Alapon

সংঘী শালাদের অর্থনীতি



ভারতে দ্রব্যমূল্য দ্রুত বৃদ্ধির কারণ
------------------------------
"... ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে যে সমস্ত কারণ বর্তমান, তন্মধ্যে কয়েকটির নিম্নে উল্লেখ করা হল :

(ক) ভারত বিভাগ

পূর্বে বলা হয়েছে, ভারত বিভাগের পূর্বেও এদেশে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, মুসলমান শাসনকালে এক কারণে, ইংরেজ শাসনকালে অন্য কারণে। কিন্তু তখন তা বেড়েছে অতি মন্থরগতিতে, দেশবাসীর আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে। তাই তখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দেশবাসীর কষ্টের কারণ হয়নি। কিন্তু দেশভাগের পর থেকে প্রতিটি জিনিসের দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে, দেশবাসীর আয় বাড়ছে না সেই অনুপাতে। ফলে দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনসাধারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে এখন তাল রেখে চলতে অসমর্থ হয়ে অত্যধিক কষ্ট পাচ্ছেন। তাই ভারত বিভাগকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে দেশের জনসাধারণের দুর্গতি বৃদ্ধিরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ বলা চলে।

অবিভক্ত ভারত এখন তিনটি রাষ্ট্রে পরিণত, যথা — ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ভারতের মিত্র রাষ্ট্র বলা চলে না। এই দুই প্রতিবেশী দেশের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য ভারত সরকারকে কোটি কোটি টাকা সামরিক খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে। দেশভাগের পরিণতি স্বরূপ এমন অনেক নূতন নূতন অফিস খোলা হয়েছে, যে সমস্তের অস্তিত্ব ইংরেজ শাসিত অবিভক্ত ভারতে ছিল না। অফিসের সংখ্যা বর্ধনের ফলে কর্মচারীর সংখ্যাও ঢেড় বাড়াতে হয়েছে। উক্ত কারণে শাসন বিভাগেও ব্যয় পূর্বাপেক্ষা প্রচুর বেড়েছে। এতদ্ভিন্ন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংলগ্ন শত শত মাইল ব্যাপী দীর্ঘ সীমান্ত রক্ষার জন্যও ভারতকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, বাস্তহারা সমস্যার সমাধানেও প্রচুর ব্যয় হচ্ছে, যেরূপ ব্যয় দেশ অখণ্ড থাকলে প্রয়োজন হতো না। এইভাবে দেশভাগের ফলে সৃষ্ট আরও অনেক প্রকার সমস্যায় জড়িত হয়ে ভারত সরকারকে জলের মতো টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

উল্লিখিত ব্যয়ভার বহনের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তা সংগ্রহ করা হচ্ছে সাধারণতঃ দেশের জনসাধারণের নিকট হতে তাঁদের ভোগ্য বস্তুর ওপর কর ধার্য করে। প্রতি বছর বাজেটের মাধ্যমে জনসাধারণের ঘাড়ে করের বোঝা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যতই জনসাধারণের ভোগ্য বস্তুর ওপর কর বাড়ানো হচ্ছে, ততই করের আওতাভুক্ত, সেই সঙ্গে করের আওতার বহির্ভূত, সর্বপ্রকার দ্রব্যের দাম দ্রুত বেড়ে চলেছে। সুতরাং দেশ ভাগই যে দ্রব্যমূল্য দ্রুত বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ, এতে কোন সন্দেহ নেই।
(খ) লক্ষ লক্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদী, বিদেশানুরাগী, অনুপ্রবেশকারী, বিদেশাগত খৃষ্টান মিশনারী ও তাদের ভারতীয় দালালদের নিয়ে ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। কিন্তু দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন সেই অনুপাতে বাড়ছে না। ইহাও এই দেশে দ্রব্যমূল্য দ্রুত বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ।

পূর্বে বলা হয়েছে প্রতিবার বাজেটে কর বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এদেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে। কর বৃদ্ধির সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্পর্ক যে অচ্ছেদ্য, ইহা কেহ অস্বীকার করতে পারেন না। প্রত্যেক দেশেই তাই হয় ! কিন্তু উল্লিখিত কারণ ছাড়াও এদেশে দ্রব্যমূল্য দ্রুত বৃদ্ধির আরও একটি বিশেষ কারণ আছে, যা অন্য কোন দেশে নেই।
সেটি হলো দেশের অভ্যন্তরে কোটি কোটি শত্রু পোষণ, একেবারে ঘনিষ্ঠ কুটুমের মতো আদর যত্ন করে। আবার এইরূপ শত্রুদের শত্রু বলাও বিপদ, কারণ, অবস্থা দৃষ্টে অনুমান, এদের সহায়ক ও সমর্থক ভারতের অভ্যন্তরে, বাহিরেও, যত আছে, যথার্থ ভারতপ্রেমিক, ভারত ও ভারতবাসীর জন্য যথার্থ চিন্তাশীলদের পক্ষে তত নেই। এই কারণে ভারতকে অখণ্ড অবস্থায় ইংরেজ শাসন মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ভারত সীমান্তে মুক্তি ফৌজ নিয়ে উপস্থিত, ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান নেতাজী শ্রী সুভাষ চন্দ্র বসুকে, স্বদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের অসহযোগিতা ও বিরোধিতার জন্য, ঐ সীমান্ত হতেই আবার ব্যর্থতার ডালা নিয়ে ফিরে যেতে হলো; ভারতমাতার পুনঃ অঙ্গহানির চক্রান্ত উপলব্ধি করে ঐ চক্রান্তকে শুরুতে ব্যর্থ করার জন্য কাশ্মীরে গিয়ে দেশমাতার অন্য সুসন্তান, যথার্থ স্বদেশপ্রেমিক ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, আবদুল্লার কারাগারে বন্দী হয়ে, সেখান হতে আর জীবন নিয়ে ফিরতে পারলেন না, যাঁর মৃত্যুর তদন্ত না হওয়ায় ইহাকে নিছক হত্যাকাণ্ড ৰলেই অনেকেই অনুমান করেন। ভারতে যথার্থ স্বদেশ ও স্বজাতিপ্রেমিকদের এইরূপ শোচনীয় পরিণতি। ভারতের শত্রুদের কিন্তু এরূপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় না। ভারতমাতার অঙ্গচ্ছেদকারী জিন্নাকে কেও কি শত্রু বলেছেন? তিনি তো দেশ ভাগের পরও বহাল তবিয়তে ছিলেন। এই সমস্ত বিবেচনায় এই দেশে শত্রুরা নিরাপদ, যারা শত্রুকে শত্রু বলে, তাদেরই পদে পদে বিপদ। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ভারতের শত্রু কারা? তদুত্তরে বলতে হয়, যারা ভারতে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও এই দেশের প্রতি আনুগত্যহীন, ভারতের সর্বনাশই যাদের লক্ষ্য, তারাই ভারতের শত্রু! তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় :

১) যারা অবিভক্ত ভারতে জন্মগ্রহণ করে, এই দেশের অন্নজলে প্রতিপালিত হয়ে, “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” ধ্বনি তুলে, দেশব্যাপী সন্ত্রাসের সৃষ্টি করে, হিন্দু মুসলমান ভিত্তিতে, ভারত বিভাগ করিয়েছে।

২) দেশভাগের পর অদূরদর্শী নেতাগণ কর্তৃক লোক বিনিময় নীতি গৃহীত না হওয়ায়, পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা এদেশে রয়ে গিয়েছে এবং এখন কথায় ও কাজে পূর্ব স্বভাবের পরিচয় দিচ্ছে, যেমন: (ক) ১৯৬০ সালের নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত মুসলিম সম্মেলনে ভারতে ঐশলামিক শরিয়তী শাসন প্রবর্তনের ও দিল্লীর লালকেল্লায় চাঁদতারা চিহ্নিত সবুজ পতাকা উত্তোলনের আগ্রহ প্রকাশ (দৈনিক বসুমতী-৮ই পৌষ, ১৩৬৭), খ) পবিত্র জুম্মাবারে, শুক্রবারে, কোলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে এখানেও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ‘শুভ সংকল্প' লওয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে কয়েকজন নেতা কর্তৃক গরম গরম বক্তৃতা ( আনন্দবাজার ২৪/১/৬৪) (গ), আসামের বুকে ধ্বনি “শুনরে ভাই মুসলমান, হও সবে আগুয়ান, ভারত মুরা করব পাকিস্তান” (যুগান্তর (১/৭/৬১), (ঘ) কাশ্মীরের খাস শ্রীনগরে ও ঐ উপত্যকার কোন কোন অংশে সাড়ম্বরে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও পাকিস্তানী পতাকা ওড়ানো, ভারতের স্বাধীনতা দিবসকে কালা দিবস হিসেবে পালন করার নির্দেশ, “পাকিস্তান জিন্দাবাদ, ইন্দিরা গান্ধী মুর্দাবাদ” ধ্বনি (বাংলাদেশ, ১৭/৮/৮৪ ), (ঙ ) নাগাভূমি যীশুখ্রীষ্টের জন্য, এই মর্মে নাগা আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা শ্রী কুঘাতো সুখাইয়ের ঘোষণা (দৈনিক বসুমতী, ৮/৯/৬৮), (চ) মুসলিম লীগ ও জামাত-ই-ইসলাম-এর গোপন বৈঠকে বন্দেমাতরম-শ্লোগানকে বয়কট করার আহ্বান ( আজকাল ৩/৪/৮৫) ইত্যাদি।

৩) যে সমস্ত মুসলমানরা দেশভাগের পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছে, তাদের মধ্য হতে লক্ষ লক্ষ মুসলমানের ভারতীয় অঞ্চলে অনুপ্রবেশ, এখানে আস্তানা করা এবং এক শ্রেণীর রাজনীতিক নেতাদের সহায়তায় এখানে রেশন কার্ড সংগ্রহ করে ভারতীয়দের খাদ্যদ্রব্যের অংশীদার হওয়া।

৪) যে সমস্ত উগ্রপন্থী শিখ বিগত ৪/৫ বছর ধরে একটানা হিন্দু হত্যা করে চলেছে (ভারতের সুযোগ্যা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সহ) সেভাবে পঞ্জাবকে হিন্দুশূন্য করে, ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে, স্বাধীন খলিস্থান গঠনের চেষ্টায় আছে।

৫) বিভিন্ন খৃষ্টান রাষ্ট্র হতে আগত অগণিত খৃষ্টান মিশনারী ও তাদের ভারতীয় দালালরা। এরা ভারতে আসতেছে ভারতের কল্যাণের জন্য নয়, ভারতের বিভিন্ন অংশকে খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ করে, তারপর ঐরূপ খৃষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল এই দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, স্বাধীন খৃষ্টানিস্থান গঠনের জন্য। খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী সুভাষ ঘিসিং-এর আংশিক সাফল্য এদের উক্ত কাজে আরও উৎসাহিত করতেছে।

৬) যারা হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য বিদেশ হতে এদেশে কোটি কোটি টাকা পাঠাচ্ছে, এই দেশবাসীদের মধ্যে যারা ঐরূপ টাকা গ্রহণ করে বিদেশের নির্দেশে কাজ করতেছে, যারা এই দেশের নাগরিক হয়েও বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাস ইত্যাদির মদত দিচ্ছে, — যারা দেশে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িতকার বন্যা এনেছে, — যারা বাইরের শত্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে, যারা ভারতের গোপন তথ্য বিদেশে পাঠাচ্ছে, — যিনি ভারতীয় নাগরিক হয়েও ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবস বর্জনের ডাক দিয়েছেন (সাহাবুদ্দিন), ইত্যাদি ইত্যাদি।

এদের কার্যকলাপের ধারা ও তাণ্ডবতা দেখলে, তদুপরি চুক্তির মাধ্যমে এদের সঙ্গে সরকারের আপোষের চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে, মনে হয় এদের সংখ্যা ১০ কোটি হতে ২০ কোটি পর্যন্ত হতে পারে। এরূপ কয়েক কোটি শত্রু ভারতীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশে থাকায় ভারতের জনসংখ্যা ১৯৮১ ইংরেজীর আদমসুমারির হিসেব অনুযায়ী দাঁড়িয়েছে ৬৮,৩৭,৮২,৪৬১ জনে, বর্তমানে (১৯৮৮) এই সংখ্যা হয়তো ৭০ কোটি অতিক্রম করেছে। এইরূপ বিরাট জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী ভারতে দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না, বিশেষতঃ ১০ কোটি হতে ২০ কোটি শত্রু ভারতের জমিতে আস্তানা করায় চাষের জমির পরিমাণ পূর্ব্বের চেয়ে আরও অনেক কমে গিয়েছে। তাই খাদ্যোৎপাদনও পূর্বের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে । শিল্প দ্রব্যের উৎপাদনও এইরূপ বিরাট জনসংখ্যার চাহিদা অনুযায়ী সম্ভব হচ্ছে না।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ১৯৬১ সালে গোটা দুনিয়ায় যে জনসংখ্যা ছিল, উহার শতকরা ১৪.৬৭ অংশ পড়েছিল ভারতের ভাগে। অথচ তখন দুনিয়ার মোট ১৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে ভারতের ভাগে ছিল মাত্র শতকরা ২.৪ ভাগ। বর্তমানে উক্ত কারণে গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ১৫ ভাগেরও বেশী ভারতের ভাগে, কিন্তু জমির পরিমাণ বাড়েনি, খাদ্যশস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রের পরিমাণ পূর্বাপেক্ষাও হ্রাস পেয়েছে, চীন ও পাকিস্তান কর্তৃক ভারতের কিছু অংশ জবর দখলের ফলে উল্লিখিত ২৪ ভাগ জমিও এখন এদেশের ভাগে পুরোপুরি নেই।

এরূপ বিবিধ কারণে, এই দেশে শিল্প ও কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন দেশবাসীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভব হচ্ছে না বলে এখানে দ্রব্যমূল্য দ্রুত বেড়ে চলেছে। ভারতের জনসংখ্যা দেশে উৎপাদনের সীমারেখার এবং দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার ভেতর নামিয়ে আনার বাস্তব উপায়:

১) ভারতের যে সমস্ত নাগরিকদের আচরণ ও কার্যকলাপ দেশের স্বার্থ, শান্তি, সংহতি ও ঐক্যের অন্তরায়, তাদের ভারতভূমি হতে বিতাড়িত করা। এরূপ ব্যবস্থা অবলম্বিত হলে অন্ততঃ ১০ কোটি লোক (শত্রু) কমবে।

২) তারপর এখন হতে যাতে দু'য়ের অধিক সন্তানের পিতার উপর তাদের আয়ের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ ট্যাক্স (সন্তান কর) ধার্য করা। এই নীতি চালু হলে পরিবার পরিকল্পনা খাতে অপব্যয়ের প্রয়োজন হবে না, দেশের জনসংখ্যা এমনি খাদ্যোৎপাদনের সীমারেখার ভেতর নেমে আসবে। অধিকন্তু সরকারী তহবিলেও কোটি কোটি টাকা আসবে। এই নীতি সেকুলরিজমেরও বিরোধী নয়।

৩) পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী মুসলমানরা ভারতে অনুপ্রবেশ করে যাহাতে ভবিষ্যতেও ভারতবাসীদের খাদ্যদ্রব্যের অংশীদার হতে না পারে, তজ্জন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংলগ্ন ভারতীয় জেলাগুলি একমাত্র হিন্দুদের বাসভূমিতে পরিণত করা। এইরূপ ব্যবস্থা অবলম্বিত হলে ভিন্ন রাষ্ট্রের মুসলমানরা তাদের হিন্দুর বিপরীত চেহারা ও বেশভূষার জন্য অনুপ্রবেশের সুবিধে পাবে না।

৪) ভারতে হিন্দুদের ধর্মান্তর নিষিদ্ধ করা। এই দেশে হিন্দুদের ধর্মান্তর নিষিদ্ধ হলে বিদেশ থেকে দলে দলে মিশনারী, মোল্লা প্রভৃতিরা এদেশে আসবে না, সেভাবে ভারতের জনসংখ্যা আরও ফাঁপিয়ে তোলার, ভারতের ভৌগোলিক ঐক্যহানির উদ্দেশ্যে লক্ষ লক্ষ দেশদ্রোহী সৃজনেরও সুযোগ পাবে না। দেশের অখণ্ডতার জন্যও এরূপ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান ভরাডুবি অবস্থা। এই সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা প্রদেশে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী কেন? কাদের পাপে? বঙ্গ ভাষাভাষী হিন্দুদের একমাত্র নিরাপদ বাসভূমি হল পশ্চিম বঙ্গ।

অবিভক্ত বাংলার ১/৩ অংশ নিয়ে গঠিত এই প্রদেশ। হিন্দু মুসলমান ভিত্তিতে ভারত-বিভাগের পর লোকবিনিময় না হওয়ায় “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” ধ্বনিকারীদের অনেকে রয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে। জানিনা এদের মতিগতির কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা! যারা দেশভাগের পর ওপারে রয়ে গেল, বর্তমানে যাদের পরিচয় বাংলাদেশের নাগরিক, মুসলমান ধর্ম সম্প্রদায়ভুক্ত, তাদের ভারতের অমিত্র বললে হয়তঃ মিথ্যে হবে না। বাংলাদেশের সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি থানা বা গ্রাম একমাত্র হিন্দুদের বাসভূমিতে রূপান্তরিত না করায়, সীমান্ত রক্ষার ব্যবস্থাও নিশ্ছিদ্র না হওয়ায়, লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমান এই ক্ষুদ্র প্রদেশে অনুপ্রবেশ করে ইহার জনসংখ্যাকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। বলতে গেলে জনসংখ্যা ভারে এই রাজ্য এখন একেবারে টলমল। কিছুকাল পূর্বে আনন্দবাজারে প্রকাশ, পশ্চিমবঙ্গে বিধিবদ্ধ ও আংশিক মিলিয়ে এ রাজ্যে রেশন কার্ডের সংখ্যা ছয় কোটি আঠারো লক্ষ এবং সরকারীভাবে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান লোকসংখ্যা পাঁচ কোটি সত্তর লক্ষ। সরকারী মহলে অনেকেই সন্দেহ করেন যে, বাংলাদেশ থেকে বেআইনী অনুপ্রবেশকারীদের (বাংলাদেশী মুসলমানদের) সংখ্যাও কয়েক লক্ষ। এদের রেশন কার্ড দেওয়া হচ্ছে। (আনন্দবাজার, ২২/১১/৮৫)

সংবাদপত্রে আরও প্রকাশ, উত্তর চব্বিশ পরগণা, নদীয়া, কোচবিহারের সীমান্ত থানাগুলির জনসংখ্যা গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণের বেশী বেড়ে গিয়েছে। গোটা মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলার পরিস্থিতি আরও অনেক খারাপ। এত খারাপ যে, এই দুই জেলার সীমান্তবর্ত্তী গ্রামগঞ্জগুলি থেকে সঙ্গতিসম্পন্ন হিন্দুরা ভয়ে বড় শহরে পালিয়ে আসছেন। অনুপ্রবেশকারীরা শুধু যে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছে, তা নয়, ক্রমে ক্রমে এরা বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া প্রভৃতি জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। এদেরও সাহায্য করেছেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা। (বর্তমান, ১৫/৮/ ১৯৮৬)

সংবাদপত্রে আরও প্রকাশ, বাংলাদেশী মুসলমানদের অনুপ্রবেশের ফলে শুধু ১৯৭১-৮১তেই অর্থাৎ মাত্র দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান সংখ্যা বেড়েছে শতকরা ২৯.৫৫ ভাগ। ঐ সময়ে এদেশে আগত পূর্ববঙ্গের ও পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মিলিত হারের চেয়ে অনেক বেশী। সীমান্ত জেলাগুলিতে মুসলমান বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক। যথা - নদীয়ায় উক্ত দশ বছরে মুসলমান সংখ্যা বেড়েছে শতকরা ৩৭.১১ ভাগ; মুর্শিদাবাদে শতকরা ৩০.৯৫ ভাগ, ২৪ পরগণায় শতকরা ২৮.১৩ ভাগ, মালদহে শতকরা ৩২.২৬ ভাগ, পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের যথাক্রমে শতকরা ২৮.৯৪ ভাগ ২৩.৩৫ ভাগ এবং ২২.৫২ ভাগ। (অমৃতবাজার পত্রিকা, ১৪/৮/১৯৮৮) ১৯৭১-৮১ দশকের পূর্বেও তো লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমান পশ্চিমবঙ্গে এসেছে, এখনও আসছে। আবার পাহাড়িয়া অঞ্চল দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে খৃষ্টান ধর্ম যাজকরা, এক হাতে বাইবেল ও অন্য হাতে প্রলোভনের বস্তু নিয়ে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য, সেভাবে ভারতের শত্রু সংখ্যা আরও বর্ধনের জন্য।

সুতরাং ১৯৪৭ হতে এযাবত (১৯৮৮) পশ্চিমবঙ্গে আগত বাংলাদেশী মুসলমান ও খৃষ্টান মিশনারীদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বেড়ে এমন স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে, যেখানে পৌঁছার ফলে এই ক্ষুদ্র প্রদেশে উৎপাদিত শিল্প ও কৃষিজাত দ্রব্যের দ্বারা এরূপ বিরাট জনসংখ্যার চাহিদা মেটানো অসম্ভব। কেন্দ্রীয় সাহায্যও আশানুরূপ নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য হু হু করে বেড়ে চলেছে, এখনই আকাশচুম্বী বলা চলে। যারা ভারতের শত্রু, তারাই আজ এখানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী, এর চেয়ে দু: খের কি থাকতে পারে? এরা অগ্রে ঘাড় ভাঙবে সে সমস্ত অদূরদর্শী রাজনীতিকদের, যারা এদের ভারতীয় রেশন কার্ড পেতে সহায়তা কচ্ছেন।

'...The influx of Bangladeshis into the border districts of West Bengal is being encouraged by unscrupulous businessmen and politicians. Touts on both sides of the border also play a major role. Money is disbursed liberally among village youths and the police by the touts to overcome resistance against the intruders. Therefore, the intruders, instead of being stopped by the villagers, are provided with food and shelter by them, since this ensures a steady source of income.' (The Statesman, 20/10/88)

এই দেশীয় যে সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনীতিজ্ঞ ও দালালরা অনুপ্রবেশকারীদের (বাংলাদেশ থেকে বেআইনীভাবে আগত ঐ দেশের মুসলমান নাগরিকদের) ভারতে বসবাসের, এই দেশীয় রেশন কার্ড পেতে ও ভোটার লিষ্টে নাম লিপিবদ্ধ করাতে সহায়তা কচ্ছেন, তাঁরাও এদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, তজ্জন্য চাহিদা বৃদ্ধি এবং সেহেতু দ্রব্যমূল্য দ্রুতবৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। অধিকন্তু উল্লিখিত শ্রেণীর হীনচেতা ব্যবসায়ী, রাজনীতিজ্ঞ ও দালালরা পাকিস্তানের স্রষ্টা জিন্নার বাহিনীকে (অনুপ্রবেশকারীদের) এদেশে পাকাপাকি বসবাসের ব্যবস্থা করে দিয়ে দ্বিতীয়বার দেশভাগের পরিবেশই সৃষ্টি কচ্ছেন, নিজেদেরও অকালমৃত্যুর পথ নিষ্কণ্টক কচ্ছেন। জয়চাঁদ খাল কেটে কুমীর (মহম্মদ ঘোরীকে) এনে ঐ কুমীরের আক্রমণেই রাজ্যচ্যুত ও নিহত হয়েছিলেন, ইহা কি তাঁরা অবগত নন?"

— শ্রী হৃদয় রঞ্জন ভট্টাচার্য / ভারতে বাজার দর : অতীতে ও বর্তমানে ॥ [ শ্রী তারকেশ্বর ভট্টাচার্য্য (হুগলী, প. বঙ্গ) - নভেম্বর, ১৯৮৮ । পৃ: ৪৩-৫৫]

পঠিত : ২৬৬ বার

মন্তব্য: ০