Alapon

হিসাব হয়; দুনিয়াতে কোন কিছুই হিসাবের বাইরে থাকে না।



গত পরশু রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই হতে পারতো আবরার হত্যাকান্ডের মত আরেকটা ঘটনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১ হলে শিবির সন্দেহে শাহরিয়াদ ও মাহমুদ নামের দুজন শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগ কর্মী শাহনেওয়াজ বাবু, মাজেদ, ইউসুফ তুহিন ও বায়েজীদ বোস্তামী রাতভর গায়ে কম্বল পেচিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়েছে। শাহরিয়াদকে পিটিয়ে তিনটা স্ট্যাম্প ভেঙ্গে ফেলেছে এই বর্বরেরা।

এসময় তারা শাহরিয়াদের বুকে সমানে লাথি মারতে থাকে। রাতভর নির্যাতনের পর তাকে আরেকটা টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে আবারও রড-স্ট্যাম্প দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। পাশাপাশি চলে চড়-থাপ্পড়, লাথি, ঘুষি।

শাহরিয়াদের জীবন বিপন্ন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা হস্তক্ষেপ করায় শেষমেশ সারারাত অমানুষিক নির্যাতনের পর তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এই সময় শাহরিয়াদকে চাপ দেয়া হয় ছাত্রলীগের অন্য আরেকটি গ্রুপের কর্মীদেরকে শিবির কর্মী হিসেবে স্বীকারোক্তি দিয়ে তাদেরকেও এই বর্বরদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য।
গতকাল সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে বিষয়টা ভাইরাল হওয়ায় এই ঘটনার প্রতিবাদ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সাধারন ছাত্রদের জন্য টর্চার সেল তৈরি করা এবং এর মাধ্যমে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে নিয়মিত হাজির না হওয়া ছাত্রদেরকে প্রোগ্রামে নিয়মিত হাজির হতে বাধ্য করাই মূলত হলে হলে ছাত্রলীগের রাজনীতির চালিকাশক্তি।
আমরা ক্যাম্পাসে থাকতেও বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীরা, কিন্তু কারো কোন বিচার হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর লক্ষ্য করেছি, ছাত্রশিবিরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছে, কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার সাংবিধানিক জাস্টিফিকেশান কি, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের সংবিধান তো ছাত্রশিবির বা কোন স্বীকৃত রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন করতে বাধা দেয় না।

আমার জানামতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরই একটি প্রতিষ্ঠান যাকে বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলতে হয়। পক্ষান্তরে, এখন পর্যন্ত আমরা লক্ষ্য করেছি, শিবির জুজুর ভয় দেখিয়ে পান থেকে চুন খসলে সাধারন ছাত্রদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানোকে জাস্টিফাই করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এক পক্ষের সাথে আরেক পক্ষের দ্বন্দে অন্য পক্ষকে ধরাশায়ী করতে তাদের কর্মী, বিশেষভাবে জুনিয়রদের শিবির ট্যাগ দেয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া গতরাতের ঘটনা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আবরার ফাহাদ মরে গিয়ে বেচে গেছে। সে যদি বেচে থাকতো, তাকে শিবির ট্যাগ নিয়ে ক্যাম্পাসের বাকি জীবনটা দুর্বিষহভাবে কাটাতে হত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে টর্চার সেল বানানোর জন্য আমরা ট্যাক্সপেয়াররা সরকারকে ট্যাক্স দেই না। যেসমস্ত সন্ত্রাসী দেশব্যাপী সাধারন ছাত্রদের নির্যাতন করাকে নিজেদের অধিকার মনে করে, এদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আমরা চাই, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সোভিয়েত আমলের কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্প হওয়া থেকে মুক্তি পাক।
এই অমানিশা চিরস্থায়ী হবে না, এই দেশ চিরদিন কারো বাবার থাকবে না।

যারা আজকে মানুষকে পায়ের তলায় পিষে আরাম পাচ্ছো, আজ বাদে কাল হলের পদ যখন চলে যাবে, তোমাদের জুতার সুখতলি ক্ষয় হবে একটা চাকরির খোজে। জীবনে বহুবার দেখেছি, এই মার খাওয়া ছেলেরাই পরে এই সন্ত্রাসী বীরপূঙ্গবদের চাকরির ভাইভা নিয়েছে।
কে বলেছে হিসাব হয় না?

হিসাব হয়। দুনিয়াতে কোন কিছুই হিসাবের বাইরে থাকে না।

- ‍Sajal

পঠিত : ২১০ বার

মন্তব্য: ০