Alapon

"ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের আমানতদারিতা"



আমরা যারা আল্লাহর এই জমিনে আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করতে চাই, এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি, তাদেরকে সদা-সর্বদা আমানতদারিতার ব্যাপারে যথেষ্ট সিরিয়াস হবার প্রয়োজন আছে।

যেমন একটা উদাহরণ দিই, মনে করুন আপনি ইসলামী ছাত্র মজলিশ নামক সংগঠনটিতে আছেন। অথবা ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্র জমিয়তের সাথেই আছেন। আপনি সে সংগঠনের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। আপনি সেসব সংগঠন কেন করেন? নিশ্চয়ই দীনকে ভালোবাসেন, দীন প্রতিষ্ঠা করতে চান বলেই তো করেন, তাই না? কিন্তু আপনি যখন নির্দিষ্ট করে একটা সংগঠন করেন, তখন আপনার কর্তব্য হয়ে যায় আপনি আপনার সংগঠনের শরীয়াহ বহির্ভূত নয়, এমন যাবতীয় বিষয়ের তথা যাবতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর আনুগত্য করা। যাবতীয় তথ্যের হেফাজত করা।

এ পর্যায়ে আরেকটা উদাহরণ দিই। মনে করুন আপনার সংগঠন কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত তৈরিকারীদের একজন আপনিও ছিলেন। কিন্তু আপনাদের সেই সিদ্ধান্তটা অফিসিয়ালি প্রকাশ করার আগে আপনি প্রকাশ করে দিলেন। বাহিরে প্রচার করে ফেললেন। কাউকে খুব বেশি কাছের মানুষ মনে হয় বিধায় তাকে জানিয়ে দিয়েছেন সেই সিদ্ধান্তটা। মনে রাখবেন প্রিয় ভাই, এটাও কিন্তু এক প্রকার আমানতের খেয়ানত। ছোট্ট একটা বিষয়ের আমানত যদি হেফাজত করতে না পারেন, তাহলে বড়ো বড়ো বিষয় আশয়গুলোর আমানত কীভাবে রক্ষা করবেন আপনি?

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ সফলকাম মুমিনদের সাতটি নিদর্শন বর্ণনা করেন। তারমধ্যে ৫ম ও ৬ষ্ঠ নিদর্শন হচ্ছে -
‘মুমিনগণ তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করেন’ (সূরা মুমিনুন-৮; সূরা মা‘আরেজ-৩২)

রাসুল (সা.) বলেছেন,
ঐ ব্যক্তির ঈমান নেই, যার আমানতদারিতা নেই। আর ঐ ব্যক্তির দ্বীন নেই, যার অঙ্গীকার ঠিক নেই’। (মুসনাদে আহমদ- ১১৯৩৫) ।
অন্য আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন,
মুমিন সকল স্বভাবের ওপর সৃষ্টি হতে পারে খেয়ানত ও মিথ্যা ব্যতীত’।(মুসনাদ আবী ইয়া‘লা-৭১১)
অর্থাৎ মুমিন কখনো খেয়ানতকারী ও মিথ্যাবাদী হতে পারে না। যারা এটা করে, তারা প্রকৃত মুমিন নয়।


আপনার সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে সেই নিউজটা ঘোষণার আগে আপনি সেটা বাহিরে বলে দেওয়া, ফেসবুকে প্রচার করা ফেলাটাও আমানতের একপ্রকার খেয়ানত। মনে রাখবেন,
মুনাফিকের অন্যতম একটা লক্ষ্মণ হচ্ছে সে আমানতের খেয়ানত করে।
ঈমান-ইহসান এবং তাকওয়ার দাবি হচ্ছে এসব না করা।

ইসলামি আন্দোলনের একজন কর্মী তো তাকওয়ার সর্বোচ্চ লেভেলে থাকবে। আমানতদারিতার মূর্তপ্রতীক হবে সে। সে নিজেকে একজন মুহসিন হিসেবে তৈরি করবে। ইসলামের বিধিমালার মধ্যে সে সবসময় শৈথিল্যপূর্ণ অবস্থান কোনটা, সবচেয়ে ছাড় পাওয়া যায় কোন মাস'আলায়; এসব খুঁজবে না। সে সব সময় সর্বোত্তম যেটা, সন্দেহের ঊর্ধ্বে যা, সেটাই আমল করবেন।

হুবহু কোনো সংগঠনের কর্মী হিসেবেও আপনার জন্য করণীয় হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম আনুগত্য কোনটা, সাংগঠনিক শৃঙ্ক্ষলার সর্বোচ্চ মানদণ্ড কোনটা, আমানতদারিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কোনটা; সেটাই অনুসরণ করা। এটাই হচ্ছে একজন আদর্শ কর্মীর অন্যতম মানদণ্ড। এভাবে আন্দোলনের কর্মী ও দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের বাইয়াত একটা আমানত, আমাদের শাখা-উপশাখা, জনশক্তি-ময়দান, জনশক্তিদের মেধা-যোগ্যতা,, বাইতুল-ছাত্রকল্যাণ, সুধী-শুভাকাঙ্ক্ষী - এক কথায় সবকিছুই আমাদের নিকট একেকটি আমানত। আমাদেরকে সবগুলো আমানতেরই যথাযথভাবে হেফাজত করতে হবে।

আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামি আদর্শের একনিষ্ঠ অনুগামী কর্মী হিসেবে, একজন সর্বোত্তম আমানতদার মানুষ হিসেবে, সর্বোপরি একজন সর্বোত্তম মুত্তাকী-মুহসিন মুমিন হিসেবে কবুল করুন। আ-মী-ন!


~ রেদওয়ান রাওয়াহা
০১/০১/২৩

পঠিত : ৩০২ বার

মন্তব্য: ০