যুবকদের প্রতি ইমাম হাসান আল বান্নার উপদেশ...
তারিখঃ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১১:৪৭
আল্লাহ তায়ালা বলেন: "বল, ‘আমি তো তোমাদেরকে একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’জন অথবা এক একজন করে দাঁড়িয়ে যাও, অতঃপর চিন্তা করে দেখ, তোমাদের সাথীর মধ্যে কোন পাগলামী নেই। সে তো আসন্ন কঠোর আযাব সম্পর্কে তোমাদের একজন সতর্ককারী বৈ কিছু নয়। বল, “আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনি, বরং তা তোমাদেরই”। “আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকট এবং তিনি সব কিছুর উপরই সাক্ষী”। বল, “আমার রব সত্য পাঠিয়েছেন। তিনি যাবতীয় গায়েব সম্পর্কে পরিজ্ঞাত”। বল, “সত্য এসেছে এবং বাতিল কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, আর কিছু পুনরাবৃত্তিও করতে পারে না”। বল, “যদি আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাই তবে আমার অকল্যাণেই আমি পথভ্রষ্ট হব। আর যদি আমি হিদায়াত প্রাপ্ত হই তবে তা এজন্য যে, আমার রব আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও অতি নিকটবর্তী”। [সূরা সাবা ৩৪: ৪৬-৫০]।
হে যুবকরা, আমি তোমাদের সম্মুখে সে আল্লাহর প্রশংসা করছি যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সা. এর উপর। যিনি ছিলেন সকল সংস্কারক ও আল্লাহর পথের মুজাহিদদের নেতা । আরো দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর পরিবারবর্গ, সহচর ও অনুসারীদের উপর।
একটি আদর্শ তখনই সফল হয়, যখন তার প্রতি ঈমান হয় পরিপূর্ণ। যখন সে আদর্শের পথে ইখলাস হয় অপরিমেয়। যখন সে আদর্শের জন্য বীরত্ব বৃদ্ধি পায়। এবং যখন সে আদর্শের জন্য প্রস্তুতি থাকে যা তাকে সে আদর্শ বাস্তবায়নে আত্নত্যাগের প্রেরণা যোগায়। আর ঈমান, ইখলাস, বীরত্ব ও কর্ম এ চারটি মৌল ভিত্তি কেবল যুবকদের চরিত্রেই পাওয়া যায়। কেননা ঈমানের ভিত্তি হলো আলোকিত অন্তর। ইখলাসের ভিত্তি হলো বিশুদ্ধ হৃদয়। বীরত্বের ভিত্তি হলো শক্তিশালী অনুভূতি। আর কর্মের ভিত্তি হলো প্রাণোচ্ছল দৃঢ় সংকল্প।
আর গুণাবলীগুলো যুবক ছাড়া আর কারো মাঝে পাওয়া যায় না। আর এ কারণেই যুবকরা অতীত বা সাম্প্রতিক প্রতিটি রেঁনেসার ভিত্তি ছিল। তারা ছিল রেঁনেসার গুপ্ত শক্তি। আর প্রতিটি আদর্শের চিন্তার বাহক।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: "নিশ্চয় তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।" [সূরা কাহাফ ১৮: ১৩]।
আর এ কারণেই তোমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বেড়ে গিয়েছে। উম্মাহর প্রতি তোমাদের করণীয় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তোমাদের কাঁধে ভারী আমানত অর্পিত হয়েছে। তাই তোমাদের করণীয় হলো গভীর চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রম। তোমাদেরকে স্বীয় অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে এবং উম্মাহকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি, তোমাদেরকে উম্মাহর পূর্ণ অধিকার আদায় করতে হবে।
অন্যদিকে যুবকদেরকে একটি কর্মতৎপর উম্মাহ গঠনের জন্য বেড়ে উঠতে হবে। যে উম্মাহ ছিল শত্রু কবলিত ও বিরোধী শক্তি দ্বারা শাসিত। আর এ রকম উম্মাহ সর্বদাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করে যায়।
১। হারানো অধিকার।
২। হারানো ঐতিহ্য।
৩। হারানো স্বাধীনতা।
৪। গৌরব ও সাহসী মনোবল।
তাই এখন কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তা না করে উম্মাহ কেন্দ্রিক চিন্তা করাটা যুব সমাজের জন্য আবশ্যক। যে এ কর্মপন্থা অনুসরণ করে চলবে, সে ভবিষ্যত জীবনে সফলতা লাভ করবে এবং পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান লাভ করবে। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে সে দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভূক্ত করেছেন; যারা সর্বদা স্বাধীনতা ও ন্যায়ের পথে সংগ্রাম করে। তাই হে মানবতা! প্রস্তুত হও। নিশ্চয়ই বিজয় তাদের জন্য যারা মুমিন। নিশ্চয়ই সফলতা তাদের জন্য যারা কর্মে অবিচল।
হে যুবকরা, একটি অগ্রসরমান জাতির জন্য প্রথম পর্যায়ে সবচেয়ে ক্ষতিকর বিষয়গুলো হচ্ছে:
১। ভ্রান্ত দর্শন ।
২। মিশ্র স্লোগান।
৩। বহু মতবাদ।
৪। পরস্পর বিরোধী পরিকল্পনা ও কৌশল।
৫। নেতৃত্বের উচ্চাভিলাষী একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি।
এসব কিছুই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে বিভক্ত করে দেয় এবং পারস্পারিক সহযোগিতাপূর্ণ শক্তি সামর্থ্যকে ধ্বংস করে দেয়। আর এর ফলে উদ্দেশ্যে পৌঁছা কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়। তার তাই, এ সকল দর্শন সম্পর্কে অধ্যয়ন ও তা পারস্পারিক তুলনা করা একজন সংস্কার ইচ্ছুকের জন্য মৌলিক কর্তব্য।
আর এ কারণেই এটা আমার কর্তব্য যে হিজরতের ১৪ শত বছর পরে বর্তমান সময়ে ইসলামের দাওয়াত কি তা তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা।
অনুবাদ: মু. সাজ্জাদ হোসাইন
মন্তব্য: ০