Alapon

বক রিভিউ



কভারে প্রথমে একটা লাইন পাওয়া যাবে " এই উপন্যাসের স্থান সত্য, কাল সত্য, ইতিহাস সত্য, কাল্পনিক শুধু এর চরিত্রগুলো। " প্রতিবার বই পড়ার পর মনে হয়েছিল সম্ভবত এইটা লেখকের জীবনী। এবং প্রতিবারই লাইন টা দেখার পর বাস্তবে ফিরে আসি। বই পড়ার পর ঘোর বলি আর রেশ বলি সৃষ্টি হয় যা সহজেই কাটে না কেন জানি। শব্দচয়ন বইটা কে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু লাইন মনে দাগ কাটবে।

বছর দুই আগে পড়া একার্ট টোলের" দ্য পাওয়ার অব নাও" আর "দ্য পাওয়ার অব ইউর সাবকনশাস মাইন্ড" পড়ে নিজের ভিতর ডুব দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেখানে এই বই টা মনে হলো নতুন সংযোজন। আর যেটুকু অভাব ছিল সেটা পূরণ হয়ে গেল নিমিষেই। তবে সে বিশ্বাস টুকু অবশ্যই রাখতে হবে। বিশ্বাসের হের ফের হলে আবার পড়তে পারেন বিশ্বাস টাকে বোঝার জন্য। গল্পে গল্পে কেটে যাবে এক একটা ইতিহাস। আর মাঝে সাঝে শব্দের বিন্যাস আপনাকে ধাক্কা দিবে। সে যাকগে আসুন বই থেকে কিছু পড়ে আসি–

–‘দ্যাখো, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কতটা মূল্যবান আমরা এমনিতেই কি সেটা বুঝতে পারি? পারি না। আমি সেটা গুনে গুনে উপভোগ করি। এই যে দ্যাখো প্রতিবার নিশ্বাস নিচ্ছি আর হার্টের প্রতিটি বিট, ধমনির প্রতিটি পালসের স্পন্দন প্রতি মুহূর্তে জানিয়ে দিচ্ছে তুমি বেঁচে আছ কিন্তু সময়টা দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই ফুরিয়ে যাওয়াটা তুমি তোমার হাতের বা দেয়ালের ডিজিটাল ঘড়ির দিকে তাকালে বুঝতে পারবে না। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মানুষের আস্থা কম। বালিঘড়ি দেখেছ কখনো? "দেখেছি স্যার।"

বালিঘড়িটা এখানে ভালো উদাহরণ। একটা একটা বালিকণা নিচের দিকে ঝরে পড়ছে আর ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে জীবনরূপী বালির স্তূপ। এক-একটা বালিকণা এক-একটা সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টা অথবা দিন যাই বলো না কেন সেদিকে তাকালে নিঃশেষ হয়ে যাওয়াটা উপলব্ধি করা যায়। নিজের অস্তিত্বের সর্বশেষ পরিণতি তো আসলে সময়রূপী এই বালিকণাই।

— এই বালিঘড়িটা আছে আমাদের দেহের ভিতরে। অদ্ভূত ছন্দে হার্ট আর পালস হয়ে টিক টিক করে করে নিঃশেষ হচ্ছে। সেই ছন্দটাকে ধরতে পারলে বুঝতে পারবে এই জীবনটা কতটা মূল্যবান। তুমি চাইলে তোমাকে সেই ছন্দটা ধরার নিয়ম শিখিয়ে দিতে পারি, শিখবে?'

তবে লেখকের আসমান তার অন্যতম অমর কীর্তি। লেখকের ফেলা আসা স্মৃতি, সিটি ওব মিউজিকের শহরে স্বাগত!

বইঃ দারবিশ
লেখকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী
প্রকাশকঃ নালন্দা
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০
পৃষ্ঠাঃ ১১৯
রেটিংঃ ৯.৫/১০

পঠিত : ২৪৪ বার

মন্তব্য: ০