Alapon

সালাফরা কী নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন আর আমরা কী নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকি...?



সত্যিকারের বিশ্বাসীরা দারিদ্রতার ভয় করে না। দান-খয়রাত করার সময় ভয় করে না যে সে গরিব হয়ে পড়বে। তাদের একমাত্র ভয় হলো পাপের ভয়। তাদের পাপের কারণে কিয়ামতের দিন আল্লাহ হয়তো শাস্তি দিতে পারেন, এমন চিন্তা সব সময় তাদের আতংকিত করে রাখে। পরকালের চিন্তা সব সময় তাদের মন-মানস দখল করে রাখে। তারা এই দুনিয়ার জীবন দরিদ্র এবং ক্ষুধার্ত হিসেবে পার করে দিতে পারে কিন্তু পাপের বোঝা এবং তাদের মালিকের অবাধ্যতার বোঝা কাঁধে নিয়ে জীবন পার করতে চায় না। তাদের মালিকের সন্তুষ্টি অর্জনে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যায়। তাই দেখা যায় এ ধরণের মানুষরা যখনই দোয়া করার সুযোগ পায় তখনই আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার দোয়া করে।

আমাদের সময়ে এসে সবাই আল্লাহর নিকট পার্থিব সামগ্রীর জন্য দোয়া করে। এই দুনিয়ার জীবনের জন্য আপনি যা চান তা যদি না পেয়ে থাকেন তবু বেঁচে থাকতে পারবেন। কিন্তু পাপের বোঝা নিয়ে দুনিয়া পার করা সহজ নয়। আল্লাহর রাসূলের একজন বিখ্যাত সাহাবী আবু দারদা (রা) আল্লাহর নিকট কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে পড়েন। তিনি এত বেশি কাঁদতেন যে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তখন লোকজন তাকে বললো—"কেন আপনি আল্লাহর নিকট এই দোয়া করছেন না যে, তিনি যেন আপনার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেন।" জবাবে তিনি বললেন, “আমি তো এখনো আল্লাহর নিকট আমার গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করে শেষ করতে পারিনি; কখন আমি আমার চোখের জন্য দোআ করবো?” অর্থাৎ, আমার সকল প্রার্থনা কেবল একটি উদ্দেশ্যেই— "ও আল্লাহ! আমার পাপগুলো ক্ষমা করে দিন।" তাঁর নিকট অন্য কিছু চাওয়ার সময় কোথায়?

এ সমস্ত মানুষেরা চাইতেন পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র অবস্থায় এই দুনিয়া ত্যাগ করতে। আর অন্যদিকে, আমাদের সকল চাওয়া পাওয়া এই দুনিয়া কেন্দ্রীক।

একবার উমাইয়া খলিফা হিশাম ইবনে আব্দুল মালিক মক্কাতুল মুকাররামায় নামাজ পড়তে এলেন। তিনি তখন দেখতে পেলেন সেখানে হজরত উমর (রা) এর দৌহিত্র সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ নামাজ পড়ছেন। সালাত শেষ করার পর খলিফা হিশাম হজরত সালিমকে কিছু স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিতে চাইলেন। সালিম তখন বললেন— "আল্লাহর ঘরে আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করতে লজ্জা অনুভব করি।" হিশাম তখন থেমে গেলেন।
সালিম যখন তার সকল নামাজ পড়া শেষ করে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন তখন হিশাম তাঁর কাছে এসে আবার তাকে স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিতে চাইলেন। সালিম তখন বললেন—" যিনি এই স্বর্ণমুদ্রার প্রকৃত মালিক আমি তার কাছেও তো এগুলো চাইনি; এখন যিনি এগুলোর মালিক নয় আমি তার নিকট থেকে কিভাবে এগুলো গ্রহণ করি?" আল্লাহ হলেন স্বর্ণ রৌপ্যের প্রকৃত মালিক। আমি তাঁর কাছে কখনো স্বর্ণ রৌপ্য চাইনি। তাহলে কিভাবে আমি এখন তোমার মত একজনের কাছ থেকে এগুলো গ্রহণ করবো?

এই মানুষগুলোর একমাত্র উদ্বেগ ছিল বিচার দিবস নিয়ে। আর আমাদের একমাত্র উদ্বেগ হলো এই দুনিয়ার জীবন। কিভাবে ভালোভাবে এই পৃথিবীতে জীবন যাপন করবো, কিভাবে ভালো বাড়ি গাড়ির মালিক হবো এগুলোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু প্রকৃত সফলতা হলো বিচার দিবসের সফলতা। এই মানুষগুলো বিচার দিবস নিয়ে কেমন চিন্তা করতো তা সম্পর্কে কুরআন বলছে—إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًا قَمْطَرِيرًا - "আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি।"

—ড: আকরাম নদভী।

পঠিত : ২০৪ বার

মন্তব্য: ০