Alapon

জনাব আব্দুল্লাহ আবু সাইদ এবং কিছু কথা...



আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সাহেবের বুদ্ধিজীবিতা বা কথকতা উদ্ভুত ক্যালকেশিয়ান লো টেস্টোস্টেরন নিরামিষী লাইন থেকে। এই লাইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সর্বাবস্থায় এলিটের পক্ষে দাঁড়ানো এবং কোন রিস্ক না নেয়া, এস্ট্যাবলিশমেন্টের সেবা করা। এই লাইনের অন্যান্য দেশীয় বুদ্ধিজীবী/সাহিত্যিকদের মধ্যে আমরা সৈয়দ আবুল মনসুর, মীর জাফর ইকবাল, হুমায়ুন আজাদ, আবুল বারাকাত, মুনতাসীর মামুন, এম এম আকাশ, নাজমুল হাসান, সুলতানা কামাল, আনিসুল হক, সেলিনা হোসেন, ড. আনিসুজ্জামান, হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুন ইত্যাকার ব্যক্তিবর্গের কথা বলতে পারি।

ব্রাক্ষ্মনরা সেরা কারন তারা বই পড়ে, এই কথাটা উনার মুখ থেকে চট করে যে পকাৎ হয়ে গেল, এই কথাটাই একটা মিথ্যা কথা। এই মিথ্যার উদ্দেশ্য, নিজের নিরামিষ জীবনকে ঠেলে ধাক্কায়ে একটা জাতে উঠানো এবং বুঝানো, যেহেতু আমি বই পড়ি এবং আমি বই পড়াই, তাই আমিও সেরা। আসলে তো সনাতনী ঋগ্বেদ অনুযায়ী ব্রাক্ষ্মণের জন্ম ব্রক্ষ্মার মুখ থেকে, তাই তারা সবার সেরা। অনেক গবেষকরা মনে করেন এইটাও আসল ঋগ্বেদে ছিল না, পরে ঢুকানো হইসে। যেহেতু ব্রাক্ষ্মণ বিজয়ী শক্তির ধর্মগুরু ও আইনদাতা, তাই স্বাভাবিকভাবেই, একটা সমাজ যেখানে মানুষ মানুষের ওপর প্রভুত্বের অধিকারী, সেখানে সে শ্রেষ্ঠ।

পক্ষান্তরে শূদ্র হচ্ছে পরাজিত শক্তি, ভুমিপূত্র, যে তার সাম্রাজ্য হারিয়ে দাসে পরিনত হয়েছে। তার তো পড়ালেখা করার অধিকার নাই, সে যে শ্রেষ্ঠ হবে, তার কোন উপায়ই বাকি নাই। সে যদি শ্লোক শুনতে যায়, তার কানে ঢাইলা দেয়া হয় সীসা। এই যে বর্নাশ্রম প্রথা, জাতপাত, এর মধ্যে দিয়া এনশিওর করা হইসে যে পরাজিত সর্বহারা দরিদ্র সবসময় ভাষাহীন, ক্ষমতাহীন থাকবে। এই করে ব্রাক্ষ্মণরা বর্নশ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা করতে পারসেন।

যাই হোক, বই পড়া মানুষজন যে শ্রেষ্ঠ এই একইরকম ধারনা নানান কারনে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। কিন্তু আপনি ইতিহাস ও বর্তমান ঘাটলে দেখবেন, বই পড়া নৈতিকতা তৈরিতে কোন ভুমিকা রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ প্রফেসর থানচির গভীর অরন্যে বসবাস করা ত্রিপুরা বা মারমা উপজাতীয় মানুষদের মত নৈতিক নন। অনেক মাদ্রাসার মুহতামিম বা বড় ওয়ায়েজ/আলেম চারিত্রিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে অনেক ঠেলাগাড়িচালকের সমকক্ষ নন।

এই যে পরিস্থিতি, এর প্রধান কারন হচ্ছে, শ্রেষ্ঠত্বের পুজিতান্ত্রিক/ক্ষমতাকেন্দ্রিক ধারনা ও বিন্যাস। পাওয়ার ল্যাডারের ওপরের দিকে থাকাই শ্রেষ্ঠত্ব, এই যে নিম্নশ্রেনীর চিন্তাভাবনা, এটাকে লো টেস্টোস্টেরন বুদ্ধিজীবীরা ক্রিটিক করেন না বা করতে পারার সক্ষমতা তাদের নাই।

কারন তাদের আইডিয়ালস, তাদের ফ্যান্টাসি দাঁড়িয়ে আছে ধনীলোকেরা(যা তারা সাধারনত হতে চান কিন্তু পারেন না) কি করে, তার ওপরে। তাদের সঠিক ও ভুলের সংজ্ঞায়ন দাড়ায়ে আছে, ধনীলোকরা কি কি সঠিক ও ভুল মনে করেন তার ওপর।
প্র‍্যাক্টিক্যালি, বই পড়ে ধনীও হওয়া যায় না সাধারনত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা ভেবে দেখেন, স্কুল জীবনের কথা ভেবে দেখেন।

সবচেয়ে বেশি বই পড়া বন্ধুটি সবচেয়ে ধনী বা ক্ষমতাবান নয়।
মানুষের বস্তুগত শ্রেষ্ঠত্ব মূলত বুদ্ধি, শক্তি, সাহস ও কর্মনিষ্ঠায়। পক্ষান্তরে, মানুষের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব সততা ও ঔচিত্যবোধে। মানুষের আধ্যাত্মিক শ্রেষ্ঠত্ব, খোদার প্রতি তার আনুগত্য ও মাখলুকের প্রতি ভালোবাসায়।

এইগুলো, একজন লো টেস্টোস্টেরন বুদ্ধিজীবী নিজের কগনিটিভ ইন্যাবিলিটির কারনে চিন্তা করতে পারেন না বা সাহসের অভাবে ভাবলেও বলতে পারেন না।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা কারনে ধন্যবাদ দেই, এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে বাংলাদেশের 'মহান' মানুষদের স্বরুপ অনুসন্ধান শিখিয়েছে। আমি দেখতে পেয়েছি কিভাবে সমাজের সবচে বেশি বইপড়া এই 'মহান' মানুষগুলো ডোনেশান/প্রমোশনের লোভে সেভাবে ক্ষমতাবানদের দরজায় অপেক্ষা করেন যেভাবে শুক্রবার সকালে কসাইয়ের দোকানের সামনে ভিড় করে পেটে ঘি হজম না হওয়া একটি বিশেষ চতুষ্পদী প্রানী। ওপরে যে 'মহান' নামগুলো লিখেছি কমবেশি তারাও এমনই 'মহান'।

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সাহেবকে ব্যক্তিগতভাবে আমি অপছন্দ করি না। তিনি ২০১৮ ও ২০১৯ সালে একাধিকবার আমার বইয়ের প্রশংসা করেছেন বলে তাকে আমি ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম।

কিন্তু ব্রাক্ষ্মণ-আর্যদের ব্যাপারে তার এবং তার মত আরো অনেকের এই ফ্যাসিনেশান দেশে যে সাংস্কৃতিক অপনৈতিকতার জন্ম দিয়েছিল, আজ সেটার ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে ফ্যাসিবাদী শ্রেষ্ঠত্বের নৈতিক ভিত্তি। এটাকে ভালোভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

পঠিত : ২০৪ বার

মন্তব্য: ০