Alapon

ঝিনাইদহ গণহত্যা : বাংলাদেশ পুলিশের ভয়ংকর রূপ ( পর্ব – ০২)

সোহান তার ছোট বোনকে সাথে নিয়ে অপেক্ষা করছিল মায়ের। মা আসবেন ঢাকা থেকে। মাকে এগিয়ে নিতে জামতলায় অপেক্ষা করছিল সোহান ও মাসুমা। এইসময় একটি ইজিবাইকে চারজন লোক এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে সোহানকে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয় মাসুমা এবং উপস্থিত জনতা। সোহানকে সাদা পোষাকে তুলে নিয়ে যায় ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ থানার দুই এসআই নীরব হোসেন ও নাসির উদ্দিন। তাদের সাথে আরো দুইজন কনস্টেবল ছিল যাদের নাম জানা যায়নি।

ঝিনাইদহের নূর আলি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল মহিউদ্দিন সোহান। এটা ১০ এপ্রিল ২০১৬ সালের কথা। এরপর আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না সোহানকে। কিশোর সোহানের অপরাধ সে ছাত্রশিবিরের কর্মী। সমির উদ্দিন মণ্ডল হত্যার ঘটনায় জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে চায় ঝিনাইদহ পুলিশ। এজন্য সোহানকে অপহরণ করে ঝিনাইদহ সহকারী পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ। সবাই খুঁজতে থাকে সোহানকে। না, কোথাও পাওয়া যায় না তাকে। পুলিশ তার অপহরণের কথা অস্বীকার করে। মামলা, জিডিও কিছুই গ্রহণ করে নি।

১৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে সোহানের পরিবার। কিছু পত্রিকায় রিপোর্ট হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোহানের বাবা মো. মহসিন আলী। এ সময় সোহানের মা পারভিন খাতুন ও ছোট দুই ভাই বোন উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে মহসিন আলী জানান, গত ১০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে বিকাল ৫টার দিকে আমার বড় ছেলে কালীগঞ্জ নুর আলী কলেজের ছাত্র সোহান ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। এ সময় নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চারজন লোক ইজিবাইকে করে জোরপুর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে সোহান নিখোঁজ রয়েছে। ছেলের সন্ধানে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে আমি ক্লান্ত। সবাই আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। সোহানের মা অসুস্থ। ছেলের শোকে আরও অসুস্থ হয়ে পেড়েছে।

উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সোহানের বাবা এবং মা তাদের আশংকার কথা উল্লেখ করে বলেন, হয়তো পুলিশের লোকজন তার ছেলেকে নিয়ে গেছে। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা অক্ষত অবস্থায় সোহানকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবী জানান। তারপরও সোহানের খোঁজ পাওয়া যায়নি কোথাও। পুলিশ সাহায্য করা তো দূরের কথা বরং অস্বীকার করে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনের পর জিডি নিয়েছে তবে হুমকি ধামকি দিয়েছে। সোহানের পরিবারকে জঙ্গী পরিবার বলেছে।

তার পরের দিন অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল সোহানের মা স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিমের কাছে যান ছেলেকে বাঁচাতে। আনোয়ারুল আজিম তাকে তাড়িয়ে দেন। প্রায় ৩০০ গ্রামবাসী মিলে এমপির কাছে গিয়ে অনুরোধ করে পুলিশের কাছ থেকে সোহানকে ছাড়িয়ে আনতে। তারা এও বলে, আগামী দিন থেকে সোহান ও সোহানদের পরিবার আওয়ামী লীগ করবে। এমপি আনোয়ারুল আজিম দম্ভের সাথে তাদের বলে, তোদের আওয়ামীলীগ করা লাগবে না। আওয়ামী লীগ করার জন্য লোকের অভাব হবে না।

এর দুইদিন পর ২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে কালীগঞ্জ থেকে প্রায় ৫০ কি.মি. দূরে চুয়াডাঙ্গায় সোহানের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভুলাটিয়ার মাঠে ডান হাত ভাঙ্গা, চোখ উপড়ানো মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় মহিউদ্দীন সোহানের। কান্নায় ভেঙে পড়ে সোহানের বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজন! তারা তাদের সন্তানকে হারিয়ে ফেললো। সোহানের মা সেদিন আর্তনাদ করে বলেছিলেন "মারবেই যখন আমার বাবুটারে। চোখ তুইল্যা নিলো ক্যান বাবুর?"

এভাবে নৃশংস নির্যাতন করেও মহিউদ্দিন সোহানের কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিতে পারেনি পুলিশ। নানানভাবে নির্যাতন করে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে 'ধর্মান্তরিত' হওয়া সমির উদ্দিন মন্ডলের খুনের দায় চাপাতে চেয়েছে ঝিনাইদহ পুলিশ। সোহান ছিল তাদের ৫ম শিকার।

ঝিনাইদহ পুলিশের ৬ষ্ঠ শিকার হলেন ছাত্রশিবির নেতা শহিদ আল মাহমুদ। শহিদ আল মাহমুদ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের রজব আলীর ছেলে। ২০১৬ সালের ১৩ জুন ঝিনাইদহ শহরের বদনপুর থেকে সাদা পোষাকের একদল লোক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে গাড়িতে তুলে নেয়। পুলিশ সাদা পোষাকে গ্রেপ্তার করতে গেলে উপস্থিত জনতা তাদের মধ্য থেকে এসআই আমিনুর রহমান ও এসআই উজ্জলকে চিনতে পারে।

১৮ জুন ২০১৬ তারিখে আল মাহমুদের পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছিলো। তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, “গত ১৩ জুন রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে আল মাহমুদ নিখোঁজ। ১০/১২ জন লোক একটি কালো মাইক্রোবাস ও ৩টি মোটর সাইকেল এসে তার ছোট ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এমতাবস্থায় তিনি এবং তার পরিবার ছেলের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আল মাহমুদের বড় বোন মদিনা খাতুন এবং মামা ফিরোজ আহমেদ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিবির কর্মী শহীদ আল মাহমুদকে আটক করা হয়নি বলে জানানো হয়।

অন্যদিকে ১৬ জুন ২০১৬ তারিখে রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ৬ তলা থেকে ছাত্রশিবিরে সহকারী সাহিত্য সম্পাদক ও ঝিনাইদহ শহর শাখার সাবেক সভাপতি ইবনুল ইসলাম পারভেজ, ঝিনাইদহের ছাত্রকল্যাণ ও আইন সম্পাদক এনামুল হক এবং ঝিনাইদহ পলিটেকনিকের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমানকে সাদা পোষাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

ঝিনাইদহ গণহত্যার ৭ম ও ৮ম শিকার হলেন আনিসুর রহমান ও ইবনুল ইসলাম পারভেজ। ঢাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঝিনাইদহে নিয়ে আসে আজবাহার আলী গং। পুলিশের কাছে আটক থাকা ৪ জনের মধ্যে একজন প্রচণ্ড নির্যাতনে পুরোহিত খুনের স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২১ জুন ২০১৬ তারিখে শিবির নেতা এনামুল হককে ঝিনাইদহ আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তার এক পা ভাঙ্গা ছিল এবং সারা শরীরে ভয়ংকর নির্যাতনের গভীর ক্ষতস্থান ছিল। এনামুল হলো ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে একজন।

বাকি তিনজন অর্থাৎ ১৩ জুন ঝিনাইদহ থেকে আটক হওয়া আল মাহমুদ এবং ১৬ জুন ঢাকা থেকে আটক হওয়া আনিসুর রহমান ও ইবনুল ইসলাম পারভেজের সন্ধানের দাবীতে পরিবার ও ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে একাধিকবার বিবৃতি এবং সংবাদ সম্মেলন করা হয়। একই দাবীতে ২১ জুন ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এত কিছুর পরও পুলিশ তাদের বর্বরতার অবস্থান থেকে ফিরে আসতে পারেনি।

১ জুলাই ২০১৬ তারিখে আল মাহমুদ ও আনিসুর রহমানকে হত্যা করে ঝিনাইদহ পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য অনুসারে ১ জুলাই গভীর রাতে তাদের ওপর আক্রমণ করে শিবির নেতা আল মাহমুদ ও আনিসুর রহমান। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে তেতুলবাড়ীয়া এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত নাশকতা সৃষ্টির জন্য অবস্থান করছে। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার টহল পুলিশ তেতুলবাড়ীয়া রাস্তা দিয়ে টহল দিচ্ছিল। পুলিশ টহলের সময় তেতুলবাড়ীয় গ্রামের উত্তর মাঠের দিকে দুর্বৃত্তরা পুলিশের গাড়ী লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের প্রায় ২০ মিনিট গুলি বিনিময় হয়। এর এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুইটি গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহত আনিসুর রহমানের বাড়ি ঝিনাইদহ না হলেও তিনি ঝিনাইদহ পলিটেকনিকে পড়াশোনা করেছিলেন। ঝিনাইদহে তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং পলিটেকনিক শাখার সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার জুগিয়ার ভাটাপাড়ায়। তিনি সাবদার হোসেন ও জাহানারা খাতুনের ৫ সন্তানের মধ্যে ছোট সন্তান।

ছাত্রশিবির এই দুইজনের হত্যার প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলে, “গ্রেপ্তারের ১৭ দিন পর শিবির নেতা শহিদ আল মাহমুদ ও ১৪ দিন পর আনিসুর রহমানকে ঝিনাইদহে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়। মূলত পুলিশ তাদের দীর্ঘদিন আটক রেখে পুরোহিত হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী আদায়ের জন্য নির্মম নির্যাতন চালায়। শত নির্যাতনের পরেও মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পুলিশ। আমরা মনে করি, সরকার সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা করে এর দায়ভার ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়ে দমন নিপীড়নের ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে। এইসব হত্যার সাথে সরকার সরাসরি জড়িত”।

এই দুইজনকে হত্যার পরদিনই অর্থাৎ ২ জুলাই ২০১৬ তারিখে ইবনুল ইসলাম পারভেজকে খুন করে ঝিনাইদহ পুলিশ। ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার আড়ুয়াকান্দিতে একটি কবরস্থানের পাশে ২ জুলাই ভোররাতে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে ইবনুল ইসলাম পারভেজকে হত্যা করে ঝিনাইদহ পুলিশ। নিহত পারভেজ ঝিনাইদহ শহরের বনানীপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ শহর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

এই ঘটনা সম্পর্কে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, “শুক্রবার দিবাগত রাতে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কে পুলিশের একটি টহল দল গাড়িতে করে টহল দিচ্ছিল। রাত আড়াইটার দিকে মহাসড়কের আড়ুয়াকান্দি কবরস্থান এলাকায় পুলিশের গাড়িটি পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি শিবিরের নেতা পারভেজ”।

পারভেজের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্রশিবির তাদের বিবৃতিতে বলে, “গ্রেপ্তারের পর প্রায় ১৬ দিন গুম রেখে পুরোহিত হত্যার মিথ্যা স্বীকারোক্তির আদায় করতে তাদের উপর বর্বর নির্যাতন চালায় পুলিশ। কিন্তু শত নির্যাতনের পরেও মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পুলিশ”।

পুরোহিত হত্যার স্বীকারোক্তি দেওয়া শিবির নেতা আমিনুল হককে ভয়ংকরভাবে অসুস্থ অবস্থায় আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে এই কথা নিশ্চিত হয়ে যায়, আল মাহমুদ, আনিসুর রহমান ও পারভেজকে হত্যার জন্য নিঃসন্দেহে পুলিশ দায়ী। আমিনুলকে তাদের সাথেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের ১৫-১৬ দিন আটক রেখে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করতে না পেরে খুন করা হয়েছে।

স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ভয়ংকর নির্যাতন করে। এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সন্দেহভাজনরা প্রায়ই দায় স্বীকার করে। এরকম একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো নারায়ণগঞ্জের দিশামণির ঘটনা। ৪ জুলাই ২০২০ সালে দিশা মণি এক কিশোরি নিখোঁজ হয়। তার পরিবার নিখোঁজ ডায়েরি করলে পুলিশ ঐ এলাকার তিন সন্দেহভাজন যুবককে প্রচণ্ড নির্যাতন করে হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করে নেয়। ঐ তিন যুবক ধর্ষণের পর হত্যার বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি দেয়। মূলত দিশা তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার ৪৯ দিন পর সে ফিরে এসেছে। এই নিয়ে দেশে তোলপাড় হয়েছে ব্যাপক। যদি সত্যিই খুন হতো দিশা অথবা আর ফিরে না আসতো তবে মিথ্যা অভিযোগে ঐ তিন যুবকের জীবন স্তব্ধ হয়ে যেত।

পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শিবির নেতা এনামুল হককে নির্যাতন করে পা ভেঙ্গে দেয়, তার হাত পায়ের সব নখ উপড়ানো ছিল। তার পুরো শরীর থেতলে দিয়ে তার থেকে স্বীকারোক্তি নিয়েছিল। একইভাবে দেখা যায়, খুন হওয়া সোহান, আল মাহমুদ, আনিস ও পারভেজের শরীর ভীষণভাবে নির্যাতিত। কিশোর সোহানের এক চোখ উপড়ানো ছিল। ভয়ঙ্কর নির্যাতনেও এরা স্বীকারোক্তি দেয়নি বলে তাদের তাদের হত্যা ঝিনাইদহ পুলিশ।

সোহান, মাহমুদ, আনিস ও পারভেজ এই চারজন নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনায় তাদের পরিবার ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রশিবির সন্দেহাতীতভাবে পুলিশকে দায়ী করেছেন। সুনির্দিষ্টভাবে ৪টি খুনের জন্যই এএসপি আজবাহার আলী শেখ ও ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ হাসেম খান দায়ী। এর বাইরে কিশোর মহিউদ্দিন সোহান হত্যার জন্য আনোয়ার হোসেন (ওসি, কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ), নীরব হোসেন (এসআই, সদর, ঝিনাইদহ) ও নাসির উদ্দিন (এসআই, সদর, ঝিনাইদহ) দায়ী। বাকী তিনজন হত্যার জন্য হাসান হাফিজুর রহমান (ওসি, সদর, ঝিনাইদহ), আমিনুর রহমান (এসআই, সদর, ঝিনাইদহ), উজ্জল (এসআই, সদর, ঝিনাইদহ), প্রবির কুমার (এসআই, সদর, ঝিনাইদহ), রাব্বি হোসেন (কনস্টেবল, সদর, ঝিনাইদহ), তারিকুল ইসলাম (কনস্টেবল, সদর, ঝিনাইদহ), আরিফুল ইসলাম (কনস্টেবল, সদর, ঝিনাইদহ) এবং সামন্ত কুমার (কনস্টেবল, সদর, ঝিনাইদহ)।

পঠিত : ৮৯৭ বার

মন্তব্য: ০