Alapon

সালাম নিয়ে ভুল ধারণা



ইদানীং পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে একটা কথা বারবার মনে জানালায় উঁকি দিচ্ছে যে—আমরা কি ধীরে ধীরে সালাম দিতে ভুলে যাচ্ছি? বা সালাম কি কেবল এলিট শ্রেণির প্রতি সাধারণ মানুষের কোনো সম্মানজনক সম্বোধন? অথচ মুসলমানদের প্রতি তাদের প্রধান নেতা, প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা হচ্ছে আগে সালাম। এরপর কথা। বাক্যের শুরু হবে, সম্বোধনের আবির্ভাব ঘটবে সালামের মাধ্যমে। আসসালামু কবলাল কালাম। আগে সালাম। পরে কালাম।

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এই পথ থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে মুসলমানগণ। তারা এখন আর সালাম দিয়ে কথা শুরু করেনা। এটা প্রধানত দুই কারণে হয়। যথা :

০১. প্রথম কারণ হচ্ছে হীনমন্যতা।
০২. দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে অহংকার।


আর এই অহংকার দূর করার জন্যই আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন বেশি বেশি সালাম প্রদানের। এবং তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম করে সে অহংকার মুক্ত।

সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি আদব আছে, তারমধ্য অন্যতম একটি আদব হলো আগে সালাম দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আগে আগে সালাম দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করতে উদ্ধুদ্ধ করেছেন। অন্য একজন এসে আমাকে সালাম দেবে, আর আমি আমি ভীষণ ভাব নিয়ে ইশারায় সেটার জবাব দেবো—আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে আমাদের তো এই ক্ষুদ্র মনোভাব পরিত্যাগ করা উচিৎ। কেউ আমাকে এসে সালাম দেবে, এই আশা করা তো একটা জাহিলিয়াত। বরং প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ হচ্ছে সবাইকে মিষ্টি হেসে নিজ থেকেই আগে আগে সালাম প্রদান করা। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যিনি প্রথমে সালাম দেন তিনি আল্লাহর কাছে উত্তম ব্যক্তি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমরা অনেকেই সালাম পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করি অথবা অহংকার করে নিজেকে সালাম পাওয়ার অধিকারী বলে মনে করে বসে থাকি।

আমরা কেন যেনো এখন ভাবতেই পারিনা যে—অফিসের বস তার কোনো অধঃস্থন কর্মচারীকে, শিক্ষক তাঁর ছাত্রকে, নেতা তার কর্মীকে, ধনী ব্যক্তি গরীবকে সালাম দেবে!

এর পাশাপাশি এখন নতুন একটা জাহিলিয়াত এসে আমাদের মধ্যে চেপে বসেছে। সেটা হচ্ছে কেউ একজন সালাম দিলে সেই সালামের উত্তর না দেওয়াটাও একটা ভাব, স্মার্টনেস, কুলনেস, এটিটুউড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অথচ এটাও ক্ষেত্র বিশেষ অহংকারের পর্যায়ে পড়ে(যদিও উত্তর না দেওয়াটা সব সময় অহংকারের কারণে হয় না। কিছু বাস্তবতা ও ব্যস্ততা থাকে)।

যাই হোক, সালামের ক্ষেত্রে এ ধরনের অহংবোধ একজন মুসলমানের কখনই কাম্য হতে পারেনা। আর আল্লাহ রব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে সূরা লোকমানের ১৮ নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন, তিনি কোনো দাম্ভিক তথা অহংকারী ব্যক্তিকে পছন্দ করেননা। সালামের বিষয়টা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ একটা আমল যে, একবার আল্লাহর রাসুলকে জিগ্যেস করা হয়েছে ইসলামের উত্তম কাজ কোনটি? জবাবে তিনি বলেছেন, ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো, পরিচিত-অপরিচিত সকলকেই সালাম প্রদান করা।

আপনি একটুখানি উক্ত হাদিসের দিকে খেয়াল করুন, আল্লাহর রাসুল কী বলেছেন? তিনি বলেছেন পরিচিত হোক বা অপরিচিত— সকলকেই সালাম প্রদান করা। তিনি কিন্তু পরিচিত বড়ো ভাই আএ বড়ো লোক তথা ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দেখে দেখে কিন্তু সালাম দিতে বলেননি। অথচ হারিয়ে যাওয়া সালামের এই সংস্কৃতির মধ্যে এখনও যারা টুকটাক সালামের বিষয়ে অভ্যস্ত, তারাও এখন আর অপরিচিত ব্যক্তিদের খুব একটা সালাম দেয় না। অথচ রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী সালামের আদব হলো স্বদেশী-বিদেশি, সাদা-কালো, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলকেই সালাম করা।

এখানে একটা বলতেই হচ্ছে যে, সালামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাদরাসার আলিমদের চেয়েও বড়ো এক বিপ্লব এনেছে তাবলীগ জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ভাইয়েরা এবং ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা ধনী গরীব, বড়ো-ছোটো, রিক্সাওয়ালা-ভ্যানওয়ালা নির্বিশেষে সবাইকেই বিনা দ্বিধায় নিজ থেকে বিনয়ের সাথে সালাম বিনিময় করতে দেখেছি। যদিও বর্তমানে কেন যেনো এই দুই অঙ্গনেও এর ঘাটতি প্রচুর পরিমাণে পরিলক্ষিত হচ্ছে ! মূলত ঘাটতি পরিলক্ষিত হওয়াটাও একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কারণ, তারাও তো এই সমাজেরই মানুষ। সমাজের প্রভাব তাদের মধ্যেও তো আসতে পারে।

যাই হোক, যা বলতে নিচ্ছিলাম, সেটা হচ্ছে এই যে আল্লাহর রাসুলের এই নির্দেশটা, তাবলীগ জামায়াতের ভাইয়েরা এই নির্দেশের বাস্তবায়ন করার কারণে দেখেছি অনেক মানুষ তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করতে। এমনকী শিবিরকে নিয়েও কথিত আধুনিক বহু ছেলেপেলেকে দেখেছি এই বলে ঠাট্টা করতে যে—এরা রিক্সাওয়ালা, দারোয়ান, বাচ্চাকাচ্চা সবাইকেই দৌড়ে গিয়ে সালাম করে ! মানে কথিত ওই স্মার্ট ব্যক্তিদের কাছে স্কুল কিংবা বাড়ির দারোয়ান, রিক্সাওয়ালা দিনমজুর— ওনারা হচ্ছে সালাম পাওয়ার অযোগ্য। ওনাদের সালাম দিলে জাতে উঠা যায় না, কিংবা জাত থাকেনা!

এমনকী আমরাও যখন ময়দানে কাজ করেছি, তখন স্কুল কলেজ-লেভেলের (ঢাকার) কোনো তরুণকে যখন সালাম করেছি; তখন তাদের অনেকের জবাব ছিলো এরকম যে—ভাই, আপনাকে তো ছিলাম না! মানে তাদের মগজে এই জিনিসটা গেথে গিয়েছে যে,অচেনা-অজানা ও অপরিচিত কাউকে সালাম দিতে নেই। আবার পরিচিত কোনো ছোটো ভাইকে যখন সালাম দিতাম বা এখনো দিই, কেউ কেউ হেসে ওঠে বলতো—ভাই, আপনি আমাকে সালাম দিলেন!!

যাই হোক ইসলামি ব্যক্তিত্ব আর ভ্রাতৃত্বের দাবি হচ্ছে বেশি বেশি সালাম করা। সালামের সংস্কৃতিকে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তোলা। আমাদের প্রাণপ্রিয় সম্মানিত নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন একটি গাছের আড়াল হয়ে পুনরায় দেখা হলেও উক্ত ব্যক্তিকে আবারও সালাম দিতে। চলুন, আমরা সালামের সেই সংস্কৃতিকে চালু ও শক্তিশালী করি। السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وبركاته
(আসসালামু আলাইকুম ওরহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু )



~রেদওয়ান রাওয়াহা
১১.০১.২৩ ইং

পঠিত : ৩৩১ বার

মন্তব্য: ০