Alapon

ভূগোলে মুহাম্মদ আল ইদরিসি




খুব অল্প বয়স থেকেই তার পৃথিবী ঘোরবার নেশা ছিল। তার বয়স যখন ১৬ বছর তখন তিনি এশিয়া মাইনর ভ্রমনের জন্য মন স্থির করলেন। স্পেন, পর্তুগাল, ফান্স, হাঙ্গেরি ও ইংল্যান্ডের উপকূল পর্যন্ত তিনি ঘুরে আসবেন এই ছিল তার মনোবাঞ্ছনা। তারপর শুরু হলো তার কর্ম জীবন। সিসিলিতে তখন রাজা নরম্যান দ্বিতীয় রোজারিতে বসে আছেন। তার দরবারে তিনি চাকরি পেলেন ভূগোলবিদ হিসেবে। ১৫ বছর তিনি সেখানে কাজ করলেন। আমরা সবাই ট্যাবুলা রোজারিয়ানার নাম শুনেছি। এ এক বিশ্ববিখ্যাত মানচিত্র। এটিকে মধ্যযুগের সর্বাধুনিক মানচিত্র ও বলা যায়। এটি এই বিখ্যাত ভূগোলবিদ আলইদরিসিরই আঁকা। সকলে যাতে সহজভাবে মানচিত্রটি অনুধাবন করতে পারে তাই মানচিত্রের বিবরনসহ তিনি একটি বইও রচনা করলেন। "নুযহাতুল মুশতাক ফিখতিরাকিল আফাক " এই বইটি আরবিতে লেখা ছিলো। তার এই লিখিত বই পরবর্তীতে ভূগলগবেষক ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে প্রায় ৩০০ বছর ধরে পথ প্রদর্শন করে গিয়েছে। এই দিকে পট পরিবর্তন ঘটতে থাকে পৃথবীর ইতিহাসে। আল-ইদরিসির পূর্বপুরুষেরা স্পেনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন। এ থেকে মুক্তি পাবার জন্য তিনি সিসিলিতে চলে যান এবং সেখানে ১১৫৪ সালে ট্যাবুলা রোজারিয়ানা নামের বিখ্যাত বিশ্ব- মানচিত্রটি তৈরি করেন। মানচিত্র তৈরির সময় তিনি মুসলিম ব্যবসায়ী, পরিব্রাজক ও নরম্যান ভ্রমনকারীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এর সাথে তার নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি মানচিত্রটি তৈরি করে। কি নেই সেখানে? বানিজ্যপথ, প্রধান শহর তাছাড়াও আরও অন্যান্য ভৌগালিক বিবরনও তিনি তার বইতে উপস্থাপিত করেন। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি মুসলিম স্পেন এবং ইউরোপের উপকূলে যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলোর বিশাল নিখুঁত

বর্ননাকেও চিত্রিত করেন। তবে সেকালের স্থলভাগ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না থাকায় সেটি তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে পারেন নি। মানচিত্রের বিবরনটি ছিল আরবিতে। ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশকে সম্পূর্নভাবে তিনি তুলে ধরতে পেরেছিলেন। তবে আফ্রিকার উত্তর অংশ, হর্ন অব আফ্রিকা এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সম্পূর্ণ চিত্র তিনি তুলে ধরতে পারেন নি। আয়ারল্যান্ডা আল- কাবিরা নামের একটি দ্বীপ তিনি তার এই মানচিত্রে দেখিয়েছিলেন। আমরা অবাক হয়ে যাই এর বিবরন বর্তমান গ্রীনল্যান্ডের সাথে মিলে যায়। বই রচনার সময় তিনি বিভিন্ন পর্যটকের পরামর্শ নেন। তার মাধ্যমে তিনি চীনা বানিজ্যের তথ্যের সাথে সাথে কোরিয়ার শিলা রাজবংশের গল্প এনেছিলেন। “নুযহাতুল মুশতাক ফিকতিরাকিল আফাক" এর বংলা অর্থ হচ্ছে দিগন্ত চিরে স্বপ্নচারীর আনন্দভ্রমন। বইটিতে ৯ টি পান্ডুলিপি পাওয়া যায়। যার বেশিরভাগেই মানচিত্র আঁকা ছিলো। ১৯৭০ সালে বইটির অনুবাদ করা হয়। ঐ বইটিতে আর্টলান্টিক মহাসাগরের অবস্থিত বেশ কিছু দ্বীপের উল্লেখ করা হয়েছে। কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন মানচিত্র করের কাছে এই বইটি ছিল একটি আকর গ্রন্থ।

পঠিত : ৩১৬ বার

মন্তব্য: ০