Alapon

"নিও লিবারেলিজম ও পোস্ট মডার্নিজম : আগামী দিনের লড়াই"



এখনো অনেকে মনে করেন যে, লিবারেলিজম বা সেকুলারিজম প্রতিটা মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এজন্য অনেকে নিজেরে দাবি করে লিবারেল বা সেকুলার-মুসলিম বা হিন্দু অথবা খ্রিস্টান। অথচ সত্যটা হইলো লিবারেলিজম বা সেকুলার স্টেট আপনারে ততটুকুই করতে দিবে, যতটুকু হইলে তার ডমিন্যান্স চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না এবং সে তার ন্যারেটিভ ও সুবিধা অনুসারে প্রতিনিয়ত আপনার ধর্মীয় রুলরেও ফ্রেম করবে। অথচ প্রতিটা ধর্মের বেসিক অনুসারেই আপনি চাইলে অন্যরে রেসপেক্ট ও একসঙ্গে বাস করবার মতো শান্তিপূর্ণ সমাধান পাইবেন।

কাহিনী হইলো নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে শিফল এয়ারপোর্টে বইসা আছি, যেইটা কিনা ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ও ব্যস্ত বিমানবন্দর। নামাজ পইড়া নিলেও রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইনসের লাউঞ্জ খুঁজতে গিয়া চোখে পড়লো মেডিটেশন সেন্টার-এর চিহ্ন। কৌতুহলী হয়ে উঠলাম, চিহ্ন ফলো করে পৌঁছলাম, দেখলাম সুন্দর ছিমছাম একটা রুম। সামনেই একটা শোকেস টাইপের; যেখানে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের কিছু লিফলেট রাখা। এরপরে ভেতরে ঢুকেই দেখলাম অনেক ভাই-বোন নামাজ পড়ছে, অনেকগুলো জায়নামাজ রাখা। পিছনের শোকেসে কুরআনসহ নানা ধরনের ইসলামিক বই। গেটে দেখলাম হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, শিখ বাহাইসহ বিভিন্ন ধর্মের চিহ্ন। কিছু মোমবাতি জলছে একপাশে। ভালোই লাগলো, এমন সুন্দর একটা জায়গা দেখে। এর আগে মাসের শুরুতে আবুধাবিতে দেখছিলাম আন্তঃধর্মীয় ইবাদত রুম। নামাজ পড়া থাকলেও আবারো পড়ার লোভ সামলাতে পারলাম না৷ কিছুক্ষণ পরে দেখলাম এয়ারপোর্টের বিভিন্ন কর্মকর্তারা এসে জামাত পড়লো।

এখন আসল কাহিনী হইলো, এই যে দেখেন বিশ্বের তাবৎ সব ধর্মের উপাসনারে লিবারেলিজম ফ্রেম কইরা বানাইয়া ফেলছে মেডিটেশনের অংশ। অথচ দুইটা সম্পুর্ণ ভিন্ন জিনিস। অজস্র মানুষের মধ্যে গুটি কয়েক মানুষ ধর্ম ছাইড়া দিক-বিদিক হারাইয়া শান্তির খোঁজে মেডিটেশননের নামে সব ধর্মের বাইরে আলাদা একটা টার্ম বাইর কইরা শান্তি খুঁজতেছে। আর সেইটা সেকুলারিজমের ধারণার সাথে মিলা যাওয়ায় সেইটার আন্ডারে ফালাইয়া দিছে সব ইবাদতরে। অথচ দেখলাম মেডিটেশন বা পারসোনাল কেয়ারের জন্য একজন বইসা থাকলেও সেখানে কেউ যায়নি। ঠিক এমনে কইরাই বিতর্কিত ডারইউনিজমের আবির্ভাবের ফলে বায়োলজিকাল সাইন্সের চেয়েও জোরেসোরে তারে গ্রহন করছিলো সোস্যাল সাইন্স, কারণ ইউরোপিয়ান এনলাইটেন্টমেন্ট বা সেকুলারাইজেশন অফ নলেজের যে ধারাবাহিকতা চলতেছিলো সেইটারে বুস্ট আপ কইরা দিছে এই নতুন তত্ত্ব। ঠিক এমনে কইরাই আমাগো দেশেও বায়োলজি বইয়ের জিনিস ডারইউনিজম দেয়া হয় সমাজ বইতে। ঠিক একই রকমভাবে দেখেন আপনি আপনার সন্তানরে ধমক দিয়া মসজিদ বা মন্দিরে পাঠাইতে পারবেন না পারসোনাল চয়েজ অথবা লিবারেল ফ্রিডমের নামে। সন্তানের স্বত্ত্বটাও বাবা-মা থেকে এমনে কইরা চইলা গেছে রাষ্ট্রের হাতে। একইভাবে আপনার ধর্ম এবং বায়োলজি অনুসারে বিয়ার বয়স হইলেও লিবারেল আর সেকুলার রাষ্ট্রে আপনি ১৮ বছর কিংবা ২২ বছর না হইলে বিয়া করতে পারবেন না, অথবা অসংখ্য বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড রাখলেও বিয়া একটার বেশি করতে পারবেন না পশ্চিমা লিবারেল রাষ্ট্রে।

ঠিক একইভাবে লিবারেলিজম আইসা আপনার ঐশি বা পরম কোনো পারপাস বা উদ্দেশ্যরে সংকীর্ণ কইরা ফেলবে হ্যাপিনেসের মধ্যে অথবা ভোগের মধ্যে। আপনি যেখানে আগে ভাবতেন সমাজ, পরিবারসহ বিশ্বের কথা, এখন আপনারে লিবারেলিজম ও তার অঙ্গ-সংগঠনগুলো (যেমন ফেমিনিজম বা জেন্ডার ধারণাগুলো) আইসা বলবে তোমার মন যা চায় তাই করো! বায়োলজিক্যালি আপনি পুরুষ-নারী হইলেও দু-একটা হরমোনাল বা পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের কারণে আইসা বলবে তুমি চাইলে নারী হইয়াও মনে মনে পুরুষ কিংবা পুরুষ হইয়াও মনে মনে নারী হইয়া উঠতে পারো। আপনার ধর্মীয় আচার আর বিধি-নিষেধগুলোর চেয়েও বড় হইয়া উঠবে সেভ দ্যা প্লানেট অথবা ভেগান ধারণা অথবা বিশ্বভ্রমনকারী হবার ধারণা । শুক্রবারের নামাজ অথবা রবিবারের চার্চের কিংবা সকাল-সন্ধ্যা ঠাকুরের কাছে যাওয়ার চেয়ে বড় হইয়া উঠবে শুক্র-শনিবারের পার্টিগুলো। এগুলো কোনোটাই এককভাবে ধ্বংসকারী নয় কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই ধারণা ও আচারগুলা প্রতিস্থাপক হইয়া উঠতেছে আপনার সাধারণ চিন্তা, বিশ্বাস ও আচারের মধ্যে।

এর ফলে লিবারেলিজম বা নিও-লিবারেলিজমের লাভটা কী আসলে? এর মূল লাভ হইলো আপনি সমাজের সব বিধি-নিষেধ ভাইঙ্গা আপনার আপন প্রবৃত্তির অনুসারী হইবেন সাবজেক্টিভ সত্যের কথা কইয়া। আর আপনি এসব করলেই পরিবার-সমাজ বা ধর্ম সব নাই হইয়া যাইবে। তখন সহজ হইবে আপনারে দাস অথবা প্রোডাক্ট বানানোর কাজে। একা হইয়া আপনি সহজেই প্রভাবিত হইবেন নতুন নতুন পণ্যের ভোগ অথবা শ্লোগানের মায়াজালে। সৃষ্টি হইবে আল্টিমেট এনার্কি!

সারাবিশ্ব এক দৌড়ে সেদিকেই যাচ্ছে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি কী মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান হবেন; নাকি নিও লিবারেল/পোস্ট মডার্ন, সেকুলার অথবা অন্যকোনো ধর্মের হবেন। আমার মনে হয়, সামনের দুনিয়ায় লড়াইটা কোনো তেল গ্যাস বা রাজনৈতিক হবে না, হবে এই পোস্ট-মডার্নিটি আর ট্রাডিশনাল অথবা ধার্মিকদের লড়াই, আর এ লড়াই হবে পৃথিবীর সব প্রান্তে প্রান্তে! সুতরাং সময় থাকতে সাবধান।


~লিখেছেন : শাকির হাসান

পঠিত : ৩০০ বার

মন্তব্য: ০