Alapon

কেমন হবে তোমার ট্যুর কিংবা ঘুরাঘুরি?

পাহাড়ী সবুজের গালিচা,শীতল পানির ঝর্ণা আর অন্তহীন সাগরের আঁচড়ে পড়া ঢেউগুলো দেখে কার কোমল মনে শিহরণ জাগে না বলো?এমন পাষান হৃদয়ও আছে নাকি হিমেল হাওয়া এসেও যাকে বিগলিত করে দিতে পারেনা!

জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষের অন্তর কখনো হয়ে ওঠে বিষাদময়,কখনো বা কৌতুহলী মন চায় মায়া জড়ানো ভুবনটাকে একটুখানি ঘুরে দেখি না!

মহান আল্লাহও চান, যেনো তাঁর বান্দারা ঘুরে দেখে তাঁর অসীম সৃষ্টিরাজি।অনুপম দৃশ্যগুলো দেখে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে বলেঃ-
‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি, আপনি অত্যন্ত পবিত্র।"(আলে ইমরান-১৯১)

আমাদের প্রিয় নবী,যিনি জীবনের সকল কাজে আমাদের আদর্শ,তার ভ্রমণ কি রকম ছিলো,তিনি কেমন করে সফর করতেন?

সহীহ মুসলিমে বর্ণনা এসেছে,ইবনু উমার(রা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথাও সফরের উদ্দেশে তাঁর উটে আরোহণের সময় তিনবার “আল্লাহু আকবার” (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলতেন, এরপর এই দু’আ করতেন :
سبحان الذي سخر لنا هذا وما كنا له مقرنين. وإنا إلى ربنا لمنقلبون ، اللهم إنا نسألك في سفرنا هذا البر والتقوى، ومن العمل ما ترضى، اللهم هون علينا سفرنا هذا، واطو عنا بعده، اللهم أنت الصاحب في السفر، والخليفة في الأهل، اللهم إني أعوذ بك من وعثاء السفر ، وكآبة المنظر، وسوء المنقلب في المال والأهل.
“পবিত্র মহান সে সত্তা- যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে আমরা তোমার নিকট কল্যাণ, তাক্বওয়া এবং তোমার সন্তুষ্টি বিধানকারী কাজের তাওফীক চাই। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফর আমাদের জন্য সহজ করে দাও এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই (আমাদের) সফরসঙ্গী এবং পরিবারের তত্ত্বাবধানকারী। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং ফিরে এসে সম্পদ ও পরিবারের ক্ষতিকর পরিবর্তন থেকে।"

যদি তুমি নিজেকে মুহাম্মাদ(সা) এর উম্মত পরিচয় দিতে গর্ববোধ করো তবে তো আমি এই আশা করতেই পারি যে, তোমার ঘুরাঘুরি আর ট্যুর-ট্র্যাভেলিংয়েও তিনিই হবেন তোমার গাইড??

তাহলে এসো আমরা এই হাদিস থেকে খুঁজে নেই কেমন হবে আমাদের ভ্রমণ কিংবা ছুটাছুটি??

১.ভ্রমণ শুরু হবে আল্লাহর নামে।

২.বাইক রাইডিং কিংবা যেকোন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করাটা যেনো আমার নিজের দক্ষতা হিসেবেই তৃপ্তিবোধ না করি।বরং নবীজির মতো করে আল্লাহকে বলতে হবে,"মাবুদ তুমি আমাকে বুদ্ধিমত্তা আর শক্তি দিয়েছো বলেই আমি এটাকে কন্ট্রোল করছি।পাশাপাশি আল্লাহর এই অনুগ্রহের শুকরিয়া স্বরুপ আমার রাইডিং হবে ভদ্রোচিত ও নিরাপদ গতিতে।

৩.রাসূল(সা) এই হাদিসে দোয়া করেছেন যেনো সফরে কেবল এমন কিছুই করা হয় যাতে আল্লাহর ভয় ও উত্তম কাজের প্রতিফলন ঘটে।যে কাজে আল্লাহ খুশি হন সে কাজের বাইরে কোন কিছু যেনো করা না হয়।
তাহলে আমাদের বার্তা কি হবে?নিশ্চয়ই আমাদের সফরে আমরাঃ-
ক.ছেলে বন্ধু-মেয়ে বন্ধু গ্রুপ করে যেতে পারি না।
খ.অমার্জিত,বেখাপ্পা আর পর্দা লঙিত পোশাক পরিধান করে যেতে পারি না।
গ.ফ্রি মাইন্ড মোডে অর্ধ উলঙ্গ হয়ে লেক কিংবা নদীতে গোসল করবো না।
ঘ.জাস্ট কিউরিওসিটি কিংবা পিনিক/মাস্তির নাম করে কোন অপবিত্র ও নোংরা খাবার(ধুমপান,মদ-গাঁজা,হারাম প্রাণীর মাংস) গ্রহণ করবো না।
ঙ.চলার পথে অথবা পার্টি প্লেসে গান-বাজনা থেকে অবশ্যই নিজেদের বিরত রাখবো।

৪.ভ্রমণ-কালে যাবতীয় দুঃখ-দূর্ঘটনা,অপ্রত্যাশিত দৃশ্যের মুখোমুখি হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে এবং সেইফ জার্নিও কেবল তিনিই দিতে পারেন।সুতরাং যাত্রাপথে উশৃংখল আচরণ এবং অনিয়ন্ত্রিত উল্লাপনার ব্যপারে সতর্ক থাকা দরকার।

৫.আল্লাহর রাসূল(সা) উল্লেখিত দোয়া'র এক অংশে নিজের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে আল্লাহকে তাঁর পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।তার মানে পারিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে কোনভাবেই আমরা ট্যুরে যেতে পারি না!

তুমি যদি বলো এতো রেস্ট্রিকশন ফলো করে কি আর আনন্দ জিনিস টা বাকি থাকে!আমি বলবো মুমিন জীবনের কোন পর্যায়েই আল্লাহর সীমারেখা অতিক্রম করার সুযোগ নেই বন্ধু!

নির্মল বিনোদন তো অবশ্যই করা যেতে পারেঃ-
১.এক ডিজাইনের মার্জিত পোশাক।
২.মিউজিক বর্জিত শুদ্ধ ধারার সংগীত পরিবেশন।
৩.ক্রিড়া-সাংস্কৃতিক আয়োজন।
৪.পারফরম্যান্স প্রেজেন্টেশন।
৫.যৌথভাবে খাওয়া-দাওয়া।
৬.সতর রক্ষা করে গোসল/সাঁতার কাটা।
৭.পুরো ভ্রমণজুড়ে তোলা ছবি/ভিডিও গুলো দিয়ে একটা ট্র্যাভেল মেমোরান্ডাম/ম্যাগাজিন/ভিডিও ব্লগ ক্রিয়েট করা।

চলো একটু ঘুরে আসি স্নিগ্ধ কোলাহলে,
ধূসর মনে আঁকবো ছবি সবুজের কোলে!

(০৪/০৫/২০২২)

পঠিত : ৩১২ বার

মন্তব্য: ০