Alapon

শয়তানের আনুগত্য করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ...



সমগ্র দুনিয়া যেন একটি নদী যা নিচের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সেই স্রোতস্বিনী নদীর মাঝখানে একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে। যার শিকড়গুলো মাটির বহু গভীরে শক্ত করে প্রোথিত। পাথর গড়িয়ে যাচ্ছে, মাছগুলো গড়িয়ে যাচ্ছে, সবাই স্রোতের তালে হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু গাছটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

আজকের দুনিয়ায় একজন ঈমানদারের অবস্থা গাছটি আঁকড়ে ধরে থাকা ব্যক্তির ন্যায়। কারণ, আপনি আল্লাহর এই কিতাব ধারণ করে আছেন। "আসলুহা সাবিতুন ওয়া ফারউহা ফিস সামাই- اَصۡلُهَا ثَابِتٌ وَّ فَرۡعُهَا فِی السَّمَآءِ - যার মূল সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত আর শাখা-প্রশাখা আকাশপানে বিস্তৃত। "(১৪:২৪)

যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি গাছটি শক্ত করে ধরে থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি টিকে থাকবেন। প্রেসার অনুভব করবেন। কিন্তু হারিয়ে যাবেন না। যখনি একটুখানি ছেড়ে দিবেন কী হবে তখন? অন্য সবার মত বানের তোড়ে হারিয়ে যাবেন। এখন একটুখানি দূরে, কিছুক্ষণ পরে আরো একটু, এরপর আরেকটু... এটা আপনাকে শুধু নিচের দিকেই নিয়ে যেতে থাকবে।
এই উম্মাহর সদস্য হওয়ার মানেই হলো আমরা স্রোতের এই চাপ অনুভব করবো। চাপ আসবে আর দিন দিন শুধু খারাপ হতে থাকবে। পরিস্থিতি যত খারাপ হবে আমাদের তত বেশি শক্ত করে আল্লাহর কিতাব আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে।

নতুবা পতন হতে হতে একেবারে চূড়ান্ত পতনের স্থানে নিক্ষিপ্ত হব।

আল্লাহ কুরআনের অন্যত্র যেমন বলেছেন- فَخَلَفَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ اَضَاعُوا الصَّلٰوۃَ وَ اتَّبَعُوا الشَّهَوٰتِ فَسَوۡفَ یَلۡقَوۡنَ غَیًّا - অতঃপর তাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা নামায হারালো, আর লালসার বশবর্তী হল। তারা অচিরেই ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। (১৯ঃ ৫৯)
প্রথম পতন কোনটি ছিল? নামাজ। এরপরের আরও জঘন্য পতন হল, فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا (Then they will fall into deviation) غَي এর আক্ষরিক অর্থ হল, deviation বিচ্যুতি, নৈতিক অধঃপতন। অর্থাৎ, তাদের মূল্যবোধের ক্রমান্বয়ে অধঃপতন ঘটবে। অনৈতিকতার এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে ক্রমান্বয়ে নামতে থাকবে। আর এরপর তাদের চূড়ান্ত পতন হবে জাহান্নামে।

- নোমান আলী খানের আলোচনা অবলম্বনে
---------------
অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে। কুরআন এবং সুন্নায় এটা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা সাবার ২০ নাম্বার আয়াতে এসেছে- وَ لَقَدۡ صَدَّقَ عَلَیۡهِمۡ اِبۡلِیۡسُ ظَنَّهٗ فَاتَّبَعُوۡهُ اِلَّا فَرِیۡقًا مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ-”তাদের ব্যাপারে ইবলীস তার ধারণা সত্য প্রমাণিত করল (যে ধারণা ইবলীস আল্লাহর নিকট ব্যক্ত করেছিল যে, অল্প সংখ্যক ব্যতীত সে মানুষদেরকে নিজের বশীভূত করে ছাড়বে)। ফলে মু’মিনদের একটি দল ছাড়া তারা সবাই তার অনুসরণ করল।”

আল্লাহ এখানে বলছেন মানব জাতি সম্পর্কে ইবলিশের অনুমান সত্য প্রমাণিত হলো। মানব জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইবলিশকে অনুসরণ করল। শুধু ছোট একদল ঈমানদার ছাড়া। ইবলিশের অনুসরণটাই মানব জাতির ডিফল্ট অবস্থা।

মানব জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই জীবনের চেয়েও বড় একটি লক্ষ্যে কাজ করতে আগ্রহী নয়। বেশির ভাগ মানুষ পশুসুলভ জীবন যাপন করতে পেরেই সন্তুষ্ট। যখন একজন মানুষ পশুর মত জীবন যাপন করে, তখন সে মানুষ একটি পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ, পশুর তো একটি অজুহাত আছে যে সে একটি পশু। কিন্তু, পশুর মত জীবন যাপন করায় মানুষের কী অজুহাত আছে? ঠিক এ জন্যই জাহান্নামের শাস্তি এতোটা ভয়াবহ।

সূরা সোয়াদেও এসেছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইবলিশকে বললেন- لَاَمۡلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنۡکَ وَ مِمَّنۡ تَبِعَکَ مِنۡهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ - "আমি তোমাকে আর তাদের (অর্থাৎ মানুষদের) মধ্যে যারা তোমাকে অনুসরণ করবে তাদের সবাইকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।" (৩৮:৮৫) আমরা কুরআন থেকে আরও জানি- وَ مَاۤ اَکۡثَرُ النَّاسِ وَ لَوۡ حَرَصۡتَ بِمُؤۡمِنِیۡنَ - " (হে আল্লাহর রাসূল!) তুমি যত প্রবল আগ্রহ ভরেই চাও না কেন, মানুষদের অধিকাংশই ঈমান আনবে না।"

- শায়েখ ইয়াসির কাদি

কুরআনে এমন অনেক বক্তব্য আছে যেখানে আল্লাহ বলেছেন— কেউ যদি অমুক অমুক কাজ করে তাহলে সে দোজখে যাবে। এগুলো হলো থ্রেট বা হুমকি।

আল্লাহ তাঁর ওয়াদাসমূহ পূর্ণ করেন। থ্রেট যদি ঊনি পূর্ণ না করেন এতে তাঁর বড়ত্বের কোনো কমতি হবে না। কিন্তু যদি ওয়াদা পূর্ণ না করেন, এতে তাঁর বড়ত্বের খর্ব হবে।

আলেমরা এভাবে উদাহরণ দিয়ে থাকেন। যেমন, দুনিয়ার কোনো রাজা কারো উপর অতন্ত্য রাগান্বিত হয়ে বললেন—"যদি অমুক ব্যক্তি এখানে আসে আমি তার মস্তক কেটে ফেলব।" কিন্তু লোকটি এলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন। কেউ তখন বলবে না যে, "দেখো! রাজা তার ওয়াদা পূর্ণ করেননি।" মানুষ এটাকে রাজার একটি ভালো গুণ হিসেবে দেখবে। মানুষ বলবে— তিনি একজন দয়ালু রাজা।

অতএব, আল্লাহ হুমকি দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ হুমকিগুলো তাঁকে পূর্ণ করতে হবে না। (তিনি ইচ্ছে করলে পূর্ণ করবেন, ইচ্ছে না করলে পূর্ণ করবেন না।) কিন্তু, তিনি যখন ওয়াদা করেন তখন সে ওয়াদা তাঁকে পূর্ণ করতে হবে।

অন্যদিকে, ভয়ের ব্যাপার হলো— আল্লাহ ওয়াদা করেছেন তিনি জাহান্নামকে পূর্ণ করবেন। [ وَ لٰکِنۡ حَقَّ الۡقَوۡلُ مِنِّیۡ لَاَمۡلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ اَجۡمَعِیۡنَ-"কিন্তু আমার এ কথা অবশ্যই সত্যঃ আমি নিশ্চয়ই জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব।" ৩২:১৩] এটা থ্রেট নয়, এটা আল্লাহর ওয়াদা। তাই, মানুষের এ ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত।

—শায়েখ হামজা ইউসুফের আলোচনা থেকে।

পঠিত : ৩১২ বার

মন্তব্য: ০