Alapon

বিয়ে পূর্ব ফ্যান্টাসি এবং কিছু কথা...



অনেক যুবক কেবল পাত্রীর দ্বীনদারি দেখে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আর কোনো কিছু দেখার প্রয়োজন মনে করে না। পাত্রীর চিন্তাচেতনা কেমন, স্বভাব-চরিত্র কেমন, ঘরের সদস্যদের আচার-ব্যবহার কেমন—কোনো কিছু সে জানতে চেষ্টা করে না। দেখা ও প্রস্তাব দেওয়ার মাঝে শুধু এটুকুই দেখে যে পাত্রী দ্বীনদার। কিন্তু বিয়ের পর দেখা যায়, বেচারা কষ্টের জীবন কাটাচ্ছে।

স্ত্রীও কষ্ট করে স্বামীকে মানিয়ে চলছে, নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। কিংবা স্বামীর চিন্তা মানিয়ে নিলেও, নিজের স্বভাব-চরিত্র বর্জন করতে পারছে না। দুজনই ভিন্ন দুই স্রোতে সংসারের তরি চালিয়ে নেওয়ার অভিনয় করছে। আবার কখনও মেয়ের দিক থেকেও ভোগান্তির অভিযোগ থাকে। বিয়ের আগে মেয়ে দেখেছে, দীনি জ্ঞানে অভিজ্ঞ একজন আলিম বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, তার সততাও প্রসিদ্ধ; ফলে কবুল করে নিয়েছে। অনেক মেয়ে বিয়ের সময় শুধু পাত্রের দ্বীনদারির পরিচয়টুকুই দেখে। কিন্তু পরে দেখা যায়, সংসারের কোনো বিষয়ে সে সচেতন নয়। ঘরের শোভা বর্ধনে নির্জীব পুতুল হয়ে তাকে জীবন কাটাতে হচ্ছে।

কিছু মানুষের ধারণা—বিয়ে ও দাম্পত্যজীবন এক স্বর্গীয় বস্তু; আসমান থেকে ফেরেশতার মতো নেমে আসে। কিংবা দুটি হৃদয়ের পবিত্র মিলন; আকাশে উড়তে উড়তে হঠাৎ সাক্ষাৎ ঘটে। তারা মনে করে, বিয়ে মানে দুধে ধোয়া অপরূপ দুই মানব-মানবীর অলৌকিক সাক্ষাৎ। তবে যখন আবেগের উড়ন্ত পাখি মাটিতে নেমে আসে, মানুষের ভেতরগত মাটির ময়লা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে, স্বামী-স্ত্রীর বিপরীতমুখী শরীরবৃত্তি ও মনোবৃত্তি জানাজানি হয়ে যায়—তখন নীরবে চিৎকার ও আর্তনাদ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

এর কারণ হচ্ছে বিয়ের আগের ফ্যান্টাসি, বাস্তবতা থেকে অনেক দূরের কল্পনার আকাশে ওড়াউড়ি করা, বাস্তবতার জগতের দেয়ালের ওপার থেকে উঁকিঝুঁকি দেওয়া এবং বাহ্যিক ধারণার ওপরই সন্তুষ্ট থাকা।

অনেক প্রাকৃতিক পাথরকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মূল্যবান জহরত মনে হয়। আসলে সমুদ্রের তীরে ভেসে ওঠা যেকোনো পাথর দেখতে খুব সুন্দর ও মনোরম মনে হলেই সেটি মূল্যবান হিরার টুকরো হয় না। বিয়ের ক্ষেত্রেও এমন, কোনো নারী বা পুরুষ বিয়ে করল বাহ্যিক যশ-খ্যাতি-রূপ-বংশ-সম্পদ দেখে, অন্যরাও ঈর্ষার চোখে দেখল, কিন্তু বিয়ের পর দেখা গেল—দুজনের ভোগান্তির শেষ নেই, সুখের স্বাদ চেখে দেখার সুযোগ হয় না। এর কারণ হচ্ছে দুজনের লাইফস্টাইল, রুচি-পছন্দ ও জীবনাচার এক না হওয়া।

শাইখ আলি তানতাবি বলেন, ‘একজন মানুষের লাইফস্টাইল অনেক বিষয় মিলেই গড়ে ওঠে। নিত্যদিনের জীবনাচারে সে একধরনের খাবারে অভ্যস্ত, একধরনের পানীয়তে অভ্যস্ত, একধরনের পোশাকে অভ্যস্ত, একধরনের চলাফেরায় অভ্যস্ত, মানুষের সঙ্গে একটা বিশেষ ভঙ্গি ও ভাষায় কথা বলে অভ্যস্ত। এসব বিষয় নিয়েই সে কারও কাছে পছন্দনীয়, আবার কারও কাছে অপছন্দনীয়। এসব বিষয়ের কারণেই সে কারও কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং কারও কাছে গুরুত্বহীন। মানুষটির এসব অভ্যস্ততার সঙ্গে যার অভ্যস্ততা মিলবে, সে তাকে ভালোবাসবে; যার সঙ্গে মিলবে না, সে ভালোবাসবে না। এসব নিয়েই কেউ তাকে মর্যাদা দেবে আবার কেউ তাকে তুচ্ছজ্ঞান করবে। সাধারণত মানবিক অভ্যাসের কারণেই কোনো মানুষকে অস্বীকার করা হয় না। সবাই তাকে এড়িয়েও চলবে না।’

পঠিত : ২৩৬ বার

মন্তব্য: ০