Alapon

"আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর নামে হাদীসের প্রতি সন্দেহবাদের অপবাদ: আমাদের জবাব" ---------------------------------------------------




আল ইমাম, আল উস্তাদ, আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী (রাহঃ) বিভিন্ন লেখনি নিজের মনমত কাটছাঁট ও কনভার্ট করে তাঁর বিরুদ্ধে যত মিথ্যা অভিযোগ করা হয় 'হাদীসের প্রতি সন্দেহবাদ বা হাদীস অস্বীকার' তার অন্যতম। যেমন তিনি হাদীসের রেওয়ায়াত ও দিরায়াতের উপর দীর্ঘ আলোচনা করার পর বলেন, "এ আলোচনা থেকে একথা জানা গেল যে, হাদীসকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দেওবার পক্ষপাতী ব্যক্তিরা যেমন ভ্রান্ত, তেমনি হাদীসকে অনুসরণ করার ব্যাপারে শুধু (সনদ তথা) রেওয়ায়েতের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরাও ভুল থেকে নিরাপদ নয়। নির্ভুল পথ এ দু'টির মাঝখানে রয়েছে, যে পথ অনুসরণ করেছেন মুজতাহিদ ইমামগণ। ইমাম আবু হানিফা রাহঃ এর ফিকহের মধ্যে এমন কতিপয় মাসয়ালা দেখা যাবে যা মুরসাল, মু'যাল এবং মুনকাতি হাদীসের উপর নির্ভরশীল অথবা কোন মাসয়ালায় সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে যঈফ হাদীস গ্রহণ করা হয়েছে কিংবা যেগুলোতে হাদীস এক কথা বলছে ইমাম আবু হানিফা রাহঃ ও তাঁর সহচর অন্য কথা বলছেন। একই অবস্থা ইমাম মালিক রাহঃ এর। তথ্য নির্ভরতার দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর মধ্যে জোরালো থাকা সত্ত্বেও ফিকহের বুঝ তাঁকে এমন হাদীসের খেলাফ ফতোয়া দিতে বাধ্য করেছে, যেগুলোকে মুহাদ্দিসগণ সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। তাই লাইস বিন সা'দ তাঁর ফিকহ থেকে এ ধরণের প্রায় ৭০ টি বিষয় বের করেছেন। ইমাম শাফেয়ী রাহঃ এর অবস্থাও এ থেকে ভিন্ন নয়।" (নির্বাচিত রচনাবলী পৃঃ ২/১৯২-১৯৩)

এতটুকু উল্লেখ করে আহলে হাদীস নেতা ড. গালিব জনৈক আহলে হাদীসের বরাতে বলেন, 'আসলে ইমাম আবু হানিফা মুরসাল হাদীসকে যঈফ গণ্য করতেন না, যা সকলের বিরুদ্ধ মত। ইমাম মালিক ও শাফেয়ীর সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন। তাঁরা জেন শুনে সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে কোনো ফতোয়া দেননি। লাইস সম্পর্কে ৭০ টি ফতোয়ার ব্যাপারে যে দাবী করা হয়েছে, সেটাও একেবারে ভিত্তিহীন। থাকলে দু' চারটে পেশ করা হোক।' উপরের আলোচনায় হাদীসের বর্ণনার উপরে ভরসা না করে মুজতাহিদ ইমামগণের রায়কে- যদি তা সহীহ হাদীস বিরোধীও হয়, তবুও একে সঠিক পথ বলা হয়েছে। (গালিব, তিনটি মতবাদ পৃঃ ৩৫)
.
আমাদের জবাব :

আফসোসের বিষয় হল- অন্যান্য নিন্দুকের মত গালিব স্যারও আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ লেখনি কেটে নিজের মনমত ব্যাখ্যা করে পাঠকদের ভুল ধারণা দিতে চেয়েছেন। তিনি শুধু এখানে এতটুকুই নয় বরং মওদুদী রাহঃ বিভিন্ন লেখা নিজের মনমত কাটছাঁট ও কনভার্টের মাধ্যমে বিকৃত অর্থ করে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর লেখা থেকে পরের কয়েকটা লাইন তুলে দিলেই পাঠক বুঝতে পারবে গালিব স্যারের অভিযোগ মিথ্যা। আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) বলেন,[q]
"মায়াজাল্লাহ! এর অর্থ মোটেও এই নয় যে, ইমামগণ কোনো হাদীসকে সহীহ জেনেও তাকে অগ্রাহ্য করতেন। বরং প্রকৃত ব্যাপার এই ছিল যে, তাঁদের দৃষ্টিতে হাদীসের সত্যতার মাপকাঠি একমাত্র সনদ ছিল না বরং সনদ ছাড়াও তাঁরা تفقه বা অনুধাবন শক্তি দ্বারা হাদীসকে যাচাই-বাছাই করতেন এবং যে হাদীস প্রকৃত সত্যের নিকটবর্তী বলে তাঁদের মনে প্রতীতি জন্মাত মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিকোণ থেকে তা যতই মারজু হোক না কেন- তাকেই গ্রহণ করতেন।" (নির্বাচিত রচনাবলী পৃঃ ২/১৯৩)[/q]

আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) যা বলেছেন, তা শতভাগ নির্ভুল। মুজতাহিদ ইমাম তথা ফকীহগণ যে হাদীসের মর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখেন, এ কথা ইমাম তিরমিযী রাহঃ এর মত বিখ্যাত মুহাদ্দিসও বলেছেন। তিনি একটি হাদীসের আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন,
وَكَذَلِكَ قَالَ الْفُقَهَاءُ وَهُمْ أَعْلَمُ بِمَعَانِي الْحَدِيثِ-
ফকীহগণ এরূপ কথা বলেছেন, আর তাঁরাই হাদীসের মর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখেন। (জামে তিরমিযী হাঃ ৯৯০)


আর হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রের একজন সাধারণ ছাত্রও জানে যে, সনদ সহীহ হলেই মুজতাহিদ ইমামগণ সাথে সাথেই সেই সহীহ হাদীসের উপর আমল করার অনুমতি দেননা। অনেক সময় ইমামগণ জেনে বুঝেই বিশেষ কোনো ফিকহি কারণে মতনের উপর আপত্তি তুলে সহীহ হাদীসের উপর আমল না করে ফিকহি ব্যাখ্যা প্রদান করে হাদীসটি ত্যাগ করেন। (দেখুনঃ আল্লামা ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী, ২/২৩৩; আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী, রিসালাতুন ফিল খুরুজি আনিল মাযাহিবিল আরবায়া, পৃঃ ২২; আল্লামা ইবনে হামদান, সিফাতুল ফতোয়া, পৃঃ ৩৮)
ইমাম নববী (রাহঃ) বলেন,

وإنما اشترطوا ماذكرنا لأن الشافعي رحمه الله ترك العمل بطاهر أحاديث كثيراة رآها وعلمها لكن قام الدليل عنده علي طعن فيها أو نسخها وأ تخصيصها أو تاويلها أو نحو ذلك-
"কোন হাদীস ত্রুটিযুক্ত, রহিত, বিশেষ ক্ষেত্রে সুনির্ধারিত অথবা হাদীসটির ব্যাখ্যা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার শর্তসাপেক্ষে ইমাম শাফেয়ী রাহঃ অনেক সহীহ হাদীসের উপর আমল করেননি অথচ তিনি এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং অন্যদের শিক্ষা দিয়েছেন। আর এর জন্য তাঁর নিকট সুনির্ধারণ দলিল ছিল।" (শারহুল মুহাজ্জাব, ১/১০৪)


হাদীসের উসূল সম্পর্কে যার সামান্য জ্ঞান আছে সেও জানে যে, 'সনদ সহীহ হলেই মতন সহীহ হওয়া শর্ত নয়'। মতন নিয়ে প্রশ্ন তুললে কেউ হাদীস সন্দেহবাদী বা অস্বীকারকারী হয়ে যায় না। আল্লামা ইবনে আব্দুল বার (রাহঃ) একটা সহীহ হাদীসের সমালোচনা করে বলেন,

ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻭﻫﻢ ﻭﻏﻠﻂ ﻭﺃﻧﻪ ﻻ ﻳﺼﺢ ﻣﻌﻨﺎﻩ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺤﺎ-
"ইবনে ওমরের বর্ণিত হাদীস উদ্ভট কল্পনা প্রসূত ও ভ্রান্ত। এর বক্তব্য সঠিক নয় যদিও তার সনদ সহীহ।" (আল ইস্তিয়াব: ৩/১১১৬)

এরকম অনেক হাদীস পাওয়া যায় যেগুলো মুজতাহিদ ইমামগণের নিকট সনদের দিক থেকে সহীহ রূপে স্বীকৃত কিন্তু হাদীসের বিষয় বস্তু, অকাট্য উক্তি কিংবা ফিকহী জ্ঞানের বিরোধী হওয়ার কারণে মুজতাহিদ ইমামগণ সেগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হল-
১. আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ.
নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আ'রাফ : ৭/৫৪)

এ আয়াতের তাফসীরে সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক ইমাম ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন, "এখানে আল্লাহ তা'য়ালা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা। আসমান ও যমীনকে তিনি ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। যার বর্ণনা কুরআনুল কারীমের কয়েক জায়গায় এসেছে।" একটু এগিয়ে তারপর বলেন, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার হাত ধরে বললেন,

«خَلَقَ اللهُ التُّرْبَةَ يَومَ السَّبْتِ، وَخَلَقَ فِيهَا الجِبَالَ يَومَ الأَحَدِ، وَخَلَقَ الشَّجَرَ يَومَ الاِثْنَينِ، وَخَلَقَ المَكْرُوهَ يَومَ الثُّلاَثَاءِ، وَخَلَقَ النُّورَ يَوْمَ الأَربِعَاءِ، وَبَثَّ فِيهَا الدَّوابَّ يَومَ الخَمِيسِ، وَخَلَقَ آدَمَ عليه السلام، بَعْدَ العَصْرِ مِنْ يَومِ الجُمُعَةِ في آخِرِ الخَلْقِ فِي آخِرِ سَاعَةٍ مِنَ النَّهَارِ فِيمَا بَيْنَ العَصْرِ إِلَى اللَّيْلِ».
"আল্লাহ তা‘আলা শনিবার জমিন সৃষ্টি করেছেন, রবিবার তার মধ্যে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন। সোমবার সৃষ্টি করেছেন গাছ-পালা। মঙ্গলবার মন্দ বস্তু সৃষ্টি করেছেন। বুধবার আলো সৃষ্টি করেছেন। তাতে (জমিনে) জীবজন্তু ছড়িয়েছেন বৃহস্পতিবার। আর সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করার পর পরিশেষে জুমার দিন আসরের পর দিনের শেষভাগে আসর ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে (আদি পিতা) আদম-কে সৃষ্টি করেছেন।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৭৮৯; মুসনাদে আহমাদ হাঃ ৮১৪১; রিয়াযুস স্বালিহীন হাঃ ১৮৬৩)


"এ হাদীসে সপ্তম দিনেও (সৃষ্টির কাজে) ব্যস্ত থাকার কথা সাব্যস্ত হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন, ব্যস্ততার দিনের সংখ্যা ছিল ছয়। এ জন্য ইমাম বুখারী (রাহঃ) সহ প্রমুখ মনীষী এ হাদীসের সঠিকতার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন এবং সম্ভাবত আবূ হুরায়রা (রা) কা'ব আহবার থেকেই শুনে বলেছেন (রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে নয়)।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আ'রাফ : ৭/৫৪ তাফসীর দ্রষ্টব্য)

সনদগত ভাবে হাদীসটি সহীহ। ইমাম আহমদ, মুসলিম (রাহঃ) সহ প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারপরও ইমাম ইবনে কাসীর এ হাদীসের মতনের সমালোচনা করেছেন এবং তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণী নয় বলে ইমাম বুখারী (রাহঃ) সহ প্রমুখ মুহাদ্দিসের বরাতে মন্তব্য করেছেন।


২. ইমাম বুখারী (রাহঃ) সহীহ বুখারীর 'কিতাবুস সালাহ' এর দ্বাদশ অধ্যায়ে بَاب مَا يُذْكَرُ فِي الْفَخِذ ঊরু সতরের অন্তর্ভুক্ত কি না - এ সম্পর্কে আলোচনায় বলেন,
وَحَدِيثُ أَنَسٍ أَسْنَدُ وَحَدِيثُ جَرْهَدٍ أَحْوَطُ حَتَّى يُخْرَجَ مِنْ اخْتِلَافِهِمْ-
সনদের দিক হতে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস অধিক সহীহ্ হলেও জারহাদ (রাঃ)-এর (ঊরু সতর হওয়ার) হাদীস অধিকতর সতর্কতার বিচারে অগ্রগণ্য। এভাবেই আমরা (মুসলিম উম্মাহর মধ্যে) মতবিরোধ এড়াতে পারি। (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৭১ আলোচনা দ্রঃ)
ইমাম বুখারী 'তারীখুল কাবীরে' জারহাদ (রাঃ) হাদীসকে ইজতিরাবের কারণে যঈফ বলেছেন। (ফাতহুল বারী ১/৫৭১) তাহলে দেখুন, ইমাম বুখারী সহীহ'র বিপরীতে যঈফ হাদীসকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।

৩. সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে দাড়িয়ে পেশাব করার সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ বুখারী হাঃ ২২৪, ২২৫; সহীহ মুসলিম হাঃ ২৭৩; তিরমিযী হাঃ ১২; আহমদ হাঃ ২৩৩০১) তবুও কোনো মুজতাহিদ ইমাম দাড়িয়ে পেশাব করাকে ওয়াজিব বা সুন্নাত বলে ফতোয়া দেননি বরং এ সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন।

উমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করাতে দেখে বললেনঃ
"‏يَا عُمَرُ لاَ تَبُلْ قَائِمًا‏"‏ ‏.‏ فَمَا بُلْتُ قَائِمًا بَعْدُ‏.
"হে উমর! দাঁড়িয়ে পেশাব করো না।" এরপর আমি আর কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি। (তিরমিযী হাঃ ১২)

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) এ হাদীসকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন। তারপরও তিনি এই হাদীসের পক্ষে রায় দিয়ে বলেন,

وَمَعْنَى النَّهْىِ عَنِ الْبَوْلِ قَائِمًا عَلَى التَّأْدِيبِ لاَ عَلَى التَّحْرِيمِ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ إِنَّ مِنَ الْجَفَاءِ أَنْ تَبُولَ وَأَنْتَ قَائِمٌ ‏.

দাঁড়িয়ে পেশাব করা একেবারে হারাম নয় তবে আদব ও শিষ্টাচারের দৃষ্টিকোন থেকে তা নিষেধ করা হয়েছে। ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি বলেছেন:
'দাড়িয়ে পেশাব করা শিষ্টাচার বিরোধী'। (তিরমিযী হাঃ ১২)


৪. ফুদাইল ইবনু মারযূক বলেছেন, ইবরাহীম ইবনু হাসান থেকে, ফাতিমা বিনতুল হুসাইন ইবনু আলী থেকে, আসমা বিনতু উমাইস (রা) তিনি বলেন:

"রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছিল। এসময়ে তাঁর মস্তক ছিল আলীর (রা) কোলে। এজন্য আলী আসরের সালাত আদায় করতে পারেন নি। এমতাবস্থায় সূর্য ডুবে যায়। তিনি আলীকে বলেন: তুমি কি সালাত আদায় করেছ? তিনি বলেন না। তখন তিনি বলেন: হে আল্লাহ, আলী যদি আপনার ও আপনার রাসূলের আনুগত্যে থেকে থাকেন তবে তাঁর জন্য আপনি সূর্য ফিরিয়ে দিন। আসমা বলেন: আমি দেখলাম, সূর্য ডুবে গেল। এরপর ডুবে যাওয়ার পরে আবার তা উদিত হলো।" (ইবনু আররাক, তানযীহুশ শারীয়াহ ১/৩৭৮)


এ সনদে আসমা বিনতু উমাইস প্রসিদ্ধ মহিলা সাহাবী। ফাতিমা বিনতুল হুসাইন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য রাবী। ফুদাইল ইবনু মারযূক সদুক সত্যপরায়ণ রাবী। ইবরাহীম ইবনু হাসান কে ইবনু হিববান গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করেছেন। এভাবে সনদ বিচারে হাদীসটি হাদীসটি সহীহ না হলেও ‘হাসান’ বলে গণ্য হতে পারে। কোনো কোনো মুহাদ্দিস বাহ্যিক সনদের দিকে তাকিয়ে এরূপ মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ইবনু তাইমিয়া, ইবনু কাসীর, যাহাবী ও অন্যান্য অনেক মুজতাহিদ মুহাদ্দিস تفقه তথা অনুধাবন শক্তি দ্বারা গবেষণা করে হাদীসটির ‘মতন’ বা ‘মূলবক্তব্য’ ‘জাল’ বলে গণ্য করেছেন। (ইবনু আররাক, তানযীহুশ শারীয়াহ ১/৩৭৮-৩৮২; আলবানী, যঈফাহ ২/৩৯৫-৪০১)

৫. নবী (সাঃ) এর কন্যা হযরত যয়নব (রা) এর স্বামী আবুল আস প্রথমে অমুসলিম ছিলেন। পরে মুসলিম হয়েছেন। সহীহ সনদে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
َرَدَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ابْنَتَهُ زَيْنَبَ عَلَى أَبِي الْعَاصِي بْنِ الرَّبِيعِ بَعْدَ سِتِّ سِنِينَ بِالنِّكَاحِ الْأَوَّلِ وَلَمْ يُحْدِثْ نِكَاحًا قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ بِإِسْنَادِهِ بَأْسٌ-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মেয়ে যয়নাব (রাঃ) কে প্রথম বিয়ে বহাল রেখেই আবূল আস ইবনুর রাবীকে ছয় বছর পর ফিরিয়ে দিয়েছেন, নতুন করে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেননি। তিরমিযী বলেন, এ হাদীসের সনদে কোনো সমস্যা নেই। (সনদ সহীহ; জামে তিরমিযী হাঃ ১১৪৩; আবু দাউদ হাঃ ২২৪০; ইবনু মাজাহ হাঃ২০০৯)

পক্ষান্তরে একটি যঈফ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নতুন করে মোহরানা নির্ধারণ করে তাঁদের বিবাহ নবায়ন করেছিলেন। (জামে তিরমিযী হাঃ ১১৪২, ১১৪৪; ইবনে মাজাহ হাঃ ২০১০; শায়েখ আলবানীও হাদীসটি কে যঈফ বলেছেন। দেখুন, ইরওয়া হাঃ ১৯১৮; যঈফ আবূ দাউদ হাঃ ৩৮৭)।

তারপরও ইমাম তিরমিযী সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে যঈফ হাদীসকেই অগ্রধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেন,

هَذَا حَدِيثٌ فِي إِسْنَادِهِ مَقَالٌ وَفِي الْحَدِيثِ الْآخَرِ أَيْضًا مَقَالٌ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنَّ الْمَرْأَةَ إِذَا أَسْلَمَتْ قَبْلَ زَوْجِهَا ثُمَّ أَسْلَمَ زَوْجُهَا وَهِيَ فِي الْعِدَّةِ أَنَّ زَوْجَهَا أَحَقُّ بِهَا مَا كَانَتْ فِي الْعِدَّةِ وَهُوَ قَوْلُ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ وَالْأَوْزَاعِيِّ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَقَ-


এ হাদীসের সনদ সম্পর্কে সমালোচনা রয়েছে। তবুও আহলে ইলম এই হাদীসের মর্মানুযায়ী আমল করেছেন। কোন মহিলা যদি প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইদ্দত পালনের সময়ই তার স্বামী ইসলাম গ্রহণ করে তবে তার পূর্ব স্বামীর অধিকার অগ্রগণ্য। ইমাম মালিক ইবনু আনাস, আল-আওযায়ী, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক প্রমুখ ইমামগণের ইহাই অভিমত। (তিরমিযী হাঃ ১১৪২ এর আলোচনা)
.
প্রিয় পাঠক! এবার বলুন, আল্লামা মওদুদী রাহঃ আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ী রাহঃ সহ প্রমুখ মুজতাহিদ ইমাম সম্পর্কে যা বলেছেন, তা কি ভিত্তিহীন? একই কথা ইমাম বুখারী, তিরমিযী, নববী, ইবনে হাজার, ইবনে রজব, ইবনে কাসীর, ইবনে আব্দুল বার, যাহাবী রাহঃ সহ অনেক মুহাদ্দিস ও ফকিহ বলেছেন, এতে কি তাঁরা হাদীস অস্বীকারকারী হয়ে গেলেন? তা না হলে মওদুদী রাহঃ এর বিরুদ্ধে এ অপবাদ কেন? বস্তুতঃ আজকাল কেবল হিংসার বশবর্তী হয়ে কতিপয় শায়েখ সত্য গোপন রেখে কিংবা অজ্ঞতাবশত মওদুদী রাহঃ কে ঘায়েল করার চেষ্টা করতেছেন। আল্লামা মওদুদী রাহঃ একটি উদ্ধৃতি দিয়ে শেষ করছি। তিনি বলেন, "যারা আমার সম্পর্কে না জেনে (আমার মন্তব্য/বক্তব্য) বিশ্লেষণ না করে লোকদের মধ্যে এরূপ কু-ধারণা ছড়াচ্ছে, সেজন্য আমি সবর করছি এবং তাদের কর্মের বিচার আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিচ্ছি।" (রাসায়েল ও মাসায়েল ১/১৫৯)

পঠিত : ২৯১ বার

মন্তব্য: ০