Alapon

জামায়াতের গণমিছিল নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় এক চোখা দৈত্যের আচরণ



বাংলাদেশী মিডিয়ায় কতটুকু পেশাদারীত্ব আর কতটুকু এ্যাক্টিভিজমের ভূমিকায় অবতীর্ণ তা কাউকে ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা বলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া সব সময় এক ধাপ এগিয়ে থাকে। যদিও সত্য প্রকাশের এই দূর্মুল্যের বাজারে বেশ কয়েকটি পত্রিকা এবং দু’একটি টেলিভিশন চ্যানেল আছে যারা ওপর মহলের চাপ সত্যেও সত্য প্রকাশ করতে না পারলেও অন্তত মিথ্যা প্রকাশ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে। আজ আলোচনা দেশের প্রথম সারির অবস্থান ধরে রাখা নামী দামী মিডিয়াগুলোর ব্যাপারে। যুগের পর যুগ এই সকল মিডিয়া নিজেদের পছন্দ অপছন্দকে নিউজ হিসেবে জনগণের সামনে হাজির করে।

৭১ টেলিভিশন কিংবা দৈনিক জনকন্ঠ কিভাবে এক ধরনের ডাহা মিথ্যাকে সত্য আর চিরন্তন সত্যকে মিথ্যা হিসেবে প্রচার করে তা সকলের কাছেই দিনের আলোর মতো জাজ্জল্যমান সত্য... এই তালিকায় আছে আরো অনেকেই। আজ রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিশাল উপস্থিতি নিয়ে অনেক বড়ো মাপের তিনটি মিছিল করেছে। এর মধ্যে দুটি মিছিল পুলিশি বাধার সম্মূখীন হয়েছে।

একটি মিছিলে পুলিশ, গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল মেরে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার পরেও তারা মিছিল নিয়ে সামনে এগিয়েছে। পরবর্তীতে মিছিলকারীরা পুলিশের বেধরক লাঠিচার্জ হতে বাঁচতে কিছু ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। বড় বড় তিনটি মিছিলের সংবাদ বংশবদ মিডিয়াগুলোর কাছে কোনো সংবাদই না তারা শুধু প্রচার করছে পুলিশের উপর জামায়াতের হামলা। হামলা কে করলো, পুলিশ না জামায়াতের কর্মীরা?

এ বিষয়ে পরে লিখছি। তার আগে পাঠকদের একটি ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেই।
পশ্চিমা মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে ঘটনাটি প্রায় সকলের জানা আছে। তারপরও পাঠকদের জ্ঞাতার্থে গল্পটি আবার উপস্থান করছি: বৃটেনের একটি পার্ক। এক ব্যক্তি একাকী মনে বসে আছেন। তিনি দেখলেন একটি কুকুর এক শিশুকে ধাওয়া করছে। শিশুটির মা কুকুরটিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কুকুরটি হিংস্র রূপ ধারণ করে শিশুটিকে আক্রমণ করে বসলো। এতক্ষণ ঐ ব্যক্তি নিশ্চুপ ঘটনা দেখছিলেন, কিন্তু তিনি আর স্থির বসে থাকতে পারলেন না। কুকুরের হাত হতে শিশুটিকে উদ্ধার করার জন্য তিনি শিশুটিকে কুকুরের থাবা হতে কোলে নেয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্ত কুকুরটি নিবৃত্ত হচ্ছে না। আবার শিশুটিকে আক্রমণ করতে থাকলো। তিনি বুঝতে পারলেন এই মূহুর্তে আঘাত না করলে কুকুরটি থামবে না। তিনি একটি নিয়ে কুকুরটির মাথায় আঘাত করলেন। কয়েক আঘাতে কুকুরটি মারা গেল। তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে তুলে দিলেন। পার্কে উপস্থিত সকলেই লোকটিকে বাহবা দিলো। সবাই তাকে উইস করলো। তিনি নির্বিকার। আবার আপন মনে পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলো বৃটেনের এক নামীদামী পত্রিকার জনৈক সাংবাদিক। তিনি লোকটির পাশে গিয়ে বসলেন। সাংবাদিক লোকটির সাহসিকতার অনেক প্রশংসা করলো। তাকে অনেক উন্নত শব্দে অভিভাদন জানালো। স্বগত স্বরে সাংবাদিক বললেন, আমি অমুক পত্রিকার সাংবাদিক। আপনি যখন কুকুরটিকে আঘাত করে শিশুটিকে উদ্ধার করেছেন, তখন আমি অনেকগুলো ছবি তুলেছি। আমি আপনার ছবি দিয়ে একটি নিউজ স্টোরী করতে চাই। আপনার নামটি যদি বলতেন। লোকটি তার নাম বললো ইউসুফ। সাংবাদিক আবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোন দেশের নাগরিক, তিনি আরবের একটি দেশের নাম বললেন। সাংবাদিক আবার ভাবলেন আরবে অনেক ইয়াহুদি এবং খৃষ্টানের নাম কাছাকাছি হয়ে থাকে। তিনি আবার লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি মুসলিম। লোকটি নির্বিাকারভাবে জবাব দিলেন, হ্যা মুসলিম। তখন ঐ সাংবাদিক পুরোপুরি হতাশ হলেন, তার এতক্ষণের হাসিমাখা মুখটি মলিন হয়ে গেলো। পরের দিন লোকটি ঐ পত্রিকাটির একটি কপি আগ্রহভরে কিনলেন। দেখলেন প্রথম পৃষ্টায় তার এবং কুকুরটির ছবি আর তার নিচে ক্যাপশন ‘‘ এক আরব মুসলিমের হতে বৃটেনের পার্কে একটি কুকুর নৃশংসভাবে খুন’’।
ঘটনাটির সত্যতা কিংবা অসত্যতা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া মুসলমানদের এভাবেই উপস্থাপন করে থাকে। বাংলাদেশে অধিকাংশ মিডিয়া সরাসরি ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিলেও তারা ঘুরিয়ে পেচিয়ে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী সভ্যতা, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানকে প্রকাশ করে।

এটা তাদের শ্রেণি চরিত্র। তারা ভাবে, জনগণকে যা বোঝাবে তাই জনগণ বুঝবে। কিন্তু এখন অধিকাংশ ঘটনা এমন হয় যে, পত্রিকা এবং টেলিভিশনে প্রকাশের আগে সাসামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসে। একচেটিয়া মনোপলি আস্তে আস্তে কমা শুরু করেছে। এই ধারা তারা বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে তারা বুঝতে শুরু করেছে কিন্তু তারা যে তাদের বিবেক অন্য কোথাও বন্ধক রেখেছে এ জন্য সত্যকে সত্য জানার পরেও এ্যাক্টিভিজমের যে চরিত্র তা তারা প্রকাশ করে। যে কোনো জাতীয় দৈনিকের প্রচার সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। এখন কতজন টেলিভিশন সংবাদ দেখে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অনেক সেলিব্রেটি আছেন, যাদের কথা মানুষ স্বাভাবিক সত্য হিসেবে মেনে নেয়। ইন্টারনেট দুনিয়ায় অনেক মিথ্যার যেমন ছড়াছড়ি আবার সত্য জানার ক্ষেত্রেও মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে অনেক মাধ্যম। যারা আজকে জামায়াতের গণমিছিলের সংবাদ পুরোপুরি হাইড করেছে বরং পুলিশের ওপর হামলার কাল্পনিক সংবাদ প্রচার করেছে, তাদেরকে জনগণ কিন্তু চিনতে ভুল করে না। এ সকল মিডিয়ার পাঠক এবং দর্শক দিনে দিনে কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি জনগণ তাদের মিথ্যা সংবাদে খুব কমই বিভ্রান্ত হয়। যদি তারা তিনটি মিছিলের বিপুল পরিমাণ উপস্থিতির কথা প্রকাশ ও প্রচার করতো, পুলিশের বাধা দান এভং লাঠিচার্জের কথা প্রকাশ ও প্রচার করার পর বলতো, জামায়াতের কর্মীরাও পুলিশের লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার থেকে বাঁচার জন্য ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে, তাহলে হয়তো জনগণ বিশ্বাস করতো। মিথ্যার বেসাতি করে কিছু দিন টিকে থাকা যায় কিন্তু স্থায়ী হওয়া যায় না।

এবার আসি মূল ঘটনায় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে একটি বড় মিছিল মালিবাগ হতে শুরু হয়ে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শুরু ও শেষ হয়। এখানে র‌্যাব, পুলিশ এবং সোয়াতের সদস্যরা রাস্তার দুপাশে ছিলো। এই মিছিলে পুলিশ যেহেতু কোনো বাধা দেয়নি, তাই তাদের এখানে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু যারা নিজেদেরকে প্রথম শ্রেণির মিডিয়া বলে দাবী করে তাদের মধ্যে একমাত্র দৈনিক মানব জমিন ও দৈনিক নয়াদগিন্ত এ সংবাদটি প্রচার করেছে। এ ব্যতীত সকল মিডিয়া এ মিছিলের সংবাদ সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে এম্বেডেড জার্ণালিজমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা সরকার ও পুলিশের শিখিয়ে দেয়া বাক্য আওড়িয়েছে। এভাবে শেখানো বুলি আওড়িয়ে নিজেদের অবস্থা এবং অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, জনগণের বিশ্বস্ততা অর্জন করা যায় না। হয়তো এক সময় এমন সময় আসবে, সচেতন মানুষেরা প্রশ্ন করবে, আপনি কি সেই টেলিভিশন বা পত্রিকার সাংবাদিক যারা একপেশে নিউজ প্রচার করতো?

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগীর উত্তরের একটি মিছিল মহানগরী উত্তরের আমীর এবং কেন্দ্রীর নির্বাহী পরিষদ সদ্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে শুরু হলে মিছিলটি তিনবার পুলিশি বাধার মূখে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে ব্যানার রাস্তায় ফেলে দিলে, তারা ব্যানার কুড়িয়ে আবার মিছিল শুরু করে। সেই মিছিলে পুলিশ বেধরক লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। তখন জামায়াতের কর্মীরা পুলিশের লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার থেকে বাঁচার জন্য ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। যার ভিডিও লিংক পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
তৃতীয় মিছিলটি মগবাজার থেকে শান্তিনগরের দিকে যায়। এ মিছিলেও পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। জামায়াতের গণমিছিল ঠেকাতে পুলিশের রণ প্রস্তুতি সবাই দেখেছে। সংঘাত ও সংঘর্ষ এড়াতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্ত শুরু থেকেই পুলিশের আচরণ ছিলো মারমূখি। এ সংবাদ কেউই প্রচার করছে না। বড় বড় মিছিলের সংবাদে তাদের ভাষ্য ছিলো জামায়াতের কিছু নেতা কর্মী জড়ো হয়ে শ্লোগাণ দিয়েছে।

মিছিল ঠেকানোর জন্য গ্রেফতার কর্মে পুলিশ কতটুকু করিৎকর্মা তা বোঝা যায় কুড়িগ্রামের এক আওয়ামী নেতার গ্রেফতারের সংবাদ দিয়ে। ভদ্রলোক হয়তো বায়তুল মোকাররমে জুমুয়ার সালাত আদায় করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনিই জামায়াতের মিছিলকারী হিসেবে গ্রেফতার হয়েছেন। এমনকি সংবাদে দেখলাম বেশ কিছু মুসুল্লীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মালিবাগ এবং রামপুরায় মিছিলের চিত্র দেখে বোঝা গেছে, জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররমে গণমিছিল করার জন্য পুলিশের কাছে চিঠি দেয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় তারা মালিবাগ এবং রামপুরায় মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেই অনুযায় তাদের কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ বায়তুল মোকাররমে হাওয়াইভাবে মিছিল আবিস্কার করে কয়েখজন মুসুল্লীকে গ্রেফতার করেছে। এই গ্রেফতারের মাধ্যমে ঐ আওয়মীলীগ নেতা অন্তত জানতে পারলো যে, তারা পুলিশকে কিভাবে ব্যবহার করছে। এর দ্বারা তার আত্মীয়, পরিবার ও নিজ এলাকার কর্মীরা অন্তত জানতে পারবে, তারা কিভাবে পুলিশকে ব্যবহার করছে।

পঠিত : ২০৮৮ বার

মন্তব্য: ০