Alapon

গুম নাকি অভিনয়?


আজকাল গুম হয়ে যাওয়াটা যেন একটা trend হয়ে গিয়েছে। আবু ত্বহা আদনান, মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম আর সম্প্রতি নিখোঁজ হয়ে আবার ফিরে আসা মাহমুদ জাফরের ঘটনাটা আমার কাছে একই ধাঁচের ঘটনা মনে হচ্ছে। চলুন একটু বিস্তারিত বলা যাক।

আজকাল কেউ গুম হয়ে গেলে আমরা প্রথমেই প্রশাসনের উপড় আঙুল উঠাই, আর এই আঙুল উঠানোর যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি।

মরিয়ম মান্নানের ঘটনাটাই চিন্তা করা যাক। শুরু থেকেই সে প্রকাশ্যে একজন বামপন্থী নেত্রী। আর বামপন্থীদের সাথে সরকার কিংবা প্রশাসনের সম্পর্ক কি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার মায়ের গুম হওয়াটা প্রথমদিকে মুসলিম মহলে ততটাও আলোচনার জন্ম দিতে পারেনি। কারণ প্রশাসনের যে এখানে হাত নেই সেটা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু হঠাৎ করে তার মায়ের লাশ পাওয়ার ঘটনাটা সবাইকেই মর্মাহত করেছিলো। এমনকি অনেক মুসলিম দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা ও কলম ধরেছিলো এই বিষয়ে। তখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও এটাকে ইস্যু বানাতে গিয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই তার মায়ের বেঁচে ফিরে আসার ঘটনা তার অভিনয়কে সহজেই প্রকাশ করে দেয়। এখানে অবশ্য মরিয়াম মান্নান বামপন্থী হওয়ায় তার নাটকটা শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো।

কিন্তু আবু ত্বহা আদনান আর মাহমুদ জাফর উভয়েই ডানপন্থী ঘরানার মানুষ। আর ডানপন্থীদের সাথে প্রশাসনের আচরণ ও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু তাদের হঠাৎ করে গুম হওয়া, জাতীয় আলোচনায় আসার পর আবার হঠাৎ করে ফিরে আসার ঘটনায় কয়েকটা প্রশ্নের উদ্রেক হয়। তাদের গুম বা নিখোঁজ যাই বলুন, প্রথমেই আঙুল উঠে প্রশাসনের উপড়। কিন্তু যেই প্রশাসন বৃহৎ দুটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নামে বোমাবাজি আর জঙ্গীবাদের মিথ্যে মামলা সাজাতে পারে,দেশের শান্তিকামী শীর্ষস্থানীয় আলেমদেরকে মিথ্যা মামলায় জেলে রাখতে পারে, তারা এই দুইজনকে কোনরূপ আদালতের দ্বারস্থ না করেই আবার ফিরিয়ে দিয়েছে এইটাকে খুব একটা যুৎসই মনে হচ্ছে না। মরিয়ম মান্নানের মায়ের লুকিয়ে থাকার ঘটনাটা এই প্রশাসন ই বের করেছিলো, তখন অবশ্য প্রশাসনের কথা আমরা বিশ্বাস করেছি,কারণ মরিয়ম মান্নান বামপন্থী বলে শুরু থেকেই তার উপড় আমাদের একটা নেগেটিভ চিন্তার প্রভাব ছিলো। কিন্তু অন্যদিকে ডানপন্থীদের খোঁজ পাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের বিবৃতি আমাদের কাছে বানানো গাল-গল্প ছাড়া আর কিছু ছিলো না আর এর বাইরে আমরা চিন্তা ও করি নাই। আবারো বলছি তারা এই দুইজন সমাজের এমন কোনো ব্যক্তিত্ব ছিলেন না যার কারণে প্রশাসন তাদের খোঁজ দিতে বাধ্য হয়েছে। বরং তাদের চাইতে জনপ্রিয় মানুষরা এখনো জেলে বসে মুক্তি পাওয়ার দিন গুনছে।

এবার আসা যাক, আবু ত্বহা আদনানের ঘটনায়। শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার টুকটাক ভিডিও রিচ পাওয়া শুরু করে। অনেকের কাছেই তখন পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করে বিশেষ করে ফেইসবুক ইউজারদের কাছে। কিন্তু কিছুদিন পর তার নামে জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ততার কানাঘুষা শুরু হয়। যখন দুই একটা ইসলামী দল থেকে তার জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ততার কথা উঠতে থাকে, তখনই সে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়। অতঃপর তার নিখোঁজে শত শত কলাম,গল্প, কবিতা, বিবৃতি আসে কিন্তু খোঁজ মিলে না। আর তার কিছুদিন পরই তার খোঁজ পাওয়া যায় তার শ্বশুর বাড়িতে লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করিনি। প্রশাসনের এই বিবৃতি আমরা বানানো গাল-গল্প বলে উড়িয়ে দিয়েছি। আর ইসলামী দলগুলো ও যদি পরবর্তীতে তার জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ততার কথা পাবলিকলি প্রকাশ করতো তখন তাদেরকে ও হয়তো আমরা প্রশাসনের দালাল বলে চালিয়ে দিতাম, তাই তারাও চুপ হয়ে গিয়েছিলো। আবারো রিপিট করছি, সে নিখোঁজ হওয়ার আগে এমন কোনো বিখ্যাত ব্যাক্তি ছিলো না যাকে গুম করে প্রশাসনের নিখোঁজ হওয়ার নাটক সাজাতে হয় কিংবা তার নামে জঙ্গীবাদের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করতে ভয় পায়।

আমি এখানে মোটেও প্রশাসনকে ডিফেন্ড করছি না কিন্তু ইসলামের প্রতি আমাদের সফট কর্ণার ইসলামবাদীদের বিপক্ষের কথাবার্তা খুব একটা হজম করতে দেয় না। অথচ ইসলাম ই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে, যা শুনবে তাই বলবে না,যাচাই করবে। নিজের অনুমানে কথা বলবে না। অথচ আমাদের কাছে ইসলাম থেকে মুসলিমদের প্রায়োরিটি বেশি। তাদের ব্যাপারে উল্লেখিত অভিযোগ সত্য ও হতে পারে আবার মিথ্যে ও হতে পারে, আল্লাহ অবশ্যই ভালো জানেন। তবে অনুমান করে কথা বলা, শোনা মাত্রই ছড়িয়ে দেয়াটা ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। সুতরাং শুনুন, প্রমাণ আর যুক্তি দিয়ে বুঝুন, তারপর বলুন।

পঠিত : ৩৪২ বার

মন্তব্য: ১

২০২৩-০২-১৪ ১১:০১

User
সামিউল ইসলাম বাবু

সুন্দর বলেছেন।

submit