Alapon

আল্লাহর একটি নাম হলো আল-জামিল...



আল্লাহর একটি নাম হলো আল-জামিল। আল-জামিলের অর্থ, যিনি সুন্দর। যিনি সবচেয়ে সুন্দর। নামটি যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আরোপ করা হয় তখন এটি চারটি অর্থ প্রকাশ করে।

প্রথম অর্থঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজেই সৌন্দর্য এবং পারফেকশনের সর্বোচ্চ চূড়া। কোনো কিছুই আল্লাহর চেয়ে বেশি সুন্দর নয়। ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের চেয়েও বড় একটি পুরস্কার রয়েছে। যে পুরস্কারের কাছে জান্নাত ম্লান হয়ে পড়বে। আর তা হলো— আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে দেখার পুরস্কার। কুরআনে এসেছে- وُجُوۡهٌ یَّوۡمَئِذٍ نَّاضِرَۃٌ - اِلٰی رَبِّهَا نَاظِرَۃٌ - "কতক মুখ সেদিন উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে।" (৭৫:২২-২৩)

এ জন্য রাসূলুল্লাহ (স) এর একটি দোয়া ছিল- اللهم اني اسالك لذة النظر الى وجهك الكريم - আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা লাজ্জাতান নাজারি ইলা ওয়াজহিকাল কারিম। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার অভিজাত এবং সুন্দর মুখের দিকে তাকানোর স্বাদ পেতে চাই।

দ্বিতীয় অর্থঃ
আল্লাহর সকল নাম এবং গুণাবলী সুন্দরতম।

তৃতীয় অর্থঃ
আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির সাথে সুন্দরতম উপায়ে আচরণ করেন। আল্লাহ আমাদের সাথে উত্তম উপায়ে আচরণ করেন। তিনি আমাদের প্রায় সকল পাপকে অগ্রাহ্য করেন। তিনি ক্ষমা করেন, ঢেকে দেন। তিনি আমাদের সাথে মন্দ বা অমার্জিত উপায়ে আচরণ করেন না। তিনি আমাদের সাথে এমন সুন্দর পন্থায় আচরণ করেন যেভাবে কোনো মানুষের পক্ষে আচরণ করা সম্ভব নয়।

আল্লাহ যদি আমাদের সাথে আমাদের কৃত অন্যায় অনুযায়ী আচরণ করতেন, যদি একেবারে ন্যায্য পন্থায় আচরণ করতেন, যদি সকল মন্দ কাজের শাস্তি দিতেন, যদি প্রতিটি পাপের জন্য পাকড়াও করতেন, আল্লাহ বলেন - مَا تَرَكَ عَلَىٰ ظَهْرِهَا مِن دَابَّةٍ - "তাহলে যমীনের উপর একটি প্রাণীকেও তিনি ছেড়ে দিতেন না।" (৩৫:৪৫)

আমরা যেমন আচরণ পাওয়ার যোগ্য আল্লাহ যদি সেভাবে আচরণ করতেন তাহলে কারোই বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তা করেন না। কেন? কারণ, তিনি হলেন আল-জামিল। তিনি সুন্দর। আর তিনি আমাদের সাথে সুন্দরতম উপায়ে আচরণ করে থাকেন। তিনি প্রায় আমাদের সকল পাপকে উপেক্ষা করেন। আর যদি আমরা তাঁর দিকে ফিরে আসি তাহলে তিনি আমাদের প্রতিটি পাপ ক্ষমা করে দিতে রাজি আছেন। তদুপরি, আমরা যতটুকু পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য আল্লাহ আমাদেরকে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রদান করে থাকেন। এভাবেই আল-জামিল তাঁর সৃষ্টির সাথে আচরণ করে থাকেন।

চতুর্থ অর্থঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর সৃষ্টি জগতকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ হলেন আল-জামিল। আর তিনি বিশ্ব জগতকে বেশ মনোরম করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদেরকে সুন্দর আকৃতি দিয়ে তৈরি করেছেন। প্রাকৃতিক জগতকে তিনি এতো মনোরম করে সৃষ্টি করেছেন যে, এমনকি একজন অবিশ্বাসীও আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখে তাজ্জব হয়ে যায়।

এক পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছেন—স্রষ্টার অস্তিত্বের অন্যতম বড় একটি প্রমাণ হলো আমরা মানুষেরা সৃষ্টির সৌন্দর্যের তারিফ করতে পারি। কারণ, একটি বায়োলজিক্যাল সত্ত্বার জন্য সৌন্দর্য উপভোগ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা একটি জৈবিক সৃষ্টি হয়েও যে চারপাশের সৃষ্টির সৌন্দর্য অবলোকন করে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে যাই, এটা ইঙ্গিত করে যে স্রষ্টা নিজেই সুন্দর। তিনি তাঁর সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। এরপর আমাদের এমন ম্যাকানিজম দিয়েছেন যার মাধ্যমে আমরা সেই সৌন্দর্য শনাক্ত করতে পারি এবং উপভোগ করতে পারি। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি সত্য।

আল্লাহ নিজেই বলেছেন- اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ - নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে। (৩:১৯০)

আমাদের প্রত্যেকে যখন আমরা রাতের আকাশে তারা দেখি, সূর্যের উদয় এবং অস্ত যাওয়া দেখি, যখন আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক স্থানগুলো দেখি, তখন আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকে না।

—ড. ইয়াসির কাদির আলোচনা অবলম্বনে

পঠিত : ৪১৮ বার

মন্তব্য: ০