Alapon

খালিদ বিন ওয়ালিদঃ এক অপরাজেয় যোদ্ধা

আল্লাহর তরবারি খ্যাত খালিদ বিন ওয়ালিদের পুরো নাম আবু সুলাইমান খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ ইবনে আল-মুগিরা আল-মাখজুমি। তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ৫৮৫ সালে এবং মৃত্যবরণ করেন ৬৪২ সালে। 

মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার উত্তরসূরি খলিফা আবু বকর ও উমরের অধীনে সামরিক নেতৃত্বদান এবং নিজস্ব রণকৌশলের জন্য তিনি খ্যাত। খিলাফতের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে থাকাবস্থায় খালিদ একশটিরও বেশি যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন। এসকল যুদ্ধ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, সাসানীয় সাম্রাজ্য, তাদের মিত্র এবং অন্যান্য আরব গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছে। তার কৌশলগত অর্জনের মধ্যে রয়েছে রিদ্দার যুদ্ধের সময় আরব উপদ্বীপকে ঐক্যবদ্ধকরণ এবং ৬৩২ থেকে ৬৩৬ সালের মধ্যে পার্সিয়ান মেসোপটেমিয়া এবং রোমান সিরিয়া বিজয়। ইয়ামামা, উলাইস, ফিরাজে তার ফলাফল নির্ধারণী বিজয় এবং ওয়ালাজা ও ইয়ারমুকে তার কৌশলগত সাফল্যের জন্যও তাকে স্মরণ করা হয়।

একনজরে বড় যুদ্ধসমূহ
১- ৬২৫, উহুদের যুদ্ধ, খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলিমদের পরাজিত করেন।
২- ৬২৯, মুতার যুদ্ধ, বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধে খালিদ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে বৃহদাকার বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে বিজয়ের জন্য তিনি ‘’আল্লাহর তলোয়ার’’ উপাধিতে ভূষিত হন
৩- ৬৩৩ এপ্রিল, শেকলের যুদ্ধ, পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধে খালিদ পার্সিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করেন।
৪- ৬৩৩ মে, ওয়ালাজার যুদ্ধ, পিনসার মুভমেন্ট কৌশল ব্যবহার করে খালিদ পারস্যের বৃহদাকার বাহিনীকে পরাজিত করেন।
৫- ৬৩৩ মে, উলাইসের যুদ্ধ, খালিদ বিন ওয়ালিদ পারস্য সাম্রাজ্যের বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করেন
৬- ৬৩৩ নভেম্বর, জুমাইলের যুদ্ধ, খালিদ পারস্যের বাহিনীকে পরাজিত করে মেসোপটেমিয়ার অধিকাংশ জয় করেন।
৭- ৬৩৪ জানুয়ারি, ফিরাজের যুদ্ধ, পারস্য, রোমান ও খ্রিষ্টান আরবদের সম্মিলিত জোটবাহিনীকে পরাজিত করে মেসোপটেমিয়া বিজয় সম্পূর্ণ করেন।
৮- ৬৩৪ জুন-জুলাই, বুসরার যুদ্ধ, খালিদের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী বুসরা শহর অবরোধ করে অপেক্ষাকৃত বৃহৎ রোমান ও খ্রিষ্টান আরব বাহিনীকে পরাজিত করে।
৯- ৬৩৪ জুলাই, আজনাদয়ানের যুদ্ধ, খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে মুসলিম ও বাইজেন্টাইনদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ। এতে মুসলিমরা বড় আকারের বিজয় অর্জন করে
১০- ৬৩৫ ফাহলের যুদ্ধ, খালিদ বিন ওয়ালিদে অপেক্ষাকৃত বৃহদাকার বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করে ফিলিস্তিন অঞ্চল, জর্ডান ও দক্ষিণ সিরিয়া জয় করেন।
১১- ৬৩৬ আগস্ট, ইয়ারমুকের যুদ্ধ, খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে মুসলিমরা বৃহদাকার বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করে।
১২- ৬৩৭, লোহা সেতুর যুদ্ধ, বাইজেন্টাইন বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে খালিদ বিন ওয়ালিদ উত্তর সিরিয়া ও দক্ষিণ তুরস্ক জয় করেন।
১৩- ৬৩৭, হাজিরের যুদ্ধ, খালিদ বিন ওয়ালিদ কিন্নাসরিনের ঘাটিকে পরাজিত করেন।

সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকে তিনি সিরিয়ার এমেসায় বসবাস করছিলেন। তার কবর বর্তমানে খালিদ বিন ওয়ালিদ মসজিদের অংশ। খালিদের কবর ফলকে তার নেতৃত্বাধীনে জয় হওয়া ৫০টি যুদ্ধের নাম (ছোট যুদ্ধ ব্যতীত) উৎকীর্ণ রয়েছে।  তিনি যুদ্ধে শহিদ হতে ইচ্ছুক ছিলেন তাই বাড়িতে মৃত্যুর পূর্বে তিনি বিমর্ষ হয়ে যান।

মৃত্যুর পূর্বে তিনি বেদনা নিয়ে বলেন, আমি শাহাদাতের ইচ্ছা নিয়ে এত বেশি যুদ্ধে লড়াই করেছি যে আমার শরীরের কোনো অংশ ক্ষতচিহ্নবিহীন নেই যা বর্শা বা তলোয়ারের কারণে হয় নি। এরপরেও আমি এখানে, বিছানায় পড়ে একটি বৃদ্ধ উটের মতো মারা যাচ্ছি। কাপুরুষদের চোখ যাতে কখনো শান্তি না পায়।
— খালিদ বিন ওয়ালিদ

এ কথা শুনে খালিদের স্ত্রী বলেন : "আপনাকে সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তলোয়ার) উপাধি দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর তলোয়ার ভাঙতে পারে না আর তাই আপনি শহিদ হিসেবে নয় বরং বিজয়ী হিসেবে মৃত্যুবরণ করবেন।"

এই মহান বীর ৬৪২ সালে সিরিয়ায় ইন্তেকাল করেন। 

পঠিত : ২৩০৩ বার

মন্তব্য: ০