Alapon

ভূমিকম্প থেকে আটটি শিক্ষা এবং কিছু কথা...



কেয়ামতের একটি আলামত হলো ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে। প্রতি কয়েকবছর পর পরই আমরা বড় ধরণের ভূমিকম্পের খবর পাচ্ছি।

এ সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমরা কোন ধরণের উইজডম (বিজ্ঞতা) আহরণ করতে পারি? কিভাবে এগুলো বুঝবো? কেন এগুলো ঘটে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। স্পর্শকাতর বিষয় এটি।

ইংরেজি সাহিত্যে এটি থিওডেসি অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়। ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনের সমগ্র একটি শাখাই আছে এ বিষয়টি নিয়ে। অধিকাংশ দার্শনিক দুর্ভোগ দুর্যোগকে দুইটি প্রধান শাখায় বিভক্ত করেছেন। মানুষের দ্বারা সৃষ্ট দুর্যোগ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগগুলো হলো যেমন: খুন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, যুদ্ধ ইত্যাদি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো যা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। যেমন: ভূমিকম্প, সুনামি, বন্যা, সাইক্লোন ইত্যাদি।

আমাদের ইসলামিক ট্রেডিশনে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের বিভিন্ন ধার্মিক গোষ্ঠীর মাঝে এ নিয়ে বহু মত পার্থক্য পাওয়া যায়। আকিদার প্রতিটি বই এসব আলোচনায় ভরপুর।

কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে আমাদের ধর্মতত্ত্বের বইগুলোতে খুব একটা আলোচনা পাওয়া যায় না। হয়তো এ বিষয়ে ছোট্ট কোনো টীকা পেতে পারেন তাফসীরের বইতে, আদবের বইতে বা তাসাউফের বইতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন ঘটে এ নিয়ে পাশ্চাত্যে বেশি আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের ইসলামিক ঐতিহ্য মূলত মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ নিয়ে বেশি আগ্রহী ছিল।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে সবাই বুঝতো এটি আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানেন এর প্রকৃত উইজডম। তাই, এ বিষয়ে আমাদের আগের যুগের ওলামারা কী বলেছেন তা জানতে হলে অনেক খোঁজাখুঁজি করতে হয়। অবশ্য খুঁজলে অল্প স্বল্প বক্তব্য পাওয়া যায়। ইবনে কাইয়ুম, ইবনে তাইমিয়া, গাজালী, ফখরুদ্দিন আল-রাজি প্রমুখ আলেমদের বক্তব্য পাওয়া যায়। আমাদের ট্রেডিশন এ প্রশ্নটির প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিল না।
যেহেতু বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যখন সবকিছুকে প্রশ্ন করা হয়। তাই প্রশ্ন করা হয়, কেন আল্লাহ এমন দুর্যোগ ঘটতে দেন?

তাই, আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমি আটটি বিজ্ঞতা তুলে ধরবো। যা আমাদের ইসলামী ঐতিহ্যে পাওয়া যায়। আমাদের ওলামা এবং ধর্মতত্ত্ববিদেরা এগুলো প্রদান করেছেন। আটটির সবগুলো যে সব পরিস্থিতিতে পাওয়া যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। কোনো পরিস্থিতিতে হয়ত একটি, কোনো পরিস্থিতিতে দুইটি আবার কোনো পরিস্থিতিতে হয়তো সবগুলো একত্রে পাওয়া যাবে।

যাইহোক।

এক নাম্বার: আমাদের কিছু কিছু ওলামা বলেছেন, আল্লাহর কোনো কাজকে যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করা মানুষের জন্য ভুল। তাঁদের উপলব্ধিটা ছিল এরকম- প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন ঘটে এমন প্রশ্ন করাই ভুল। কারণ 'কেন' প্রশ্ন করার আমরা কে? এখানে বিজ্ঞতা নির্ণয় করার আমরা কে? আমাদের কি সে যোগ্যতা আছে আল্লাহর বিজ্ঞতা মূল্যায়ন করার?

তাহলে প্রথম উত্তর ছিল-- এর উত্তর খুঁজতে যেও না। মালিকি মাজহাবের স্কলার ইবনে আরাবী বলেন- কেউ যদি আমাদের প্রশ্ন করে কেন এমন মনে হয় যে, আল্লাহ নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি প্রদান করেন? আমরা এর উত্তর দিই- এর জন্য আল্লাহকে কার কাছে উত্তর দিতে হবে? কারণ তাঁর রয়েছে উচ্চতর নৈতিক কর্তৃত্ব। আল্লাহকে প্রশ্ন করার আমরা কে? এরপর তিনি কুরআনের একটি আয়াতের উদ্বৃতি প্রদান করেন- لَا یُسۡـَٔلُ عَمَّا یَفۡعَلُ وَ هُمۡ یُسۡـَٔلُوۡنَ - আল্লাহ যা করেন সে ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে। (২১:২৩)

আল্লাহ যা করেন সে ব্যাপারে আল্লাহকে প্রশ্ন করা হবে না। বরং আমরা যা করি সে ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের প্রশ্ন করবেন।

ব্যাপারটা হলো আল্লাহর চেয়ে উচ্চতর কোনো ক্ষমতার অস্তিত্ত্ব নেই। আমরা তাঁর সৃষ্টি। তাই, আল্লাহ আমাদের সাথে যাই করেন না কেন, এটা অবশ্যই ন্যায় বিচার হবে। আমরা বুঝি বা না বুঝি। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লাকে উচ্চতর কোনো ক্ষমতার কাছে জবাব দিতে হবে না।

এটি অবশ্যই একটি ঠিক উত্তর। কিন্তু এর মানে কি এটা যে, আর কোনো উত্তর নেই? এছাড়াও আমাদের ওলামারা আরো উত্তর প্রদান করেছেন। তাহলে এক নাম্বার পয়েন্ট হলো আপনার এ বিষয়ে চিন্তা করারই দরকার নাই।

দুই নাম্বার: আমাদের কিছু কিছু ওলামা বলেছেন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে নম্রতা শেখায়। এসব দুর্যোগের উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর ক্ষমতার সামনে আমাদের অসহায়ত্ব উপলব্ধি করা এবং নিজেদেরকে তাঁর নিকট বিনম্র করে দেওয়া। আমাদেরকে মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেওয়া। আমাদের ভেতর থেকে অহংকার নির্মূল করা। আল্লাহ আমাদের বলেছেন- وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ - আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। (২:১৫৫)

আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো। তোমরা তোমাদের জীবন হারাবে। সম্পদ হারাবে। জীবিকা হারাবে। ফসল হারাবে। "আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।"
আমাদের রাসূল (স) যখনই কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন হতেন তিনি উঠে যেতেন এবং ইবাদাত বাড়িয়ে দিতেন। বেশি বেশি নামাজ পড়তেন, দোয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন।
তাহলে, স্পষ্টতই ডিভাইন দুর্যোগে বিজ্ঞতা রয়েছে। এটি আপনার অলস মনকে জাগিয়ে তোলে। আপনার গাফেল মনকে উদ্যমী করে তোলে। এটি আপনাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে আসে। আপনি বেশি বেশি বেহেশত দোজখ নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন। নিজের সসীম জীবন নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন - فَلَوۡلَاۤ اِذۡ جَآءَهُمۡ بَاۡسُنَا تَضَرَّعُوۡا وَ لٰکِنۡ قَسَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ زَیَّنَ لَهُمُ الشَّیۡطٰنُ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ - সুতরাং তারা কেন বিনীত হয়নি, যখন আমার আযাব তাদের কাছে আসল? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। আর তারা যা করত, শয়তান তাদের জন্য তা শোভিত করেছে। (৬:৪৩)

তাহলে দেখা যাচ্ছে এখানে বিজ্ঞতা রয়েছে। যখন এরকম কিছু ঘটে মানুষের উচিত নিজেদেরকে আল্লাহর সম্মুখে বিনম্র করে দেওয়া।

- ড. ইয়াসির কাদি

পঠিত : ১৯১ বার

মন্তব্য: ০