Alapon

"ইংরেজ ডাকাতদের চাওয়া, আজকের শিক্ষাব্যবস্থা এবং আমাদের করণীয়"




এ কথা তো আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে বৃটিশদের প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা। সুতরাং এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দিনশেষে এমন কিছু মানুষ অতি-অবশ্যই বের হবে, যারা হবে তাদেরই এদেশীয় এজেন্ট। তাদের চিন্তা চেতনা, তাদের আদর্শ-উদ্দেশ্য এই শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষেরাই আমাদের সমাজে, আমাদের সংস্কৃতিতে, আমাদের আমাদের সভ্যতায়, আমাদের রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করবে। করেও যাচ্ছে।

হুবহু এই এটা-ই চেয়েছেন ইংরেজরা। এই সম্পর্কে কোনো রাখঢাক না করে স্পষ্ট একটা সত্য কথা বলেছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ পণ্ডিত, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক নেতা টমাস বাবিংটন মেকলেমেকেলে বলেন
আমাদেরকে এমন একটা শ্রেণি গড়ে তুলতে হবে। যারা রক্ত-মাংসে, গড়নে-গঠনে ভারতীয় হবে বটে- কিন্তু রুচি-অভিরুচী, মত-পথ, চিন্তা-চেতনায়, নীতি-নৈতিকতা এবং বুদ্ধিমত্তায় হবে সাচ্চা ইংরেজ! তারাই পরবর্তীতে আমাদের হয়ে তাদের জনগণের মধ্যে কাজ করবে।

উক্ত ভদ্রলোক তাদের পার্লামেন্টে (বৃটিশ পার্লামেন্টে) আরো বলেন,
‘আমি ভারতবর্ষের (বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান) দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ঘুরে বেড়িয়েছি, কিন্তু কোথাও একজন ভিক্ষুকও আমার চোখে পড়েনি, একজন চোরও আমি দেখতে পাইনি। সেখানে সম্পদের এতো বেশি প্রাচুর্য এবং সেখানের মানুষগুলো এতোটাই যোগ্যতাসম্পন্ন ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী যে, তাদেরকে আমরা কখনোই পদানত করতে পারবোনা, যদি না আমরা তাদের মেরুদণ্ডকে ভেঙে গুড়িয়ে ফেলতে পারি। আর তাদের সেই মেরুদণ্ড হচ্ছে তাদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই হচ্ছে। এ কারণে আমার প্রস্তাব হচ্ছে, আমরা সেখনকার প্রচলিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে এমন একটি শিক্ষা ও সংস্কৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করবো; যাতে সেখানকার (ভারতীয়) প্রতিটি নাগরিকই ভাবতে শেখে যে—যা কিছু বিনদেশি-ইংরেজদের তৈরি, তা-ই ভালো ও নিজেদের দেশের থেকে অধিকতর উৎকৃষ্ট। আর এভাবেই তারা নিজেদের ওপর শ্রদ্ধা হারাবে, তাদের দেশজ সংস্কৃতি হারাবে এবং এমন একটি পরাধীন জাতিতে পরিণত হবে, ঠিক আমরা যেমনটি তাদেরকে চাই।’


হ্যাঁ, এগুলো কোনো বানানো গালগল্প নয়। বৃটিশরা এমনটাই চেয়েছিলেন। এমনটাই বলেছিলেন। এবং সে অনুযায়ী গড়ে তুলেছেন শিক্ষাব্যবস্থাও। ভেঙে চুরচুর করে ফেলেছেন মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাব্যবস্থা। আর এর ফলেই আমরা এখন আমাদের সমাজ-সভ্যতায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত যারা, তাদের বড়ো একটা অংশকেই দেখতে পাই নির্দ্বিধায় তাদের দাসত্ব আর আনুগত্য করতে। তাদের চিন্তা-চেতনা, আদর্শ-উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধকে বাংলাদেশের আপামর জনতার কাছে ছড়িয়ে দিতে।

এর বাহিরেও যারা মন থেকে ইংরেজ দস্যুদের ঘৃণা করে, তাদেরও বিশাল একটা অংশ তাদের মগজেই চিন্তা করে। তাদের জবানেই কথা বলে। তাদের মতো করেই সাফল্য আর ব্যর্থতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে। এই টাইপের মানুষের সংখ্যাটাই বেশি আমাদের মধ্যে—ইংরেজকে বাহ্যিকভাবে ঘৃণা করে, কিন্তু তাদের চেতনায় নিজেদের চালিত ও তাড়িত করে। এবং যারা ইসলামের কথা বলেন, তারাও এ থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত নয় (আলিয়া) মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাও। এটি অবশ্য তাদের দোষও নয়। দোষ হচ্ছে সিস্টেমের। সিস্টেমটাই এমন। এখানে ভোগবাদ, পুঁজিবাদ, বস্তবাদের দাস হওয়া ছাড়া উপায়ও নেই। এখানে শেখানোই হয় কীভাবে ভোগবাদী-বস্তুবাদী হওয়া যায়। কীভাবে পুঁজিপতি হওয়া যায়। আর যারা স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন, যাদের পরিবার দীন-ধর্ম, আল্লাহ-রাসুল (সা.) ও পরকাল নিয়ে সচেতন নয়; সে-সব পরিবার থেকে তো আগাগোড়া খাঁটি সেকুলার-লিবারেল ও নাস্তিকই বের হয়।

এই যখন বাস্তবতা, তখন নিঃসন্দেহে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে। চেষ্টা করতে হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যেনো সঠিকভাবে গড়ে তোলা যায়। অন্তত পক্ষে নিজেদের কারিকুলামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি স্কুল বলছি, মাদরাসা নয়! মাদরাসা তো আমাদের লাগবেই। আমরা আমাদের হাতের নাগালে, আমাদের প্রভাবিতদেরকে মাদরাসাতেই দেবো নিশ্চয়ই। কিন্তু যারা মাদরাসাকে গুরুত্ব দেয় না, তাদের জন্যই স্কুলের প্রয়োজন। কারণ, আমি-আপনি স্কুলের বর্তমান পাঠ্যক্রমের ভয়াবহতা নিয়ে যতোই বয়ান করি না কেন; বড়ো একটা অংশ অতি-অবশ্যই থাকবে, যারা শতো কিছুর পরেও সন্তানকে স্কুলেই পড়াবে। সে কারণে দীনি-মূল্যবোধ, ইসলামি ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাপকভাবে প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল তৈরি করতে হবে। ঢালতে হবে সেখানে প্রচুর মেধা ও শ্রম। বিনিয়োগ করতে হবে অগণিত অর্থ। তাহলে হয়তো সেকুলারিজম, নতুন করে গজিয়ে ওঠা লিবারেলিজম ও এথেইজমের গোড়ায় কিছুটা হলেও পানি দেওয়া যাবে।

~রেদওয়ান রাওয়াহা
২১.০১.২৩ ইং

পঠিত : ৩২৯ বার

মন্তব্য: ০