Alapon

মিশরের সরকারী শিক্ষাব্যবস্থা কুরআনের বিরুদ্ধে যেভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল...



মরহুম মুহাম্মাদ আলী পাশার সময়কাল এবং তারপরও অল্প কিছুদিন শিক্ষাব্যবস্থায় কুরআনের প্রতি গুরুত্বারোপ অব্যাহত ছিল। যখন থেকে শিক্ষাব্যবস্থায় বিদেশিদের হাত প্রসারিত হতে শুরু করে, তখন থেকে কুরআনের প্রতি গুরুত্বারোপ কমতে আরম্ভ করে। শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকদের অধিকাংশই ইউরোপিয়ান— যারা ইসলাম ও কুরআনের শত্রু। তারা এমনিতেই কুরআনকে তাদের মতলব ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথে সবচেয়ে বড়ো অন্তরায় হিসেবে দেখে। তাই তারা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কুরআনকে ধীরে ধীরে দূরে সরাতে আরম্ভ করে। তাদের অজুহাত ছিল শিক্ষাব্যবস্থা হবে ধর্মনিরপেক্ষ।

এদেশের জনগণের মাঝে ইউরোপিয়ানদের অন্ধ অনুকরণের চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। তা তাদের এ কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফলে তারা উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে কুরআনকে সম্পূর্ণ সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এর কিছুকাল পরেই নিম্ন মাধ্যমিক স্তর থেকেও কুরআনকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। পরিশেষে তারা কুরআনকে একেবারে সীমিত পরিসরে আবদ্ধ করে ফেলে। তখন প্রাথমিক স্তর এবং জনগণের সাহায্যে পরিচালিত মক্তবগুলোতেই কেবল কুরআন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

কুরআন বিরোধিতার এই স্রোত এখানেই থেমে থাকেনি। বরং এটা শক্তিশালী ও প্রবলতর হতে থাকে। সরকারি বিদ্যালয়গুলো তাড়া করতে শুরু করে বেসরকারি মক্তবগুলোকে। আর সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে তাদের দাবি অনুযায়ী হিফযের বিভাগ থাকলেও সেটা পাঠ্যসূচির অপরিহার্য অংশ ছিল না। সকরকারি বিদ্যালয়ের নিয়ম ও পাঠ্যসূচির ধরনই সেখানে হিফযকে এক প্রকার অসম্ভব বানিয়ে দিয়েছে। অবশিষ্ট যে মক্তবগুলো ছিল সেগুলোও মনোযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের চাপপ্রয়োগের কাছে অসহায় হয়ে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। মন্ত্রণালয় সরকারী শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যাপক করার জন্য নতুন মক্তব খোলা নিষিদ্ধ করে। প্রচুর শর্তের বেড়াজাল তৈরি করা হয়। ফলে মক্তবের শিক্ষকেরাও সেগুলো পরিচালনায় অক্ষম হয়ে গেলেন। আমাদের আশংকা দৃঢ়রূপ গ্রহণ করল যে, অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই এই মক্তবগুলোর আর কোনো চিহ্নই বিদ্যমান থাকবে না।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়ম ছিল, প্রথম চার বছরে কুরআন হিফয করানো হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ অনুযায়ী, হিফযের জন্য কুরআন কারিমকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় কুরআন হিফযের অপরিহার্যতা বাতিল করা হয়। যতটুকু সম্ভব হবে, ততটুকু হিফয করার নিয়ম চালু করা হয়। অর্থাৎ পাঠ্যবিষয় ও পাঠ্যপুস্তকের আধিক্যের কারণে যদি কোনো অংশই হিফয করানো সম্ভব না হয়, তাহলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসিত হবে না। কারণ তারা মন্ত্রণালয়ের অপরিহার্য পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করেছে। এভাবেই কুরআনের শত্রুরা কুরআন মাজিদ হিফযের অবশিষ্ট দুই ঝর্ণাধারার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছিল।

এই ব্যবস্থা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে যে ভয়ংকর পরিণতি আমরা দেখতে পাব তা হলো :

১. নতুন প্রজন্মের জন্য কুরআন হিফয এক প্রকার অসম্ভব হয়ে যাবে।
২. সেই প্রাচীন বিশুদ্ধ আরবি ভাষাও হারিয়ে যাবে। কারণ যুগ যুগ ধরে আরবি ভাষার প্রতি এতো গুরুত্বারোপ কেবল কুরআন কারিমের জন্যই ছিল।
৩. মুসলিমরা তাদের দ্বীনের মূলকে ভুলে যাবে।
.
মূল : ইমাম হাসান আল বান্না

পঠিত : ২৪৩ বার

মন্তব্য: ০