Alapon

দাওয়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে ঢাবি প্রশাসনের বিদ্বেষ: উগ্র হিন্দুত্ববাদী জিঘাংসার বহিপ্রকাশ



বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে নাস্তিকতা ও ইসলাম বিদ্বেষের কেন্দ্রস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দাওয়াতে ইসলামি নামের একটি ইসলামিক অরাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ছাত্রদের জন্য একটি ইসলাহি (আত্মশুদ্ধিমূলক) সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারটি নিতান্তই একটি ছোটো সেমিনার কক্ষে অল্প কিছু মুসলিম ছাত্র, কয়েকজন মুসলিম অধ্যাপক ও কয়েকজন দ্বাঈ’কে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বলা যায় একটি ঘরোয়া আলোচনা সভার মতো করে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইসলাম, আত্মশুদ্ধি, ব্যাক্তিগত জীবনে দ্বীন চর্চা এসব নিয়েই আলোচনা হয়।

তবে এই সেমিনারটি এখন টক অব দ্যা ঢাবি। ঢাবির নাস্তিক, মুসলিম নামধারী হিন্দুত্ববাদী, কথিত বাঙালী সংস্কৃতিপন্থি উগ্র জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট, কথিত প্রগতিশীল, ভামপন্থি (বামপন্থি) সহ প্রায় সব শ্রেণীর ও ঘরানার ইসলাম বিদ্বেষীরা এখন উক্ত সেমিনারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, সেমিনারে অংশ নেয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া ইসলামের বিরুদ্ধে ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার তো রয়েছেই। তবে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে যে কেনো ঢাবির ইসলাম বিদ্বেষীরা এই সেমিনার নিয়ে এতোটা ক্ষেপে গেলো? আসল কারণ হলো যে ঢাবিতে কোনো ধরণের ইসলামি সংগঠন থাকুক, কোনো ধরণের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রী থাকুক – এটা ঢাবির ইসলাম বিদ্বেষী অংশটা সহ্য করতে পারে না। তারা চায় ঢাবি হোক ইসলাম ও মুসলিম মুক্ত। প্রগতিশীলতার নামে নোংরামী, নেশা-ভাঙ্গ, যৌনতা, অশ্লীলতা, ইসলাম বিদ্বেষ, বাংলাদেশের সামাজিক নিয়ম-কানুনের প্রতি বিদ্বেষ নিয়েই চলুক ঢাবি। এবং বাংলাদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভাঁড়ত (ভারত) এর আগ্রাসনের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হোক, এটাই ঢাবির ইসলাম বিদ্বেষীকুলের মূল লক্ষ।

কারণ ইসলাম যতোদিন বাংলার বুকে থাকবে, ততোদিন ভাঁড়ত বাংলাদেশকে দখল করে তাদের করদ রাজ্যে পরিণত করার মাধ্যমে অখন্ড ভাড়ঁত তৈরির মিশন সম্পন্ন করতে পারবে না। তাই ইসলাম হলো ভাঁড়তীয় আগ্রাসনের সামনে মূল প্রতিরোধ শক্তি। এখন এই প্রতিরোধ শক্তি যদি দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ অংশকে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত করে, তাহলে ভাঁড়তীয় আগ্রাসনের সামনে এই বৃহৎ জনশক্তি সীসা ঢালা প্রাচীরের মতো প্রতিরোধ নিয়ে দাঁড়াবে। যার ফলে বাংলাদেশ হবে ভাঁড়তীয় সাম্রাজ্যবাদের কবরস্থান। বাংলাদেশ তো দখল করতে পারবেই না, উলটো সেভেন সিস্টার্স ও চিকেনস নেক হাত ছাড়া হবে দাদাদের হাত থেকে। তাই ইসলামকেই দাদারা প্রধাণ শত্রু মনে করে।

এখন জনগণকে ইসলাম বিমুখ করার জন্য দাদারা যে কয়টা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলো তার মাঝে একটা হলো প্রজেক্ট ঢাবি, যার মাধ্যমে ঢাবিতে কৌশলে এক শ্রেণীর শিক্ষক তৈরি করা হয়, যারা তীব্র মুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষী। কলকাতা থেকে আমদানী করা বুদ্ধিবৃত্তিক বয়ান দিয়েই তারা ১৯৪৭ সালের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে এই শ্রেণীর শিক্ষক তৈরি করেছে এবং প্রকৃত মুসলিম শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ও মুসলিম শিক্ষকদের কৌশলে চাকুরীচ্যুত করার কাজটা করেছে। যার ফলে ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষকদের এই অংশটিই ঢাবিতে এমন এক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশ তৈরি করেছে যে, এই পরিবেশে প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান, বিজ্ঞানের মৌলিক জ্ঞান ও ইতিহাসের মৌলিক জ্ঞান ছাড়া যে ছেলেটা আসবে সে নাস্তিক হতে বাধ্য। আর যদি নাস্তিক নাও হয়, নামে মাত্র মুসলিমও যদি থাকে, তাহলেও সে মূলত হবে মুসলিম বিদ্বেষী ও ইসলামী বিধানের ব্যাপারে উদাসীন।

ঢাবিতে যেসব ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসে, তারা প্রায়ই আসে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। তাদের অনেকেরই প্রকৃত ইসলামী জ্ঞান থাকে না। তার কারণে এসব শিক্ষকরা ও ক্যাম্পাসে বিদ্যমান বিভিন্ন তথাকথিত সাংস্কৃতিক সংঠন এদের এমন একটা সিস্টেম এর মধ্যে এনে সিস্ট্যাম্যাটিক্যালী ব্রেইন ওয়াশ করে যে এদের বড় একটি অংশ ইসলাম বিদ্বেষ নিয়ে বের হয়। এটা এ জন্যই করা হয় যে এরা কর্মক্ষেত্রে ও বিভিন্ন সরকারী বড় বড় পদে বসে যাতে দাদাদের ইসলাম বিদ্বেষী এজেন্ডা বাস্তবায়নের সহায়ক হয়।

এভাবে ঢাবিতে এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক ব্যাপক ইসলাম বিদ্বেষী স্টাবলিশমেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, চলচিত্র, প্রশাসন, সাংস্কৃতিক অঙ্গন সহ প্রতি ক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর মূল কেন্দ্র এই ঢাবি।

তবে আল্লাহর রহমতে ২০১৩ সালের পর থেকে অনলাইন ভিত্তিক ব্যাপক পরিমাণ ইসলামিক এক্টিভিজম, লেখালেখি, অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন দ্বাঈ ও ওয়ায়েজীনদের দাওয়াতী কার্যক্রম, ইসলামী বইয়ের প্রকাশনা ও অনলাইনের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে বর্তমান সারা দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক ব্যাপক ইসলামের জাগরণ হয়েছে। এখনকার তরুণরা বাংলাদেশের পূর্ববর্তী যেকোনো জেনারেশনের চেয়ে অধিক পরিমাণে ইসলামের প্রতি অনুগত। দিন দিন বাংলার প্রতিটি স্থানে প্র্যাক্টিসিং মুসলিমের পরিমাণ বাড়ছে। এখন রাস্তা ঘাটে দাঁড়ি ছাড়া পুরুষ দেখাটা দুষ্কর, আর টুপি-পাঞ্জাবী পড়াদের পরিমাণ ও বেড়েছে। এখনকার মসজিদগুলো কানায় কানায় তরুণদের দ্বারা পূর্ণ থাকে। বাংলার রাস্তায় এখন বোরখা ছাড়া তরুণী দেখা দুষ্কর। প্রায় ৯৮% তরুণী হিজাব নিকাব পড়ে। এর ঢেউ এসে লেগেছে বাংলায়, সেই ঢেউ ঢাবির পরিবেশকেও প্রভাবিত করেছে। সারাদেশের মতো ঢাবিতেও ব্যাপক পরিমানে ইসলামাইজেশন হচ্ছে। প্রচুর পরিমাণ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ঢাবিতে ভর্তি হচ্ছে। এর ফলে ইসলাম বিদ্বেষী মহলের চুলকানী কয়েক দশক ধরেই। এই বিষয়ে ঢাবির বিশিষ্ট ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষক ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল বিষোদ্গার করে বলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি “উচ্চতর মাদ্রাসায়” পরিণত হচ্ছে। এরপরও প্রচুর পরিমাণ শিক্ষার্থী মাদ্রাসা থেকেই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন। আর জেনারেল স্কুল কলেজ থেকে যারা ভর্তি হচ্ছে, তারাও ব্যাপক পরিমাণে ইসলামে প্রবেশ করছে ও ব্যাক্তিগত জীবনে প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হচ্ছে।

এর বিপরীতে ঢাবির ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষকবৃন্দ, সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন বামপন্থি সংগঠন, বিভিন্ন তথাকথিত প্রগতিশীল সংগঠনের নির্যাতন নিপিড়ন বেড়েই চলছেনে।

ঢাবিতে বর্তমানে কোনো ইসলামী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নেই। যে কয়েকটা ছোটো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন আছে, তারাও টিকে আছে নানাবিধ নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করে। তাদের কোনো কার্যক্রমই নেই। অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠনগুলোকেও নানা কৌশলে দমিয়ে রাখা হয়েছে। এরপরও ইসলামের জোয়ার থামিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ঢাবিতে ব্যাপক ভাবে ছেলে মেয়েরা ইসলামে প্রবেশ করছে। এটা দেখে ভীতসন্ত্রস্ত ঢাবির ইসলাম বিদ্বেষী মহল। তাদের ভাঁড়তীয় ও পশ্চিমা প্রভুদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার কেন্দ্রস্থল ঢাবিই যদি ইসলামের ছায়া তলে এসে পড়ে, তবে এদেশকে ভাঁড়তের উপনিবেশে পরিণত করবে কিভাবে? কিভাবে এই দেশ থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করা যাবে? তাই তারা আজ ভীত। সেই ভীতি থেকেই ঢাবিতে হিজাব নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষক ও ছাত্রদের দ্বারা নিয়মিত হ্যারাসমেন্ট এর স্বীকার হচ্ছে মুসলিম শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া সব ধরণের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠনের কার্যক্রম কৌশলে বন্ধ করা হয়েছে।

এখন সে যায়গায়, নিতান্তই নিরীহ গোছের সুফিবাদী বেরেলভী ঘরানার আত্মসুদ্ধিমূলক সংগঠন “দাওয়াতে ইসলামি” যখন অল্প কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে ঢাবির ছোটো একটি সেমিনার রুমে নিতান্তই ঘরোয়া পরিবেশে একটি ছোটো ঘরোয়া আলোচনা সভা করলো, তখনই ঢাবির ইসলাম বিদ্বেষী, হিন্দুত্ববাদী, নাস্তিক, কথিত প্রগতিশীল, বামপন্থি – সহ সব ঘরানার মুসলিম বিদ্বেষীদের চেতনায় আঘাত লাগলো।

এখন তারা কি করবে না করবে ভেবে না পেয়ে উপায় খুঁজছিলো যে কিভাবে দাওয়াতে ইসলামির এই আলোচনা সভার বিরুদ্ধে নিজেদের মনে লুকিয়ে থাকা ইসলাম বিদ্বেষ উগড়ে দেয়া যায়। সেই চিন্তা থেকেই অবশেষে তারা খুঁজে বের করে যে দাওয়াতে ইসলামি একটি সংগঠন যার কেন্দ্রস্থল পাকিস্তান। ব্যাস, এবার “পাকিস্তনী সংগঠন” এই অজুহাতে শুরু হয় বিষবাষ্প ছড়ানো। ঢাবিতে মুসলিম বিদ্বেষীরা বিষোদগার শুরু করে। প্রতিবাদ সভা থেকে শুরু করে মিছিল কিছুই বাদ যায় নি। আর বাংলাদেশের সব সেক্যুলার, নাস্তিক, প্রো-ভাঁড়তীয়, প্রো-হিন্দুত্ববাদী, উগ্র জাতীয়তাবাদী মিডিয়াগুলোও এক যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে দাওয়াতে ইসলামির বিরুদ্ধে।

উক্ত আলোচনা সভায় অংশ নেয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আলোচনা সভায় অংশ নেয়া এক শিক্ষককে তো জোর পূর্বক ক্ষমাও চাওয়ানো হয়েছে।

দোষ হিসেবে তারা বলছে নে, দাওয়াতে ইসলামী পাকিস্তানী সংগঠন, দাওয়াতে ইসলামীর অনুষ্ঠানে উর্দু ভাষী আলোচক কেনো এলো, কেনো উর্দুতে আলোচনা করলো। এসব খেলো যুক্তি। তাদের আসল বিদ্বেষ ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে।

ঢাবির এই মুসলিম বিদ্বেষীদের উদ্দেশ্য কোরআনের একটা আয়াতই বলবো,
“তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলোকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নুরকে পরিপূর্ণ করবেনই। যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।“ (সূরাঃ আস-সফ, আয়াত-৮)

সুতরাং, ওরা যতোই ইসলাম ও মুসলিমদের উপর জুলুম নির্যাতন করুক, যতোই আমাদের ধ্বংসের চেষ্টা চালাক, এর দ্বারা ইসলাম আরো শক্তিশালী হবে। ২০১৩ সালের পর থেকে আমাদের উপর কম জুলুম নির্যাতন হয় নি। এতো জুলুম নির্যাতন, এরপর মুসলিম তরুণ সমাজ ঝড়ের বেগে ইসলামে প্রবেশ করছে। এটাই ইসলামের বিজয়ের লক্ষণ। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে ইসলামকে মুছে দেয়ার চেষ্টা কম হয় নি। ফেরাউন চেষ্টা করেছিলো, নমরুদ চেষ্টা করেছিলো, মোঙ্গলরা চেষ্টা করেছিলো, ক্রুসেডাররা চেষ্টা করেছিলো, সাম্প্রতিক সময়ের পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকাও চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু কেউই ইসলামকে ও মুসলিমদের মুঁছতে তো পারেই নি, উল্টো নিজেরাই বিলিয়ন হয়ে গিয়েছে। সুতরাং তোমাদের অত্যাচার আমাদের আরো শক্তিশালীই করবে।

লেখাঃ ড. মোহাম্মদ আলী

পঠিত : ৪১১ বার

মন্তব্য: ০