ ও জাতির এই কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য্য, সহনশীলতা ও সংযত আচরণের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমি আমার প্রিয় দেশবাসীর নিকট আহ্বান জানাই।
দুনিয়ায় না হলেও আখিরাতে আমার প্রিয় দেশবাসী, সহকর্মী ও আপনজনের সাথে সাক্ষাৎ হবে, ইনশাআল্লাহ।

- Khomenee Ehsan

পঠিত : ২৯৫ বার

মন্তব্য: ০