বুক রিভিউ
তারিখঃ ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:২৬
অনেক আগের একটা ঘটনা, তবে এখন নিত্য নতুন এরকম ঘটনা ঘটে চলেছে। উঠতি বয়সী ছেলেটা নতুন একটা ফোন পেয়েছে। একই সাথে নতুন নতুন জগৎ তার পরিচয়। অন্ধকার জগতে তার গভীর পদচালন। কে রুকে এই নিশাকর নেশাকর সৈনিক কে? ক্লাসের ভিতর যখন সবাই কোনে না কোনো জিনিস এ মগ্ন তখন ছেলেটা ফোন বের করে নিষিদ্ধ জগতে আবারও ছেদ। কিংবা মসজিদের ভিতরে ছুটে চলে এই নেশাকর পাগলা ঘোড়া। সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন কি নিয়ে কথা হতে পারে!
কিছু কিছু ট্যাবু আছে ভালো কিছু কিছু আছে খারাপ।সেক্ষেত্রে বলা যায় ট্যাবু জিনিস টা একই সাথে অনেক ভালো আবার খারাপ। ভালো কখন? তখন যখন জিনিস টা মানুষের আড়ালে আছে। জিনিস টা সুস্থ স্বাভাবিক মলাট এ আবৃত। আবার একই সাথে জিনিস টা বস্তা পচা জিনিস দ্বারা ভর্তি তখন কেউ এই ট্যাবু নিয়ে কথা বলছে না তখন জিনিস টা আসলেই খারাপ। চারদিকে যখন পর্ণগ্রাফির ভয়াল থাবায় মানুষ জন মাতাল হয়ে আছে সেখানে এ নিয়ে কাজ করার কেউ নেই। কথা বলার কেউ নেই। আসলেই নেই??
সেদিকে পরে যায়। এ ভয়াল থাবায় আসক্ত যুবক যুবতী বৃদ্ধ বনিবতা সবাই। মানুষের বিশাল এক পৃথিবী কে তসনস করে দিতে পারে অনেক কিছু। স্বাভাবিক চিন্তা চেতনা কে নষ্ট করে ফেলতে পারে অনেক কিছু। তার ভিতর পর্ণগ্রাফি, মাস্টারবেশন অন্যতম।
এবার আসি বইয়ের কথায়। ভয়াল থাবায় যখন চারদিকে জাল ছিটিয়ে পরেছে তখন বুয়েটের কিছু ভাইয়েরা এগিয়ে এসেছে। তারপরে আরো কিছু ভাইয়েরা এগিয়ে আসে। সম্মিলিত টিম লস্ট মডেস্টি। সেই ২০১৩ থেকে কাজ করে আসছে। ততদিনে অফলাইনে ছিল একটা গন্ডির মধ্য, ২০১৮ সালে বই আসে (কোনো এক তাদের পডকাস্টে শুনি)। তারা বই টা কে উৎসর্গ করেছে এভাবে
"দুঃখিনী বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
নীল অন্ধকারে আটকা পড়াদের....
ভাইয়েরা আমার
ভালোবাসা নাও, হারিয়ে যেয়ো না...."
এবার আসি মলাটের ভিতরে। ২ টি বড় অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। তার আগে সম্পাদকের কথা, অভিমত, পোকামাকড়ের আগুনে সাথে সন্ধি ও দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা লেখা হয়েছে। ১ম অধ্যায় অনিবার্য যত ক্ষয় তাতে অনেক গুলো সাব টপিক এ ভাগ করা হয়েছে। মাদেকর রাজ্যে, চোরাবালি, হস্তমৈথুনঃ বিজ্ঞানের আতশ কাচের নিচে,১০৮ টি নীলপদ্ম, মৃত্যু? দুই সেকেন্ড দুরে,নীল রঙের অন্ধকার, অদ্ভুত আধার এক,পর্দার ওপাশে, অঙ্গার, মিথ্যের শেকল যত। মূলত বইয়ের ১ম অধ্যায়ে যত কারণ ক্ষতি, এ বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে, সাবেক পর্ণ তারকাদের কথা, বাংলাদেশের অতীত বর্তমানের অবস্থা, কি চলছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ২ অধ্যায়ের অনেক গুলো সাব টপিক এ ভাগ করা হয়েছে তবে এখানে এ থেকে উত্তরণের পথ বাতলানো হয়েছে। একই মলাটে কারণ ও সমাধান দারুণ না!
২য় অধ্যায়ের নাম বৃত্তের বাইরে। সাবটপিক গুলো হলো
লিটমাস টেস্টঃ যেভাবে বুঝবেন আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত, বাড়িয়ে দাও তোমার হাত,ব্রেক দা সার্কেল, ফাঁদ, তবু হেমন্ত এলে অবসর পাওয়া যাবে, দুআ তো করেছিলাম, ও যখন পর্ণ আসক্ত, আমাদের সন্তান পর্ণ দেখে, বিষে বিষক্ষয়, আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো,রুপকথা নয়, ভাই আমার, মুক্ত বাতাস খোঁজে। বইটার এত চাহিদা বৃদ্ধি পায় যে ২০১৮ সালে বাজার আসলেও তারা ২০১৮ সালের শেষ দিকে এটার পিডিএফ, সব কিছু অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেয়। বলা চলে এদিক দিয়ে কিছু টা কপিরাইট ফ্রী করছে। অনেক তো হল কথা শেষ করি বইয়ের একটা কবিতা দিয়ে –
আর কতকাল পথ ভুল করে ভুল রাস্তায়
হেঁটে বেড়াবে উদ্ভ্রান্তের মতো?
আর কতকাল?
তারচেয়ে বরং এসো খোলা জানালায়।
এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস এসে শীতল পরশ বুলিয়ে দেবে
তোমার স্নিগ্ধ মুখটাতে৷
বাইরে চেয়ে দেখো ঝকঝকে রোদে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক,
উঠোনকোণের পেয়ারা গাছটার পাতার আড়ালে
মিষ্টি সুরে গান গেয়ে যাচ্ছে বুলবুলি,
দূরের ঐ নীল আকাশে ডানা মেলেছে সোনালি ডানার চিল;
হাতছানি দিয়ে ডাকছে তোমায়,
যেন তুমি বেরিয়ে পড়ো
মুক্ত বাতাসের খোঁজে........
বই–মুক্ত বাতাসের খোঁজে
লেখক–লস্ট মডেস্টি টিম
প্রকাশনায়–ইলমাউস পাবলিকেশন
পৃষ্টা–২৮৮
নির্ধারিত মূল্য–২৩০ টাকা

মন্তব্য: ২