Alapon

| পর্দার সংজ্ঞা |



পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে যখন কাউকে বোঝানো হয়, প্রথমেই কমন একটা প্রশ্ন ফেইস করতে হয়– পর্দা যদি মেয়েদের এতই নিরাপদে রাখে তো, বোরখা-নেকাব পরা মেয়েগুলো ইভটিজিং, রেইপ ইত্যাদির শিকার হয় কেন?

এই প্রশ্ন মস্তিষ্কে তৈরি হওয়ার একমাত্র কারণ– আমাদের সমাজ পর্দাকে শুধুমাত্র 'কাপড়' এবং 'নারী' এই দুটো বিষয়ের সাথে জড়িত করে। এটা একটা মিসকনসেপশন। পর্দা সম্পর্কিত আয়াতসমূহ সঠিকভাবে এনালাইস করলে এই ধারণা বাতিল হয়ে যাবে। এরজন্য পর্দা নিয়ে নাযিল হওয়া প্রথম আয়াতটির উল্লেখ প্রয়োজন।

সূরা নুরের ৩০নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলছেন–
'মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে।'


Let's think about this ayaah..

প্রথমত: আয়াতে পুরুষদের সম্বোধন করা হয়েছে। নারীদের না। তার মানে এই আয়াতের যাবতীয় ইন্সট্রাকশন পুরুষদের জন্য।

দ্বিতীয়ত: নির্দেশনা হিসেবে পোশাকের কথা উল্লেখ না করে বলা হলো–

• দৃষ্টি সংযত রাখবে।

• লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করবে ।

পর্দার বিধান যদি শুধু নারীদের জন্য হতো তবে পর্দা সম্পর্কে নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম এ আয়াতে পুরুষের পরিবর্তে নারীর কথা উল্লেখ থাকত। আবার পর্দা বলতে শুধু বোরখা-নেকাব বুঝালে সেসবের উল্লেখও থাকত। কিন্তু আয়াতে নারী ও পোশাক দুটোই অনুপস্থিত।
অতএব পর্দা= (নারী+পোশাক) এই ধারণা বাতিল। তাহলে পর্দা মানে কী? ইসলাম পর্দাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করে? ইসলামি শরিয়াহ নারী এবং পুরুষ উভয়কে পর্দার অন্তর্ভুক্ত করেছে। এজন্য সূরা নুরের ৩০-৩১ নং আয়াতে তাদের উভয়ের জন্য পর্দার দুটো সাধারণ নীতি ঘোষণা করেছে।
'মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে।'


• দৃষ্টি সংযত রাখা [লাগামহীনভাবে কোনো পরনারী/পরপুরুষের দিকে দেখে না থাকা]

• লজ্জাস্থানের হেফাজত [ফিজিক্যাল ডিমান্ড অবৈধভাবে পূরণ না করা]

দৃষ্টি ও লজ্জাস্থান হেফাজতের তাৎপর্য কী? দৃষ্টি হলো ইবলিসের তীর। এই তীরকে কাজে লাগিয়ে ইবলিস মানুষের তাকওয়ার প্রাচীর ছিদ্র করে দেয়। দৃষ্টি বিনিময়ের মাধ্যমেই নারী-পুরুষে ভালোলাগা সৃষ্টি হয়। আর ভালোলাগাই ইভটিজিং, রেইপ, পরকীয়া ইত্যাদি যত কুকর্মের সূচনা করে। নারী-পুরুষ যদি একে-অপরের দিকে না তাকিয়ে দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তবে ভালোলাগার সুযোগ আর থাকে না। আর ভালো না লাগলে অন্তরে কামনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম।

এবার আসি লজ্জাস্থানের হেফাজত বিষয়ে। নারী-পুরুষ উভয়েরই ফিজিক্যাল নীড আছে। উপযুক্ত সময়ে তা ফিলাপ করা না গেলে মানুষ একটা সময় বাধ্য হয় অনৈতিকভাবে তা পূরণ করার। এজন্য লজ্জাস্থান হেফাজতের পূর্বশর্ত হলো 'বিয়ে'। সঠিক সময়ে বিয়ের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পেলে রেইপ, পরকীয়া ইত্যাদি ইলিগ্যাল কাজে জড়াবে কেন? সাধে কেউ চুরি করে না, অভাবেই মানুষের স্বভাব নষ্ট হয়। নারী-পুরুষের জন্য সাধারণ নীতি ঘোষণার পর নারীদের অতিরিক্ত কিছু আইন দেয়া হয়েছে।

"আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে।"

(সূরা নুর:৩১)

"হে নবি পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পর পুরুষের সঙ্গে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে প্রলুদ্ধ হয়। তোমরা সঙ্গত কথা বলবে।" (সূরা আহযাব: ৩২)


• সৌন্দর্য প্রকাশ না করা [আকর্ষণীয় পোশাক,অলংকার,সুগন্ধি,সাজগোজ ইত্যাদি পরপুরুষের সামনে ব্যবহার না করা]

• ওড়না দ্বারা দেহ আবৃত করা [আকর্ষণীয় না এমন বড় ও মোটা কাপড় দিয়ে নিজের দেহ এমনভাবে ঢাকা যাতে দেহকাঠামো বোঝা না যায়]

• আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে, নরম ভাষায় পরপুরুষের সাথে কথা না বলা। [নবিপত্নীদের কথা বলা হলেও এ আদেশ সকল মুমিন মহিলাদের জন্য] নারীদের জন্য অতিরিক্ত আইনগুলো নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। তারা বলে– দৃষ্টি আর লজ্জাস্থান নিয়ন্ত্রণ কি যথেষ্ট নয়? সাজসজ্জা ঢেকে রাখা, কন্ঠের পর্দা, বোরখা-হিজাব এসবের কী প্রয়োজন!

প্রথমে বলি–অপ্রয়োজনে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল কোনো বিধান দেননি। এই অতিরিক্ত আইনগুলোরও নেসেসিটি আছে। আল্লাহর সবচে সুন্দর সৃষ্টি হলো নারী। আর পুরুষ মাত্রই নারীর সৌন্দর্যের কাঙাল। পুরুষ নারীর প্রেমে মজে মা-বাবাকেও ত্যাগ করার নজির রেখেছে। এই সিচুয়েশনে নারীরা যদি রূপ-সৌন্দর্য এক্সপোজ করে খোলামেলাভাবে চলাফেরা করে; তবে পুরুষ দৃষ্টি এবং লজ্জাস্থান হেফাজতে পুরোপুরি ব্যর্থ হবে এবং বর্তমান সময়ে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, পরকীয়া ইত্যাদি তারই ফল। কারণ পুরুষের ন্যাচার-ই এমন, নারীর রূপই তাদের কাছে সব। আর আশা-আকাঙ্ক্ষার বস্তু যখন মানুষ হাতের নাগালে পায় তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারাটাই নরমাল। এজন্য ইসলামে নারীদের কথাবার্তা থেকে চলাফেরা প্রত্যেকটা দিককে পর্দার আওতায় আনা হয়েছে।

প্রশ্ন থেকে যায়– সিমিলারলি পুরুষদের তেমন বিধান দেয়া হলো বা কেন?
এটা ডিপেন্ড করে নারী পুরুষের প্রকৃতির উপর। পুরুষরা যেমন রূপের পাগল নারীরা তেমন না। নারীদের কন্ট্রোলিং পাওয়ার পুরুষের চাইতে অনেক বেশি। আর নারীরা পুরুষের ব্যক্তিত্ব,মানসিকতা এসবকে প্রায়োরিটি দেয় বেশি। যেখানে রূপ-সৌন্দর্যের প্রতি নারীদের আগ্রহ কম সেখানে অতিরিক্ত পর্দার প্রয়োজনীয়তাও নেই।

অতএব, সমাজটাকে সুশৃঙ্খল করতে হলে,অশ্লীলতা কমাতে হলে, নারী-পুরুষের সম্পর্ককে নিরাপদ সীমায় রাখতে পর্দার সব বিধানই মেনে চলতে হবে। শুধু নারীদের উপর পর্দার দায়বদ্ধতা চাপিয়ে ফাঁকা গুলি ছাড়লে হবে না। নারী-পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টি সংযত করার মাধ্যমে নিজেদের কামনা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বিয়েকে সহজ করে লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে,নারী-পুরুষ উভয়ের কল্যাণের জন্য নারীদের পর্দার অতিরিক্ত আইনও মেনে চলতে হবে। পর্দার পরিপূর্ণ বিধান সমাজে কায়েম হলেই সমাজটা হবে নববী যুগের মতো আদর্শ।
.
.
|পর্দার সংজ্ঞা|
✒️তামিস্রা

পঠিত : ২৯৪ বার

মন্তব্য: ০