Alapon

আমাদের মূসা (আ) এর মনোভঙ্গি ধারণ করতে হবে...



আল্লাহ তায়ালা বলেন- يٰۤـاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَيِّبٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّاۤ اَخۡرَجۡنَا لَـكُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ وَلَا تَيَمَّمُوا الۡخَبِيۡثَ مِنۡهُ تُنۡفِقُوۡنَ وَلَسۡتُمۡ بِاٰخِذِيۡهِ اِلَّاۤ اَنۡ تُغۡمِضُوۡا فِيۡهِ​ؕ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ غَنِىٌّ حَمِيۡدٌ‏ - "হে মু’মিনগণ! তোমাদের উপার্জিত উত্তম সম্পদ থেকে এবং তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তাত্থেকে ব্যয় কর এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার নিয়ত করো না, বস্তুতঃ তোমরা তা গ্রহণ কর না, যদি না তোমাদের চক্ষু বন্ধ করে থাক। আর জেনে রেখ, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।" (বাকারা, ২৬৭)

লক্ষ্য করুন, এখানে 'কাসাব' (উপার্জন) শব্দটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়াতে আল্লাহ অর্থ-সম্পদ নিয়ে আমাদের মনোভাব ঠিক করে দিচ্ছেন। আল্লাহ এখানে বলছেন তোমাদের সম্পদ থেকে নয়, তোমাদের "উপার্জিত উত্তম সম্পদ" থেকে দান করো।

আল্লাহ এখানে একটি বিষয় তুলে ধরছেন। আল্লাহ চান আমরা যেন কঠোর পরিশ্রম করি এবং অর্থ উপার্জন করি এরপর দান করি। তখন আপনি পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।

আপনাকে আগে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে টাকাটা আয় করার জন্য। টাকাটা এমনি এমনি আপনার হাতে এসে পড়েনি। কেউ কোটিপতির ঘরে জন্মগ্রহণ করলো। এরপর লক্ষ টাকার চেক দান করে দিলো। এ টাকা পাওয়ার জন্য তাদের পরিশ্রম করতে হয়নি। এটা তাদের জন্য বড় কোনো ব্যাপার নয়।

আল্লাহ চান আপনি যেন টাকাটা আয় করার জন্য পরিশ্রম করেন এরপর দান করেন।
এরপরের কিছু আয়াতে আল্লাহ সুদ নিয়ে কথা বলেছেন। সুদ উপার্জন করার জন্যে তো আপনাকে কোনো পরিশ্রম করতে হয় না। এটা 'কাসাব' নয়।

তাই, এ আয়াতে তিনি আমাদের মনোভাব ঠিক করে দিচ্ছেন যে উপার্জনের ব্যাপারটা কিভাবে কাজ করার কথা।

এরপর তিনি বলেন- وَ مِمَّاۤ اَخۡرَجۡنَا لَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ - " এবং তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তাত্থেকে ব্যয় কর।"

উলামারা এখানে মন্তব্য করেছেন- আমরা এখানে দুই ধরণের সম্পদের কথা জানছি। একটা আমাদের উপার্জিত সকল সম্পদ এবং আরেকটা কৃষি সম্পদ। কৃষি সম্পদ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন এ সম্পদ আমি জমিন থেকে বের করি। এখানে কৃষি সম্পদকে অন্যান্য সম্পদ থেকে পৃথক করে উল্লেখ করা হয়েছে।

এখানে খুবই সুন্দর একটি যৌথ কর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খুবই সুন্দর। এখন, কৃষক নিয়ে একটু চিন্তা করি। কৃষককে জমি তৈরী করতে হয়, ফসল ফলানোর উপযোগী করে মাটি সাজাতে হয়, পানি দিতে হয়--প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। তাই না? কিন্তু সবার শেষে কে জমিন থেকে চারাগাছ বের করে আনেন? আল্লাহ।

অন্য কথায়, সে তার কাজ না করলে আল্লাহ তার জন্য জমিন থেকে ফসল উৎপাদন করবেন না। তাকে তার কাজ করতে হবে। এরপর আল্লাহ তাকে দিবেন।
এটাই হলো কুরআনে রিজিকের ফর্মুলা। ফর্মুলাটা ভালো করে বুঝুন এবং আত্মস্থ করুন।
সমাজে দুইটা চরম চিন্তা প্রচলিত আছে। একদিকে মানুষ বলে- আমি চাকরি বাকরি খুঁজবো না। আল্লাহ আমাকে রিজিক দিবেন।
- "কেন তুমি চাকরির জন্য আবেদন করছো না?"
- "তুমি দেখবে আল্লাহ যখন দরজা খুলে দিবেন তখন এমনিতেই পেয়ে যাবো।"

ভালো করে শোন। আল্লাহ চান তুমি আবেদন করো। ইন্টারভিউ ফেস করো। আল্লাহ আকাশ থেকে তোমার মাথায় চাকরি ফেলে দিবে না। এভাবে চাকরি আসে না।

অন্যপ্রান্তে, মানুষ বলে- আমি চাকরি পেয়েছি কারণ আমি ডিগ্রি অর্জন করেছি। আমি ইন্টারভিউতে ভালো করেছি। আমার সব যোগ্যতা ছিল তাই আমি চাকরি পেয়েছি। আমি স্মার্ট ইনভেস্টমেন্ট করি। আমি অত্যন্ত যোগ্য। আমি আমি আমি।

আপনি যত পারেন জমিতে বীজ বপন করতে পারেন কিন্তু আল্লাহ যদি জমিন থেকে কোনো জীবন বের করে না আনেন, আপনার আমার পক্ষে কোনোদিনও মাটি থেকে জীবন বের করে আনা সম্ভব নয়।

অর্ধেক চেষ্টা আমাদের হাতে। বাকি অর্ধেক শুধু আল্লাহর মাধ্যমেই পূর্ণ করা সম্ভব। এই অর্ধেক অর্ধেক বুঝার চেষ্টা করুন। আপনি আপনার অর্ধেক না দিলে আল্লাহ আপনাকে আল্লাহর অর্ধেক দিবেন না। চেষ্টা না করে আল্লাহকে দোষ দিতে পারবেন না।
অনেক সময় মানুষ বলে- আমি দুই বছর যাবৎ চাকরি খুঁজছি। পাচ্ছি না। আল্লাহ দিচ্ছেন না।

আমি তখন জিজ্ঞেস করি- কি ধরণের চাকরি।
সে বলে- ইঞ্জিনিয়ারিং।
- অন্য ধরণের কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছেন?
- না। আমি তো একজন ইঞ্জিনিয়ার।

আচ্ছা। সবার আগে- " আল মা-সি রাদিয়া বীমা রা-কিব।" মরুভূমিতে পায়ে চলা ব্যক্তি যে কোনো বাহন পেলেই খুশি হয়ে যায়। যদি দুই বছর যাবৎ চাকরি না পেয়ে থাকেন যান মেকানিক হোন। যান টায়ার চেঞ্জ করুন। যান কোনো দোকানে কাজ করুন।
যা সম্ভব করুন। আপনি বলছেন আল্লাহ রিজিকের দরজা খোলেননি। হ্যাঁ, আল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং এর দরজা খোলেননি। কিন্তু অন্য অনেক চাকরি আপনার জন্য এখনো খোলা আছে। এখন পছন্দ-অপছন্দের সময় নয়।

হ্যাঁ, আদর্শ পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের পছন্দের সাবজেক্টে চাকরি পেতে চাই। কিন্তু সকল পরিস্থিতি তো আদর্শ পরিস্থিতি নয়।

আমাদের মূসা (আ) এর মনোভঙ্গি ধারণ করতে হবে। তিনি বলেছিলেন- "রাব্বি ইন্নি লিমা আনজালতা ইলাইইয়া মিন খাইরিন ফাকির।" ও আমার রব! আপনি আমার পথে যে কল্যাণই প্রেরণ করেন না কেন আমি তার ফকির। আমি তার দ্বারা উপকৃত হতে পারি।

- নোমান আলী খান
- 099. Al-Baqarah (Ayah 266-269) - A Deeper Look

পঠিত : ১৯৮ বার

মন্তব্য: ০