Alapon

সংগঠন শায়েখ আহমদুল্লাহ ও ইকামাতে দ্বীন !



একটা বিষয় আমাদের সাংগঠনিক ভাইদের খেয়াল রাখা উচিৎ। শায়েখ আহমদুল্লাহ একজন প্রাজ্ঞ, গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত আলেম। সমাজে তাঁর অনেক প্রভাব সম্মান আছে। আলেমদের সম্মান মানে মুসলিম উম্মাহর সম্মান। আলেমদের প্রভাব মানে প্রকান্তরে দ্বীনেরই প্রভাব । তিনি এমন কিছু কাজ এমন কিছু জায়গায় করেন, যেসব জায়গায় হয়তো আমাদের যাওয়া সম্ভব নয়। শায়েখ যে কাজগুলো করেন, সেগুলো মূলত দ্বীনরেই কাজ। দ্বীনের কাজ কিন্তু আমাদেরই কাজ । অধ্যাপক গোলাম আজম, মাওলানা নিজমী (রহ.) এবং আল্লামা সাঈদী হাফি. বলতেন অন্যান্য আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, তাবলিগ জামায়াত মূলত আমাদের কাজগুলোই করে দিচ্ছেন। তাঁরা আমাদের কাজগুলোকে সহজ করে দিচ্ছেন। আমাদের দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে একাধিক ভিডিও পাবেন। আমাদের দায়িত্বশীলগণ যে মানসিকতা রাখতেন, আমরাও আলেমদের ব্যাপারে সেই মানসিকতা রাখব।

সবাইকে বাতিলের সাথে সরাসরি সংঘাতে যাওয়া জরুরি নয়। আমাদের অনেক শাখায় অনেক ভাইয়েরা কাজ করেন, যে ভাইদের কাজ একান্তভাবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ ছাড়া কেউ জানেও না। কারণ সবার সবকিছু প্রকাশিত হওয়া, সবাই একই পদ্ধতিতে কাজ করাটা জরুরি নয়। তবে সবার জন্যে জরুরি হচ্ছে, দ্বীন বিজয়ের জন্যে সর্বোচ্ছ শ্রম-ঘাম ঢেলে কাজ করে যাওয়া, এবং এই কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে নিজের কাজটাকেই কাজ মনে করে অন্যদের কাজকে তুচ্ছ মনে না করা।

শায়েখ আহমদুল্লাহ হয়তো বিষয়টা অন্যভাবেও বলতে পারতেন, তাঁর আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনও কিন্তু একটা সংগঠন। সংগবদ্ধতা বা জামায়াতবদ্ধতা ছাড়া দ্বীন পালন করা দূরের বিষয়, নরমাল কাজগুলোও করা আসলেই সহজ নয়।

শায়েখের উপস্থাপনে ত্রুটি আছে, তাঁর উপস্থাপনায় ইকামাতে দ্বীনের গুরুত্ব হালকা হয়ে গেছে। তিনি আরেকটু সুন্দর করে বলতে পারতেন, ইকামাতে দ্বীনের গুরুত্বটা তুলে ধরতে পারতেন। ইকামাতে দ্বীনের কাজ কিন্তু ফরজ। এটাকে ফুটিয়ে তুলতে না পারা কিংবা স্পষ্ট করে না বলতে পারাটা ওনার ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দুর্বলতা।

তবে, এর জন্যে ওনাকে নিয়ে বাজে কিছু বলা, ওনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা উচিৎ নয়। আমরা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আলেমদেরকে সম্মান দিতে না পারলে কোনো সেকুলার কিন্তু দিবে না। তিনি মোটের ওপর আমাদেরকে খুব একটা পছন্দ করেন না, এটা আমরা বহু আগ থেকেই জানি। তবুও তিনি মোটাদাগে কথাটা খুব একটা ভুল বলেননি। আসলেই নির্দিষ্ট দল না করলে জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে, এটা কিন্তু আমরা নিজেরাও বলি না। তবে এটা তো সত্য, ইসলাম ছাড়া যে ভিন্ন মতাদর্শের ওপর থেকে মরবে, সে ব্যক্তি জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করবে।

এখন যেহেতু ইসলাম প্রতিষ্ঠিত নেই, সেজন্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন করা কিন্তু ফরজ। আমরা স্রেফ জামায়াত বা শিবির নামক একটা দলের অধীনেই আমাদের ভাইদেরকে সংগবদ্ধ করি না। আমাদের দলের সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই আমাদের সদস্য ভাইদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। আমাদের সংগঠনের লক্ষ্যই হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহকে মানুষের জীবন চলার একমাত্র বিধান হিসেবে এই জমিনে প্রতিষ্ঠা করা। আমরা তাদেরকেই সংগঠনের অধীনের সংগবদ্ধ করি, যারা ইসলামকে আল্লাহর এই জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।

আমার পুরো কথার সারমর্ম হচ্ছে,

০১. জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবির করা ফরজ নয়। কোনো নির্দিষ্ট দল বা সংগঠন না করলে জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে- এটা ইসলাম তো বলেই না, আমরাও বলি না।

০২. আল্লাহর জমিনে আল্লাহর গোলামির পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যে সৃষ্টি যার, তাঁর আইন কায়েম করাটা ফরজ। দ্বীন কায়েমের জন্যে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করা, সংগ্রাম করা, আন্দোলন করা ফরজ। আল্লাহ বলেছেন- তোমরা দ্বীনকে কায়মে করো এবং তাতে ফিরকাবাজী সৃষ্টি করো না।(সূরা শূরা: ১৩)

০৩ . আমরা কোনো সংগঠন করিনা, এই ধরনের ভাইয়েরাও ভিন্ন একটা সংগঠন। কেননা সংগঠন না করার ব্যাপারে তারা সংগবদ্ধ।

০৪. আমরা যিনি যে সংগঠনই করিনা কেন, আমরা যেন মানুষকে ইসলাম নামক জামায়াতের ওপর ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানাই। মানুষ যেন মানুষের মনগড়া মতবাদের ওপর জামায়াতবদ্ধ না হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলাম নামক জামায়াতের ওপর সংগঠিত থাকে, সেই কাজটাই যেন আমরা করি।

০৫. আমরা আমাদের সংগঠনের অধীনে তাদেরকেই সংগবদ্ধ করি, "যারা ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত।"

০৬. সবাইকে বাতিলের সাথে সরাসরি সংঘাতে যাওয়া জরুরি নয় । একেকজন একেভাবে কাজ করবেন। তবে মূল সেন্স থাকবে বা থাকতে হবে দ্বীন বিজয়।

০৭. আলিমদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য কিংবা অপমান না করা। তাঁরা আমাদের ওপর জুলুম করে থাকলেও। তবে হ্যাঁ, ইলমি জবাব দেওয়া যেতে পারে। সেটা শালীন ও ভদ্রতার সাথে ।

০৮. পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামা, তাবলীগ জামায়াত, সবাই কিন্তু আমাদের কাজটাই করে দিচ্ছে। কিংবা আমাদের কাজটাকে সহজ করে দিচ্ছেন।

০৯. আলেম-ওলামাদের সম্মান মানে ইসলামেরই সম্মান। তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া মানে প্রকারান্তরে ইসলামেরই প্রভাব বৃদ্ধি করা।

১০. শাইখের উপস্থাপনায় অতি-অবশ্যই ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনের জন্যে সংগবদ্ধতার গুরুত্ব এমনকী ইকামাতে দ্বীনের কাজটাই হালকা হয়ে গেছে।

~লিখেছেন : রোহান আব্দুল্লাহ

পঠিত : ৫২৪ বার

মন্তব্য: ০