Alapon

Journey to Infinity...


সকাল সকাল ঘুম দেওয়ার অভ্যাস টা এখনো গেল না। কি বা আর করার। এই যে নয় টার দিকে টুস করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন সে খোঁজ ছিল না। অন্য কেউ যে খোঁজ নিবে সেটুকুও রাখি নাই। হালকা বাতাসের পদধ্বনিতে জানালার ফাক দিয়ে যে বাতাস টুকু আসতে ছিল তাতে শরীরে কাটা ফুটে উঠলো। বসন্তের বাতাসে একটা চাপা ভাব চলে এসেছে। জানান দিচ্ছে গরমের আগমন। বাতাসের তীব্রতা কম বেশি যায় হোক না কেন জানালাতে বাড়ি দিচ্ছে যেরকম হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানো হয়। আর বুলবুলি নীরব সুরে মাঝে মধ্যে গেয়ে উঠছে। এদিকে ঘুঘু মনে হচ্ছে আশে পাশে কারো জন্য বার্তা পাঠাচ্ছে আছে । চাদ টা একটু হেলে পড়েছে। দমকা হাওয়ার সাথে গাছের পাতার বাড়ি আলাদা সুর,আলাদা একটা লিরিক তৈরি করছে।

উপরের তলার মেয়েটা আজ ও প্রেমালাপ রিক্ত হয়েছে। মাঝেমধ্যে তার শুকনা হাসি জানান দিচ্ছে। এতো রাতে ঘুম বাদ দিয়ে এত কিসের আলাপ হতে পারে আর জোরেসোরে হু হি করে হাসার কি আছে। এটা এখনো বুঝে উঠতে পারি নাই। হয়তো এ রহস্য একসময় ভেদ করে দেব আমি। জহির রায়হানের মতো মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হবো। যদিও লেখার পেক্ষাপট টা রাজনীতি, বিদ্রোহ আর বিপ্লবের হলেও আমি কিন্তু আসলেই তার সাথে সামনে ফাল্গুনে দ্বিগুণ হবো। তার চলার সঙ্গী হিসেবে ভালো মানাবে না হয়তো, তা ভেবে ভেবে নিজেকে আর অস্থির করতে মন সায় দেয় না। তবে বসন্তের বাতাসে জহির রায়হান দেখেছিলেন বারুদের গন্ধ। আর এত রাতে আমি খুঁজে চলেছে অন্য কিছু।মানুষ নিউটন বুঝে কিন্তু নিউটন বোমা বুঝে না।

চাদের আলো কাচের জানালা ভেদ করে জানান দিচ্ছে আমি এখনো আছি তোমার সাথে। আবার মনে হচ্ছে কোনো এক বুড়ি রান্না শুরু করছে। ইদের চাদ কিছুটা মহোময়। সে নিজেকে শাড়িতে আচ্ছাদিত করে রাখে। দেখতে ঠিক খুজে এক মানুষের মতো। পাঁচের মতো বললেও ভুল হবে না। আজ নিজের শাড়িটা খুলে দিব্যি হাদারামের মতো দাড়িয়ে আছে। এখন একে অসভ্য টাইপ গালিগালাজ করে কোনো লাভ হবে না। বরং এত সুন্দর জিনিস টারে রীতিমতো অপমান করা হবে। আরে ওই তো একটা তারা যে কিনা আজ থেকে কয়েক সৌরবছর আগে জ্বলে উঠেছিল তার আলো আজ দেখা গেল। এত বড় প্রকাণ্ড মহাসাগরের বুক জুড়ে কত শত তারার মেলা। কত পাগলই ছিলাম যে এক সময় তারা গুনে শেষ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সসীম থেকে অসীম যাত্রা টা এতটা সহজ না মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আকাশ আর পৃথিবীর মাঝে আমি এখন একাই আছি। আশেপাশেই সব কিছু তার আপন শক্তিতে, বিশ্বাসে ছুটে চলেছে।

আরে আপনাদের কে প্রিয়তির কথা বলায় হলো না। মেয়েটা যখন হেটে যায় তখন মনে হয় তার কোনো পিছুটান নেই, কোনো ব্যস্ততা নেই,নেই কোনো আশা ভালোবাসা। আর থাকলেও যে অবাক হওয়ার মতো কিছু হবে এমন হওয়ার সম্ভাবনা আমার ক্ষেত্রে কম। তাতে কি আসে যায়। সাদা ঘোড়ার মতো (যদিও এদিকে দেখা যায় না) মেঘ গুলো আস্তে আস্তে চাদের রাস্তা পাড় হচ্ছে আর তার ছায়া আমার মুখের উপর পড়ছে। এরকম সাদা মেঘের ভোলা পেলে এখান থেকে সেখানে অবিরাম কয়েক টা দিন ঘুরে বেড়াবো প্রিয়তির মতো। থাকবে না কোনো পিছুটান, না কোনো কিছুর অভাব অনটন। না কোনো ব্যস্ততা। আর খুব করে ব্রাউন চিনিতে আরবীয় কফি। প্রিয়তিকে যে খুব করে পাশে চাইবো এমন না তবে থাকলে মন্দের ভালো আর কি। কথায় আছে না এরকম একটা ডিজাইন দেখান অন্য একটা রঙে। তবে প্রিয়তির প্রেমে পড়ে পাগল হওয়ার ইচ্ছে বিন্দু মাত্র নেই। মাতাল হতে হলে আরও কত কি আছে সেগুলোর প্রেমে পড়বো তবুও প্রিয়তির প্রেমে পড়া দায়। ঐ যে তারা ফুল, তারা ফুলের উপর চাদের আলো পড়তেই মনে হচ্ছে তারা ফুল বলে উঠছে আমিও আলো ছড়াতে পারি। তারা ফুলের মধ্যে কেমন হিংসু'তে ভাব।

কোথায় যেন হুমুদ আল খুদারের কুন আনতা বেজে চলেছে। এর সারমর্ম কিছুটা এরকম – আমি তাদের মত হতে গেলাম তাদের কে বাহ্যিক অনুকরণ করলাম শুধু মাত্র অভিমান আর বড় কিছু করার জন্য। তাদের সাথে তাল মিলানোর জন্য। গড্ডালিকা প্রবাহ। কিন্তু আমি বড় ভুল করেছি। আমি শুধু আমিই থাকব আমার মত। আর কারো মতো না। যেটা ভালো সেটাই গ্রহণ করবো। না না, তাছাড়া আর কিছু না। ওওওহ ওহ...এই গায়কের গানের কোরাস, লিরিক একটু বেশিই কিউট। একটু বেশিই...


জীবনে যা আছে তার কতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি? তার থেকে যা নেই, পাওয়া হয় নি তার জন্য হাহুতাশ করছি সবথেকে বেশি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার ফলে যেটুকু ছিল সেটুকুও ভুলে যেতে বসেছি। এটাই হয়তো নিয়তি। এইতো প্রিয়তি কে বলা হয় নি তাকে কতটা পছন্দ করি তার জন্য হয়তো তার প্রতি যে আশা নেশা ছিল সেটাই আজ নাই হয়ে গেছে। এখন কি তাকে বলা উচিত? আয়াজের ভাষায় বলতে ইচ্ছে হয়–
এসব গভীরতম ক্ষত, আরও আঘাত আছে যত,
তোমার বুক ছুঁয়েছি বলেই সেসব চোখ করেছে ভার;
তবু বাকির হিসেব কষে, বলব দ্রোহের দুঃসাহসে,
তুমি দীর্ঘ সিয়াম শেষে আমার কাঙ্ক্ষিত ইফতার।
সম্ভবত অনেক দেরি হয়ে গেছে! প্রেমে পড়া বারণ। না হলে বার বার প্রেমে পড়তাম। কোথা থেকে যেন কোকিলের কুহু কুহু ডাক শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে গলা ছিড়ে গান শুরু করবে। এতে রাতে না ডাকলেই না যেন। মানুষের নীরবতা, নিস্তব্ধতা কেড়ে নিতে হবে এদের।


হাতের কাছে টেবিল থেকে বালু ঘড়িটা নিয়ে জানালার পাশে রাখলাম। আলো পেয়ে বালিকণা গুলো চিকমিক ঝিকমিক করছে। সাথে ঠিক ঘড়ির মতো টিক টিক আওয়াজ ব্যতীত ঝরে পড়ছে একে একে বালুকণা। সময় কমে যাচ্ছে চোখের সামনে। চাইলেও আটকাতে পারছি না যেমনটা প্রিয়তির চলার পথ রোধ করার শক্তি নেই ঠিক সেরকম। প্রতিটা হৃদস্পন্দন স্পষ্ট বুঝতে পারছি। রক্তের অনু পরমাণু কণা একে একে ফুসফুস নামক মহাসাগরের দিকে ছুটে চলছে ডুবে যাওয়ার জন্য। সাথে ঘড়ির টিক টক আওয়াজ জানান দিচ্ছে সসীমের যাত্রা। সেটা ভালো নাকি খারাপ পুরো দায় তো আমার। খুব করে চাইবো এই সসীম পথের যাত্রার পুরোটা সময় যেন আধমরা হয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি। আধমরা হয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলে যেমন জানা যায় না যাত্রা পথে কি হয়েছিল, আমার ও সেরকম জানার ইচ্ছে নেই। ঘুমের যাত্রা আরো দীর্ঘায়িত হোক।


চাদের অবস্থান কিছুটা নিবু নিবু হতে চলেছে মেঘের কারণে। চোখ যত দূর যায় চোখে ধরা দেয় তারা মরুভূমি। আঙুল উচু করে মনের কল্পনার দৃশ্য নিজের অকপটে আঁকতে কার না ভালো লাগে। আকালাম সেরকম কিছু, কয়েকটা। কয়েকটার তো মাথা মুন্ডু কিছু নেই। সব সময় থাকবে এমন কথা ছিল না। সে হিসেবে মানানসই। টেকসই না কিন্তু। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো একই কোরাসে একই লিরিকে প্রতিটি শিল্পী গেয়ে উঠবে–
"আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম।"

পঠিত : ৩৮৮ বার

মন্তব্য: ০