Alapon

নতুন ইতিহাস : মুসলিম শাসকেরা বহিরাগত আর লক্ষণ সেনেরা ভূমিপুত্র!



গায়কের এই ভাষাটি অনেকেই চিনে থাকবেন। মালিয়ালি ভাষার গান ভা-র-তী-য় কে/রা/লা/র মানুষের ভাষা। ভা-র-তী-য় তা/মি/ল/দের ভাষাও শুনতে প্রায় একই ধরনের। তারা উভয়েই দাবী করে এই ভাষাটি খাঁটি সংস্কৃত থেকে উদ্ভব এবং কে/রা/লা ও তা/মি/লে/র মানুষেরা পিওর সংস্কৃত উৎস থেকে শব্দমালা ব্যবহার করে। মধ্য প্রাচ্যে বাঙ্গালীরা মাত্রই জানে কে/রা/লা/র মানুষেরা দু'চোখে বাংলাদেশীদের দেখতে পারেনা। এর অন্যতম কারণ বাংলা ভাষা ও আমাদের সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা-বোধ। এই গায়ক নিয়ে আমার কোন কথা নেই, তার অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছে এটা তাদের ভাষার একটি সুন্দর গান।

এক সময় বাংলা ভূখণ্ডে এই কেরালার মানুষদের আধিপত্য হয়েছিল। তাদের অন্যতম পুরোধা ছিলনে বিজয় সেন। তিনি ১০৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় সেন বংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং একশত বছরের বেশী সময় ধরে বল্লাল সেন, লক্ষণ সেন ও তার পুত্রদের দ্বারা বাংলায় তাদের মর্জিমত শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলার জনগণের ইতিহাসে ওটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন সময়। সেন বংশ বাংলা ভাষা নিষিদ্ধ করেন। বাংলাকে পক্ষী ভাষা তথা কাক-চিলের ভাষা হিসেবে ঘৃণ্য অপবাদ দেয়! সংস্কৃত ভাষাই হবে (মূলত ওদের নিজেদের ভাষা) বাংলার জনগণের ভাষা এমন রাষ্ট্রিয় ঘোষণা দেন।

কেরালা থেকে সংস্কৃত পণ্ডিত ভাড়া করে এনে এ অঞ্চলের মানুষদের শিখতে বাধ্য করা হয়। যারা বাংলায় কথা বলবে তাদের কপালে নির্যাতন জুটত। সেনদের রাজত্বে বাংলার স্থানীয় বৌদ্ধদের মুলুৎপাটন করে। গরীব বৌদ্ধরা খুবই নীচু বর্ণের হিন্দুর স্বীকৃতি নিয়ে টিকে থাকে, বাকিরা উত্তরে পালিয়ে যায়। মহিপাল, রামপালের সহ অনেকেই বৌদ্ধদের নামকরা রাজা ছিল।

অন্যায় জবরদস্তিমূলক শাসনের কারণে, কোন সময় স্থানীয় মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করে বসে, এই ভয়ে সেন রাজার সদা ভয়ে থাকত। এই ভীতির মধ্যে পেট্রোল ঢেলে বসে ইখতিয়ার উদ্দীন বখতিয়ার খলজি। মাত্র সতের জন অশ্বারোহীর আগমনে আতঙ্কিত লক্ষণ সেন দুপুরের খানা-পাত ত্যাগ করে নদীয়ায় পালিয়ে যান। বখতিয়ার খলজি আজকের আফগান থেকে এসেছিলেন। সে এদেশে থেকে যায় নি, ফিরে গিয়েছিলেন। তাদেরকে পথ দেখিয়েছিল এই অঞ্চলের অভাগা মানুষেরাই। কেননা স্বজাতির মানুষ যখন নিজ জাতির উপর জুলুম করে, তখন নিজ জাতীর কিছু মানুষেরাই ভিন জাতীকে এদের দমানোর জন্যে সেধে সেধে নিয়ে আসে। ইতিহাসে এটা বহুবার প্রমাণিত।

যাক, আমাদের নতুন ইতিহাসে সকল মুসলিম শাসকদের বহিরাগত হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং কৌশলে সেন বংশের ওদেরকে নিজ জাতির অধীনে সম্মান দেওয়া হয়েছে! আমাদের আপত্তিটা ওখানেই। এদেশে ইসলাম এসেছে আরব ব্যবসায়ী ও ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে। ইতিহাস লিখতে গেলে লম্বা হবে।

এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যই, হিন্দু থেকে মুসলিম হয়ে এই দেশ শাসন করেছে এমন বহু রাজা বাদশাহ আছে। তারাও বহিরাগতদের তালিকায় পড়ে গেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, রাজা গণেশের ছেলে যদু! ইতিহাসে যিনি জালালুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ হিসেবে পরিচিত। সেভাবে মুর্শিদ কুলি খান হিন্দু ছিলেন। সেভাবে ইসা খানের বাবা সুলাইমান খানও হিন্দু ছিলেন। আরো উদাহরণ রয়েছে কিন্তু ওদের সবাই এখন বহিরাগত হয়ে গিয়েছেন।

ইতিহাস নিয়ে কেমন এক মতলবাজি।

পঠিত : ২৪৯ বার

মন্তব্য: ০