Alapon

বিশ্ব হিজাব দিবস



আজকে পহেলা ফেব্রুয়ারি। বেশ কয়েক বছর থেকে এই দিনটি বিশ্ব হিজাব দিবস হিসেবে কেউ কেউ পালন করে আসছে।

হিজাব আরবি শব্দঅর্থ পর্দা।  গোপনীয়তা। ঢেকে রাখা। ইত্যাদি। ইসলামি শারিয়ায় হিজাব হোলো,

গাইরে মাহরাম থেকে নিজেকে দূরে রাখা। শালীন ও চাকচিক্যহীন পোশাকাদির মাধ্যমে নিজেকে আবৃত করে রাখা। নন-মাহরামদের সামনে সৌন্দর্যের প্রকাশ ও প্রদর্শন হয়, এমন সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখা। সৌন্দর্য প্রকাশ ও প্রদর্শন হয়, দেহের সেরকম অংশগুলোকে ঢেকে রাখা।

পবিত্র কুরআনুল কারিমে শব্দটি সাতবার ব্যবহৃত হয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট একটি পোশাকের নাম হিজাব নয়। এটি  নৈতিক ও আমল-ঈমানের দিক থেকে নিজের পবিত্রতা-সম্ভ্রম রক্ষার একটি সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার নাম। প্রাপ্তবয়স্কা সকল নারীদের জন্য হিজাব ফরজ করে আল্লাহ বলেন,

" আর মুমিন নারীদেরও বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে এবং স্বীয় সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, শুধু ওই সৌন্দর্য ব্যতীত যা সত্যিই প্রকাশিত হয়ে পড়ে।" (সূরা নুর: ৩১)।

এই হিজাব যে শুধু নারীর জন্যেই ফরজ, তা কিন্তু নয়। ফরজ সকল পুরুষদের জন্যেও। নারীদের হিজাবের আগেই পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ। সে আলোচনা আরেকদিন হবে। ইন শা আল্লাহ! আজকের হিজাব দিবস নিয়ে তাহলে কিছু কথা বলি আমরা। ঠিকাছে?

বিশ্ব হিজাব দিবসের আহ্বান জানান নাজমা খান। বাংলাদেশেই তাঁর জন্ম। ১১বছর বয়স থেকে আমেরিকা বসবাস করেন তিনি। স্থায়ীভাবে। মুসলিম পরিবার ও পরিবেশে বড়ো হওয়ায় তিনি হিজাব পরে সেখানে চলাচল করতে লাগলেন। স্কুল-কলেজেও যেতেন। কিন্তু তিনি নানাভাবে লাঞ্ছিত হতেন। শিকার হতেন বহুবিধ অপমানের। নানান কটুকথা বলে তাঁর কলিজাকে দীর্ণ-বিদীর্ণ করতো কথিত উদার-মানবিক সভ্যতার ফেরিওয়ালা আমেরিকান নাগরিকেরা।

একদিন এই নাজমা খান হিজাব পরে পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বিদ্বেষমূলক আচরণের শিকার হন। সেই ঘটনার প্রতিবাদে, কথিত উদারতাবাদীদের হিজাব বিরোধী মনোভাব পরিহার করার নিমিত্তে, ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ এবং সর্বসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যেই প্রতি বছর পালন করা হয় বিশ্ব হিজাব দিবস। বিগত ১১ বছর থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে এই দিবস উদযাপিত হচ্ছে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। তার-ই ধারাবাহিকতায় আজকেও। বর্তমানে বিশ্বের ১৪০ প্লাস রাষ্ট্রে-ই তা উদযাপন হচ্ছে।

সারা বিশ্বে সেক্যুলারিজমের ছড়াছড়ি। সেক্যুলারিজমের প্রসার পাওয়া সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে হিজাব পরিধানকারী নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, আলহামদুলিল্লাহ।

হিজাব শুধু একটুকরো কাপড় দিয়ে নিজেকে আবৃত করার নামই নয়। এটা একটা সতন্ত্র পরিচয় এবং আভিজাত্যের প্রতীকও বটে। হিজাব দিবসের আহ্বানকারী নাজমা খানও তা-ই মনে করেন।

রুচির সাথে মানানসই অথচ মার্জিত ও শালীন পোশাক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় হিজাবের প্রতি রয়েছে নারীদের ব্যাপক সমর্থন ও আকর্ষণ। এবং তা বিপুল অমুসলিম নারীদের ভেতরও সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

সেক্যুলার-নাস্তিকদের অভিযোগ হচ্ছে হিজাব নারীকে অবদমন করে রাখে। নারীকে পিছিয়ে রাখে। নারীর ওপর পুরুষ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া একটা বিষয় এটি।

সেক্যুলার ও নারীবাদীদের অনুকরণ ও অনুসরণীয় ব্যক্তি, তাদের অনুপ্রেরণা-আইডল বিখ্যাত ও সফট-কোর ইসলাম বিদ্বেষী লেখিকা বেগম রোকেয়া তো হিজাব পরিহিতা নারীদের অবরোধবাসিনী বলে কৌশলে কটাক্ষও করেছেন তার লিখনি দিয়ে। সে যাই হোক, তারা যতোই হিজাব নিয়ে বিদ্বেষ বা উন্মাদনা ছড়াক না কেন, হিজাব-ডে ডটকম পরিচালিত একটা জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯৩ ভাগ নারীর মতামত হচ্ছে হিজাব তাঁদের জন্য নিপীড়নের প্রতীক না। তাঁরা নিজেদেরকে আবৃত করে নিপীড়িত মনে করেন না। তাঁরা এ-ও বলেন যে, হিজাব তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি।

তবে দুঃখ-হতাশা আর আফসোসের বিষয় হলো ইদানীং হিজাবকে শার'ঈ মর্যদা বা দৃষ্টিভঙ্গীর বাহিরে নিয়ে এসে কেবলই / শুধুই ফ্যাশনের একটা রূপ হিসেবেও উপস্থাপন করা হচ্ছে। গ্রহণ করা হচ্ছে। হিজাবের প্রকৃত উদ্দেশ্য, মূল ধারণা আড়ালেই রয়ে যাচ্ছে অনেকাংশেই। তবুও হিজাব দিবসের কারণে অনেক অমুসলিম নারীর মধ্যে হিজাব নিয়ে ভুল ধারণা আর মুসলমান নারীদের হীনমন্যতাবোধ কিছুটা হলেও কমেছে। হিজাব নিয়ে সবচেয়ে সুন্দর একটা কথা হচ্ছে যে, একজন মুসলিম নারী স্রেফ ব্যক্তিগত পছন্দ থেকেই, নিজের মনে চেয়েছে বলেই হিজাব করছে না এবং করবেও না। তাঁরা হিজাব করছেন এই জন্য যে, এটা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার নির্দেশ। তিনি বলেছেন। এটা দীনের একটা অবশ্য পালনীয় বিধান, সে জন্য!


-|| বিশ্ব হিজাব দিবস ||-
~রেদওয়ান রাওয়াহা
০১.০২.২১ ইং

পঠিত : ২৩৫ বার

মন্তব্য: ০