Alapon

জামায়াত কর্মীদের মানবাধিকার থাকতে নেই


লোকগুলো সুস্থ ছিলো। রাস্তা দিয়ে হেটেই মসজিদে গিয়েছিলো। কাউকে মসজিদে নামাজে প্রবেশের সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কাউকে মিছিল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কাউকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাদের হাত পা সুস্থ সবল দেহ ছিলো, তাদেরকে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে হাত পায়ে ব্যান্ডেজ অবস্থায় কোর্টে উঠিয়ে আবার রিমান্ড দাবী করে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। এ সকল অসুস্থ, চরম পুলিশি নির্যাতনে আহত মানুষগুলোর কান্না আর রোনাজারী বাংলাদেশের মিডিয়া টাইকুনদের কানে পৌঁছবে না জানি। কারণ তারা তাদের আত্মা ও বিবেক বিক্রি করে দিয়েছে।
হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের থিওরী ছিলো, একটি মিথ্যাকে ৯৯ বার বলো, ১০০ বারে সেটি সত্যে পরিণত হবে। একটি বিশেষ আদর্শের আজ্ঞাবহ এবং তাদের জন্য জানপ্রাণ উৎসর্গ করা মিডিয়াগুলো যখন মিথ্যার বেসাতী সাজায় তখন বোঝা যায় যে, তাদের বিবেক ভোতা হয়ে গেছে। নৈতিকতার ন্যূনতম মান তাদের আছে কি না এ প্রশ্নের জবাব তাদের ভূমিকার মাঝে লুক্কায়িত।

যারা খবর প্রচার করলো, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। তারা কি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রচার করেছে? তারা পুলিশি নির্যাতনে হাত ভাঙা ও পা ভাঙা মানুষগুলোর করুণ আহাজারীর কথা তুলে ধরেছে?
ডি এম পি কমিশনার ভবিষ্যতে জামায়াতের কর্মীদের দেখলে প্রতিশোধ নিতে বলেছেন। তার এই উচ্চারণ যারা দেখেছেন, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে, তার এই বক্তব্য পেশাদারীত্বের মধ্যে পড়ে কি না? তিনি এ ধরনের বাক্য বলতে পারেন কি না? কিন্তু কার কাছে জবাব চাওয়া হবে? গোটা রাষ্ট্রীয় সিস্টেম যেখানে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। জনগণের মালিকানা যেখানে ছিনতাই হয়ে গেছে, সেখানে জনগণ কার কাছে কৈফিয়ত চাইবে?
মূলত এক শ্রেণির মিডিয়া এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকায় লালিত পুলিশের কিছু কর্মকর্তা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে যত এ্যাকশন নেয়া যায় ততোই তাদের পেশাগত পদোন্নতির রাস্তা অবারিত হবে। সকলকে একটি বিষয় ভাবা উচিৎ, দুনিয়ার এ জীবনই শেষ নয়। এরপর আর একটি জীবন আছে। যেখানে মানুষের সকল কাজের হিসেব দিতে হবে। প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর পর তাদের পুনরুত্থান হবে। সেখানে মানুষের দুনিয়ার জীবনের সকল কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। কোনো কাজই সেখান হতে বাদ যাবে না।

আজ যারা দুনিয়ার জীবনে বিবেক এবং মূল্যবোধের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে একদল মানুষকে জনগণের সামনে অপরাধী হিসেবে হাজির করছেন, তাদের ওপর অত্যাচরা নিপীড়ন আর নির্যাতন চালাচ্ছেন, তাদের সকল কর্মকা-ই রেকর্ড করা হচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাইলের ১৩ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘‘আমি প্রতিটি মানুষের গলায় তার কর্মের রেকর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছি এবং আমরা কিয়ামাতের দিন তার জন্য বের করবো একটি কিতাব (ব্যক্তির সকল আমলনামা)।’’ এই কিতাবে মানুষের সকল কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা থাকবে। আল্লাহ মানুষের সাথে দিয়ে রেখেছেন দুইজন হিসাব লেখক ফিরিশতা। যারা মানুষের সকল কাজের রেকর্ড লিপিবদ্ধ করেন। যারা কখনো কারো প্রতি ন্যূনতম পক্ষপাতিত্ব করেন না। কারো ভালো কাজ যেমন রেকর্ড করা হয়, একইভাবে খারাপ কাজও রেকর্ড করা হয়। এই রেকর্ড মানুষের হাতে তুলে দেয়া হবে। যারা ভালো কাজের রেকর্ড নিয়ে উপস্থিত হবে। তাদেরকে ডান হাতে তার হিসেবের রেকর্ড তুলে দেয়া হবে। পক্ষান্তরে যে খারাপ কাজের রেকর্ড নিয়ে যাবে, তাকে বাম হাতে তার হিসেবের রেকর্ড তুলে দেয়া হবে। আল্লাহ এ কথাগুলো বলেছেন সূরা হাক্কাহর ১৮ ও ১৯ আয়াতে : ‘‘সেদিন তোমাদের উপস্থিত করা হবেএবং তোমাদের কোনো কিছুই গোপন থাকবে না। তখন যার কিতাব তার ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবে নাও আমার কিতাব পড়ে দেখ।’’
একই কথা বলা হয়েছে, সূরা বনী ইসরাইলের ১৪ নং আয়াতে, আল্লাহ বলেন, ‘‘ বলা হবে, পাঠ করো, তোমার কিতাব, আজ তোমার হিসেব নেয়ার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট’’
দুনিয়ার জীবনে আজ যারা শুধুমাত্র আদর্শিক ও রাজনৈতিক কারণে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে একটি বিশেষ শ্রেণির লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ রচনা ও প্রচার করছেন। যারা বিনা কারণে নিরাপরাধ লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে হাত পা ভেঙে দিচ্ছেন। নিশ্চিৎভাবে তারা জুলুম করছেন। আল্লাহ ইচ্ছে করলে বান্দাহর যে কোনো অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু কোনো ব্যাক্তির প্রতি অন্যায় আচরণ করা হলে, জুলুম করা হলে, কারো অধিকার হরণ করা হলে ঐ ব্যক্তি ক্ষমা না করা পর্যন্ত আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
যারা ক্ষমতাসীন মহলের তল্পীবাহক মিডিয়ার কর্ণধর কিংবা সাংবাদিক, তারা কেউ কেউ হয়তো ভাবেন, কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা লিখলে জনগণ তাই বিশ্বাস করবে এবং এতে আপনারা লাভবান হচ্চেন। মূলত এর দ্বারা আপনি যে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তা যখন বুঝতে পারবেন তখন কিন্তু আর কিছু করার থাকবে না। একইভাবে যে সকল পুলিশ কর্মকর্তা হয়তো সরকারকে খুশি করার জন্য তারা জেনে বুঝেই একটি বিশেষ দলের কর্মী হওয়ার কারণে তাদের মানুষ ভাবছেন না। তাদের সাথে যাচ্ছে তাই আচরণ করছেন, কিন্তু যখন এ বিষয়গুলো আল্লাহ আপনার সামনে তুলে ধরবেন, তখন কি জবাব দিবেন? বিষয়টি আসলেই আপনাদের ভাবা উচিৎ।

পঠিত : ৪৫৯ বার

মন্তব্য: ০