Alapon

নতুন কিছু করতে হলে পাগলের মতো কর্মস্পৃহা প্রয়োজন...



ছোটবেলায় শোয়েব আকতারকে সবাই পাগলা বলে ডাকত। যখন সে তার বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার জন্য আসতো তখন সবাই বলত, ‘ঐ যে পাগলা আসতেছে’। এই কথার বিপরীতে শোয়েবও দাঁত বের করা হাসি দিয়ে প্রতিউত্তর দিত।

শোয়েব খুবই গরীব একটি পরিবারের সন্তান। শোয়েবের চারভাইবোনকে নিয়ে তার বাবা-মা একটি মাত্র ঘরে থাকত। তাদের গ্রামের অদূরে প্রাসাদের মত একটি বাড়ি আছে। শোয়েব তার বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই সেই বাড়িটি দেখতে যেত। সেসময় শোয়েব বলত, ‘দেখেনিস, একদিন এই বাড়ি আমার হবে।’
তার এইকথা শুনে বন্ধুরা হো.হো. করে হেসে উঠত। সেইসাথে সকলে একসাথে গলামিলিয়ে বলত ‘পাগলা’!

শোয়েব তখন পাকিস্তান ক্রিকেটের বয়সভিত্তিক টিমের খেলোয়াড়। আউট সুইং, ইন সুইং করতে পারলেও সে রিভার্স সুইং করতে পারত না। শোয়েব যখন রাস্তা দিয়ে হাটত তখন তার পকেটে পাথরের টুকরো থাকত। যখনই উত্তর-দক্ষিণমুখী বাতাস শুরু হয় শোয়েব দৌড়ে এসে পাথর দিয়ে বল করে। এবং বাতাসকে কাজে লাগিয়ে রিভার্স সুইং করার চেষ্টা করে। যখন যেখানে যেঅবস্থায় বাতাস উঠতো শোয়েব সেখানেই পাথর ছুড়ে রিভার্স সুইং করানোর চেষ্টা করত। আর এসব দেখে মানুষ বলতো, ‘ও মনে হয় সত্যিই সত্যিই পাগল হয়ে গেছে। সারাদিন কারে যেন পাথর নিয়ে ধাওয়া করে!

এই পাথর ছুঁড়তে ছুঁড়তেই একদিন শোয়েব আকতার রিভার্স সুইং শিখে গেলেন। এরপর একদিন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা শোয়েবের ক্লাবে আসে নতুন প্লেয়ার খুঁজতে। শোয়েবকে বলা হয় বাউন্স বল করতে। শোয়েবের বলটি এতোই দ্রুত ছিল যে ব্যাটসম্যান কিছু বুঝার আগেই বলটি তার মাথায় এসে আঘাত করে। এরপর সেই ব্যাটসম্যান চলে যায় হাসপাতালে আর শোয়েব আকতার চলে পাকিস্তান ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমীতে।

আর হ্যা শোয়েব তার বন্ধুদেরকে বলা সেই কথা কিন্তু পূরণ করেছিল। শোয়েব বর্তমানে যে প্রাসাদের ন্যায় বাড়িটিতে বাস করেন এটিই সেই বাড়ি। যা কিনা শোয়েব জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হওয়ার বছর ‍দুয়েকের মধ্যে সেই বাড়িটি কিনে ফেলেন। [ তথ্যসূত্র: Shoaib Akhtar Break Fast With Gaurav Kapur ]

খেয়াল করে দেখবেন, আপনি যখন নতুন কিছু করতে যাবেন তখন কিছু মানুষ পাগল বলবে। আপনার কিছু বন্ধুরাও পাগলা বলে হাসাহাসি করবে। এই পাগল বা পাগলা শব্দটি শুনে শোয়েব যদি তার পথচলা থামিয়ে দিতো তাহলে হয়তো পুরো ক্রিকেটবিশ্ব স্প্রীডষ্টার শোয়েব আকতারের কারিশমা কখনোই দেখতে পেতো না। শোয়েব আকতারের নামও কেউ জানত না।

তেমনি আপনিও যদি এই পাগল বা পাগলা শব্দশুনে পথচলা থামিয়ে দেন তাহলে আমরা হয়তো আর একজন লিজেন্ডকে হারাবো। আপনার নামটিও হয়তো কোন এক অজপাড়াগায়ের মাঝেই লুকিয়ে থাকবে। ভালো কিছু করতে হলে পাগল হওয়া প্রয়োজন। নতুন কিছু করতে হলে পাগলের মত কর্মস্পৃহা প্রয়োজন। এই গরীব দেশটিকে নতুন করে গড়তে একদল পাগল মানুষেরই প্রয়োজন।

পঠিত : ২৯৪ বার

মন্তব্য: ০