Alapon

আল্লামা সাঈদী ‍হুজুরের ওয়াজ আজও আমাকে মুগ্ধ করে...



ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে টেলিভিশন ছিলো না। দাদু বিশেষত দাদীর কঠোর নিয়মের কারণে আব্বা তখন টেলিভিশন ক্রয় করেননি। তবে, আমাদের একটা ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো। সেই ক্যাসেট প্লেয়ারে ইসলামি গান আর ওয়াজ ছাড়া আর অন্য কোনো কিছু শোনার অনুমতি ছিলো না।

ক্যাসেট প্লেয়ারে আমরা শুনতাম সাইফুল্লাহ মানসুর, তারিক মনোয়ার, সুমন আজিজ আর কবি মতিউর রহমান মল্লিক ভাইদের গান। আর শুনতাম আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের ওয়াজ। আমার গানের চেয়ে ওয়াজই শোনা হয়েছে বেশি। যার কারণে সাঈদী হুজুরের ওয়াজের প্রভাবটা এখনও আমার মধ্যে রয়ে গেছে; যা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি।

সাঈদী সাহেবের প্রতিটি ওয়াজ হতো বিষয়ভিত্তিক ওয়াজ। হুজুরের প্রতিটি ওয়াজের আপনি শিরোনাম দিতে পারবেন। যেমন: পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা, আমিরুল মুমিনিনি উমর ইবনুল খাত্তাবের জীবন ইত্যাদি।
সাঈদী হুজুরের ওয়াজের সবচেয়ে বড়ো মৌলিকত্ব হচ্ছে, তিনি কখনো অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতেন না, অপ্রাসঙ্গিক হাদীস বর্ণনা করতেন না। যদি কখনও প্রসঙ্গ থেকে বেরিয়ে যেতেন, কিছুক্ষণ পরই তিনি প্রসঙ্গে ফিরে আসতেন এ কথা বলে, 'আমার ভাইয়েরা, যে কথা বলছিলাম'! এ কথার মধ্যে দিয়ে তিনি আবার ওয়াজের নির্ধারিত সাবজেক্টে চলে আসতেন। যার কারণে সাঈদী হুজুরের ওয়াজ সাধারণ মানুষ বুঝতে পারতো, হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে পারতে। ফলে, সেই ওয়াজ মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারতো।

সাঈদী হুজুরের ওয়াজ শুনে বহু মানুষের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। আমাদের মিঠাপুকুরে এমন একজন মানুষকে দেখেছিলাম, যিনি তরুণ বয়সে পাপের পথে উপার্জন করতেন। কিন্তু তার স্ত্রী তাকে সাঈদী সাহেবের ওয়াজ শুনতে অনুরোধ করতো। আর সাঈদী হুজুরের ওয়াজ শুনে পাপের পথে উপার্জন করা ছেড়ে দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে ভালো নামাজী হয়েছিলেন।

আর বর্তমান সময়ের ওয়াজের সবচেয়ে বড়ো মৌলিকত্ব হচ্ছে 'অপ্রাসঙ্গিক কথা'। আরও বড়ো মৌলিকত্ব হচ্ছে, ওয়াজের কোনো নির্ধারিত বিষয় না থাকা। আপনি তাদের ওয়াজের কোনো শিরোনাম দিতে পারবেন না। যার কারণে তারা আলোচনা শুরু করেন এক দিক থেকে, ওয়াজ গিয়ে শেষ হয় ভিন্ন দিকে। ওয়াজ শেষে সাধারণ মানুষ নিজেকে জিজ্ঞেস করে, এতোক্ষণ ধরে আসলে কি শুনলাম আর কি শিখলাম! কিছুই না!

আল্লামা সাঈদী সাহেব যে ওয়াজের জন্য প্রস্তুতি নিতেন, নির্ধারিত বিষয়ে পড়াশোনা করতেন, প্রয়োজনীয় নোট নিতেন, তা এতো বছর পরেও ওয়াজ শুনে বোঝা যায়। সেই ছোটবেলায় সাঈদী হুজুরের যে ওয়াজ শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম, আজ বড়ো বেলায় এসেও মুগ্ধ হই। সেই ছোটবেলায় সাঈদী হুজুরের মুখে মুতার যুদ্ধের বর্ণনা শুনে চোখের অশ্রু ঝরিয়েছিলাম, এই বড়ো বেলাতে এসেও মুতার যুদ্ধের বর্ণনা শুনলে শরীর শিঁউরে ওঠে! চোখ ছলছল করে ওঠে!

ওয়াজের মাইকে শুধু আল্লামা সাঈদী সাহেবের নাম নেওয়াটাই হুজুরের উত্তরসূরী হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। হুজুরের মতো পড়াশোনা করে বিষয়ভিত্তিক ওয়াজ করুন! প্রাসঙ্গিক কথা বলুন। প্রাসঙ্গিক হাদীস বর্ণনা করুন। প্রাসঙ্গিক আয়াত তেলওয়াত করুন। তবেই না সেই ওয়াজের প্রভাব মানুষের জীবনে দেখা যাবে!

না হলে এই ওয়াজ শুধু চিৎকার করে 'সুবহানআল্লাহ' বলা ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না!

পঠিত : ৬০৫ বার

মন্তব্য: ০