Alapon

আল্লাহ আমার রব; কিন্তু রব শব্দের অর্থ কী...?



প্রায়ই এর অর্থ করা হয় প্রভু বা মনিব। রব্ব শব্দটি সম্পর্কে কয়েকটি জিনিস আমিও আগে জানতাম না। আজ পড়লাম যে, (رُبَّ بِالضَّمْ) রুব্বা বিদ দম্। রব্ব শব্দটি আরবিতে রুব্ব শব্দের সাথে সম্পর্কিত। আরবীতে রুব্বুন।

এর মানে হলো, কোন পানীয়। যা ফুটানো শুরু করলে সমস্ত দূষণ বাষ্পীভূত হয়ে যায়। শুধু অর্ধেক বাকি, কিন্তু সেটা বিশুদ্ধ। একইভাবে তারা যখন খেজুরের গুড় বানায় তখন তা জ্বাল দেয়। ফলে পানি বাষ্প হয়ে যায় আর গাঢ় অংশটি রয়ে যায়। একে আসলে রুব্ব এর প্রক্রিয়া বলে।

তারা একে আঙ্গুরের জন্যেও ব্যবহার করে রস কিংবা জুস বা এমন কিছু বানানোর জন্য। একইভাবে তেলের জন্যেও।

এর মানে হলো, রুব্ব বলতে এমন নরম বা তরল কিছুকে বুঝায় যা ঘন করা হয়, শক্ত করা হয়, পরিণত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেলে একে শক্ত করলেন যাতে তা দিয়ে কিছু করা যায়। যেন এর থেকে উপকার পাওয়া যায়। এরপর বলা হয়ে থাকে যে, অশুদ্ধি দূরীকরণ প্রক্রিয়া হলো রুব্ব।

রব্বের সাথে আপনার সম্পর্কও এই বিষয়গুলোকে প্রতিফলিত করে। রব্বের সাথে আমার সম্পর্ক স্থাপিত হলে তিনি আমাকে শক্তিশালী করেন এবং আমার দূষিত বিষয়গুলোকে দূরীভূত করে দেন। তিনি আমাকে উপকারী করে তোলেন। রব্বহীন আমি কোনো কাজেরই না। এগুলো রব্ব শব্দের পেছনের অন্তর্নিহিত অর্থ।

রিবা বললে ভাবতে পারেন সুদ। কিন্তু আসলে কুরআনে রিবা, রাবাত (رَبَتْ) মানে গাছ যা বেড়ে উঠে। তারবিয়া এসেছে রিবা থেকে। তারবিয়া মানে কোন বাচ্চাকে গড়ে তোলা। সে যেন ভালোভাবে গড়ে ওঠে তা দেখা। তারবিয়া গাছের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। ঠিক আছে ?

তাহলে বিষয়টা হচ্ছে, একদিকে রব্ব শব্দের অর্থের মাঝে আছে কোনো কিছুকে পরিণত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া; সেটাকে চূড়ান্ত করা। কিন্তু, পাশাপাশি এর অর্থের মধ্যে রয়েছে - এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনোকিছু চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে; তারবিয়া। দুটো বিষয়ই একসাথে।

তাই আল্লাহ আযযা ওয়া জাল এমন কেউ নন যিনি আপনাকে হঠাৎ করেই প্রস্তুতির সর্বশেষ পর্যায়ে নিয়ে যান বরং তিনি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সেখানে নিয়ে যান। এগুলো রাব্ব শব্দটির অর্থের অন্তর্ভুক্ত।

এরপর আসছে এর (مُصْطَلَحْ) মুসতলাহ অর্থ। অর্থাৎ, যেভাবে শব্দটি আরবি সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়। রাব্ব অর্থ এগুলোঃ এর মানে হলো সায়্যিদ যার অর্থ কর্তৃত্ব, মা.লিক (مَالِكْ) মানে স্বত্বাধিকারী, আল-মুন’ইম উপহার প্রদানকারী, ওয়াল মুরাব্বি লালনপালনকারী, ওয়াল কায়্যিম যত্নশীল, রক্ষণাবেক্ষণকারী। এগুলো হচ্ছে রব্ব শব্দের অর্থ।

মূলত রাব্ব মানে যিনি আপনার দায়িত্ব নিয়েছেন, আর আপনার যত্ন নেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনার বেড়ে উঠার পথে, আপনার বিকশিত হওয়ার যাত্রায় তিনি আপনার তত্ত্বাবধান করবেন। এটাই রব্ব শব্দের মৌলিক অর্থ। আর হ্যাঁ, তিনি আপনার চূড়ান্ত পরিণত অবস্থাতে পৌছানোও নিশ্চিত করবেন। এটাও রব শব্দটির অন্তর্ভুক্ত। তিনি তা নিশ্চিত করবেন।

তো, রব্ব শব্দটির সাথে সাধারনভাবে ‘স্বত্বাধিকারী’ অর্থের পার্থক্য দেখি। যেমন ধরুন, আমি একটি গাড়ির স্বত্বাধিকারী বা মালিক। এর মানে কি আমি গাড়িটির যত্ন নিই? নাও নিতে পারি। হয়তো গ্যারেজে ফেলে রাখি। আপনার বাচ্চাদের নতুন খেলনা দিলেন। তারা এটার মালিক এখন। এর মানে কি তারা খেলনাটিকে দেখেশুনে রাখবে? না।
আপনি কিছুর মালিক হয়ে সেটার যত্নআত্তি না-ও করতে পারেন। তাই না?

আপনার একটি গাছ থাকতে পারে, বাগানে আপনার একটি গাছ আছে। কিন্তু সেটাকে আপনি খাওয়ান না, পানি দেন না, যত্ন করেন না, আগাছা কাটেন না। কিছুই করেন না সেটার। এমন কি সম্ভব? হ্যাঁ!

তাহলে আপনি এটার মালিক হলেন বটে তবে রব হলেন না। রব্ব মানে কিছুর অধিকারী হবার সাথে সাথে সেটার যত্নও করা। রক্ষা করা সেটাকে। আপনি কষ্ট করে হলেও সেটার বিকাশ নিশ্চিত করেন। মুন’ইম অর্থ উপহার প্রদানকারী। রক্ষণাবেক্ষণকারী, কায়্যিম, রক্ষণাবেক্ষণকারী। এগুলো রব্ব শব্দের অর্থ।

এই শব্দ থেকে আরেকটি ক্রমোন্নতি বুঝুন। মানুষের সবচাইতে মৌলিক চাহিদা হলো সুরক্ষিত থাকা, কারো তত্ত্বাবধানে থাকা, তাদের নিজেদের বিকাশ আর অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া। এই চাহিদা কোন শব্দের মধ্যে চলে এসেছে? রব্ব।

আমার যদি একজন রব থাকেন, তখন আমার প্রয়োজনগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা হয়, আমি সুরক্ষিত থাকি, তাঁর সুরক্ষা ঘিরে থাকে আমাকে। আমার প্রয়োজনের চাইতেও বেশী তিনি দেবেন যদিও আমি এর যোগ্য না।

এটা বোঝা যায় যখন আপনি পড়েন, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। এটাই মনের মধ্যে আসে। এটা ইতিবাচক শব্দ। শব্দটি সেই বাচ্চার যত্ন নেয়ার মতো যে সবকিছুই চায়। যার এতো এতো চাহিদা। আর তার বাবা-মা হয় এক্ষেত্রে মুরাব্বি—তারবিয়া হতে—বাচ্চাটির জন্য, কারণ তাঁরা তার সব প্রয়োজনের প্রতি খেয়াল রাখেন। আল্লাহর ভূমিকাও একই রকম।

এগুলোই আমার মৌলিক চাহিদাঃ আমার চাহিদা রয়েছে সুরক্ষিত থাকার, চাহিদা রয়েছে জীবনোপকরণের, যত্নের, রক্ষনাবেক্ষনের, শরীরের সকল অংশের সঠিকভাবে কাজ করা নিশ্চিত করার। আমার এতো এতো চাহিদা আছে। এই সবকিছুরই খেয়াল রাখছেন আমার রাব্ব।

— নোমান আলী খান
— সূরাতুল নাস এর তাফসির থেকে এই অংশটুকু নেওয়া হয়েছে।

পঠিত : ৫৭৮ বার

মন্তব্য: ০